৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মাগুরা পশু হাসপাতালে নিরবে চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতি

admin
প্রকাশিত জানুয়ারি ১১, ২০২০
মাগুরা পশু হাসপাতালে নিরবে চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতি

Sharing is caring!

 

ফারুক আহমেদ, মাগুরা প্রতিনিধিঃ বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে গবাদি পশু পাখি যেমন গরু ছাগল হাঁস মুরগির বাণিজ্যিক খামার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই খামারের সাথে যুক্ত অনেক বেকার তরুণদের যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি দেশের প্রাণীজ আমিষের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতকে বিভিন্নভাবে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। খামারিদের সুবিধার্থে দেশে এখন প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পশু হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন, এই সব পশু হাসপাতাল নামমাত্র মূল্যে অথবা বিনামূল্যে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু পশু হাসপাতালের দায়িত্বরত কিছু কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের দুর্নীতি এবং অনিয়মের ফলে কৃষকরা সেই কাঙ্খিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরকারের এই সেবাসমূহ কৃষকদের কতটা উপকারে আসছে সেটা জানতে মাগুরা পশু হাসপাতালে সরজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেল বরাদ্দকৃত ওষুধ বণ্টনে রয়েছে ব্যাপক ঘাপলা। বরাদ্দকৃত ভ্যাকসিনের হিসাব লিখে রাখার কথা থাকলেও, হিসাব বইতে দেখা গেল সংখ্যার উপর যথেচ্ছা ওভাররাইটিং, বরাদ্দকৃত ওষুধের সংখ্যা আর বন্টনকৃত ওষুধের সংখ্যার মাঝে কোন মিল নেই। কৃষকদের অভিযোগ তারা তাদের চাহিদামত ভ্যাকসিন এই পশু হাসপাতাল থেকে পান না ও এখানে আসলেই বলা হয় ভেকসিন বরাদ্দ নাই।

মোঃ সোহেল রানা (৩৬) বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে, জমা জমি বিক্রি করে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে ৭০০টি হাঁসের বাচ্চা নিয়ে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ‌অদম্য ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে সোহেল রানা চেয়েছিলেন নিজের বেকার জীবনের ইতি টেনে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে, কিন্তু ইতিমধ্যে ডাক কলেরায় আক্রান্ত হয়ে তার খামারের ২০০টি হাঁস মারা গেছে, এখন তিনি রীতিমতো চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। গত একমাস ধরে পশু হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ডাক কলেরা ভ্যাকসিন পাওয়ার আশায়। হাঁসের জীবন রক্ষাকারী এই ওষুধ ভেটেনারি ফার্মেসিতে ও পাওয়া যায় না। অনুসন্ধানে দেখা গেল গত নভেম্বরে পঞ্চাশটি ডাক কলেরা ভ্যাকসিন বরাদ্দ হয়েছে মাগুরা সদর উপজেলা পশু হাসপাতালে, এরমধ্যে ২৫টি ভ্যাকসিন বিভিন্ন খামারিকে বন্টন করা হলেও আর ২৫টি ভ্যাকসিনের কোনো হিসাব নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিগত বছরগুলোতে মাগুরা অঞ্চলে হাঁসের খামারের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে, সাথে সাথে জীবন রক্ষাকারী এই ভ্যাকসিনের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে, আর এই সুযোগে হাসপাতালে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভ্যাকসিনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে খামারিদের কাছ থেকে ৩০ টাকার ভ্যাকসিন ২০০০ টাকা পর্যন্ত গোপনে বিক্রি করছেন। যেহেতু একটি ভ্যাকসিন দিয়ে প্রায় ১০০টি হাঁসের জীবন বাঁচানো সম্ভব তাই অনেক ক্ষেত্রে খামারিরা বাধ্য হয়ে চড়া মূল্যে এই ভ্যাকসিন গুলো কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। মাগুরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ আনোয়ারুল করিম কে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সাংবাদিকদের ২ ঘন্টা বসিয়ে রেখে অযথা বিভিন্ন ফাইল ঘাটেন ও পরে গত চালানে পঞ্চাশটি ডাক কলেরা ভ্যাকসিন বরাদ্দের কথা স্বীকার করেন কিন্তু পঁচিশটা ভ্যাকসিনের হিসাব দেখাতে পারেননি। এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেল গত চালানে মাগুরার প্রতিটি উপজেলা পশু হাসপাতালে ৫০ টি করে ডাক কলেরা ভ্যাকসিন সমভাবে বন্টন করে দেয়া হয়েছে।
পশু হাসপাতালের আশেপাশে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিগত দুই বছর ধরে পশু হাসপাতলে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে, আগের মত প্রান্তিক কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না এখানে আসলে বলা হয় ওষুধ নেই।

জনচক্ষুর অগোচরে থাকা এই পশু হাসপাতালগুলো নীরবে সরকারের উন্নয়নকে যে সীধ কাটছে সেটা বলাই যায়। তাই এ ব্যাপারে জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি দেয়া একান্ত প্রয়োজন।