আবুল হাসেম, (বান্দরবান) লামা প্রতিনিধি,
লামা পৌরসভার বাসিন্দা মুক্তা বেগম (৩০), রুনা আক্তার (২৩), নুর জাহান আক্তার (২৪), ফাতেমা আক্তার (২২), জাহেদা বেগম (৩৫) এবং কলেজ ছাত্রী কোহিনুর আক্তার (২০)।আরো শত জন জন নারী এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাদের স্বপ্ন যাত্রার পথপরিক্রমায় সামনে রয়েছেন এক সফল নারী। তিনি বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ফাতেমা পারুল। নির্বাহী পরিচালক লামা নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতি। আজ দুই মাসের বেতন তুলে দেয় সি,আই,ডি,পি,জেলা হিসাব রক্ষক মোঃ অজিউল্যাহ ও সমন্বয় কর্মকর্তা মোঃ আবদুল কাদের ভূউয়া, এখানে সেলাই শিখা, পুঁতি দিয়ে নানা ধরণের স্কালচার তৈরি, নকশিকাঁথা, শাড়িতে ব্লক বসানো ইত্যাদি হস্তশিল্প কারিগরি জ্ঞান অর্জন করছেন এক ঝাঁক নারী।
শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত নারীরা সংসার জীবনে স্বামীর আয়ের উপর ভর করে আছে। কিছু নারী স্বামীদের উপার্জন নির্ভর থাকার চিরায়িত অভ্যাস পরিহার করার চেষ্টা করছেন। সাম্প্রতিককালে সরকারের নারী বান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তব প্রয়োগের ফলে, স্বনির্ভর হতে নারীদের প্রচেষ্টা চোখে পড়ারমতো। তৃণমূলে নারীর সফলতার স্বীকৃতি স্বরুপ জয়ীতা নির্বাচন, সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের সমাজে বিভিন্ন অঙ্গণে নারীর বলিষ্ঠ পদচারণা ধ্বনিত হচ্ছে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নারীর কোমল হাতে আমাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড শক্ত-সোজা থাকার দৃষ্টান্ত দেশের পোষাক শিল্প।
লামা নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতি। লামা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড-এ সবুজ বেষ্টিত ছোট্ট টিলায় দ্বিতল একটি পাকা ভবনে নব আঙ্গিকে এই নব জাগরণ অফিসটি। দু’গ্রাম, রাজবাড়ি ও কলিঙ্গাবিলের মিলনস্থল চোরারবিল ঘেষে অবস্থিত ছোট্ট পাহাড় চূড়ায়। এখানে স্বপ্ন বুনন করছেন একঝাক নারী। গৃহকোণে আবদ্ধ থেকে নানান বঞ্চনার শিকার হতে চায়না এরা। তারা স্বপ্ন দেখেন, সমাজকেও স্বপ্ন দেখান। তাদের শ্রম আর নিখুঁত শিল্প বিন্যাসে তৈরি হয় নানান ধরণে সৌখিন ও নিত্য পন্য। সাম্প্রতিককালে নারীদের এসব শো-বিস পণ্য ক্রয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এসব পন্য ক্রয়ে সৌখিন মধ্যবিত্ত ও ধনী লোকদের আগ্রহের ফলে, একটি প্রগতিশীল সমাজ ও আত্মনির্ভর, নারী বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। এমন মন্তব্য করেন, লামা নব জাগরণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল।
৮ জানুয়ারি লামা নব জাগরণ মহিলা সমিতির প্রশিক্ষণ শালায় কথা হয় এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নচারিনী কয়েকজন নারীর সাথে। মুক্তা বেগম (৩০)। সংসারে স্বামী দু’সন্তান রয়েছে। এসএসসি পাশ করার পরই তার বিয়ে হয়ে যায়। সে নিজে উপার্জন করে স্বামী-সংসারে উন্নতি করবেন, এমন প্রত্যায় থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
রুনা আক্তার, নুর জাহান আক্তার, ফাতেমা আক্তার, জাহেদা বেগম ও কলেজ ছাত্রী কোহিনুর আক্তারসহ আরো বেশ কয়েকজন। এরা সবাই সেলাইসহ বিভিন্ন হস্তশিল্প শিখে দক্ষ জনবলে পরিনত হয়ে, নিজে ও সমাজকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় প্রত্যায় ব্যাক্ত করেন।
বিগত এক দশকে অনেক নারী লামা নব জাগরণ মহিলা সমিতি থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়নের অধিনে সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এসব নারীরা জানান, লামা নব জাগরণ মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল এই কর্মযজ্ঞে এক অনুপ্রেরণা। বিভিন্ন কারিগরি দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা-দায়িত্ববোধ জাগ্রত হচ্ছে এসব নারীদের। গ্রামে বাল্য বিবাহ, যৌতুক রোধ, পারিবারিক কলহ বন্ধ-সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায়ও কাজ করছেন তারা। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন, স্টল প্রদর্শন, র্যালি, সভা-সমাবেশে তাদের রয়েছে নি:সংকোচ মার্জিত বিচরণ। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বিপন্ন মানুষের পাশে দাড়াচ্ছে লামা নব জাগরণ সমিতির সদস্যরা।
নব জাগরণ সমিতির সদস্য ও শিক্ষার্থীদের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে, নকশীকাঁথা, বুটিক শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, পুতির তৈরি শো-বিস পুতুল, ফুলের টব, ঝাড়বাতি ইত্যাদি। হাতে তৈরি এসব পণ্যের টেকসই ও গুণগত মানও ভালো। উৎপাদিত এসব পণ্য বিপণনে পরিকল্পিত একটি সিদ্ধান্তের কথা জানান নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল।
তিনি বলেন, মেয়েদের নিখুঁত আন্তরিকতায় সৃষ্ট এসব সৌখিন-নিত্যপণ্য বাজারজাত নিশ্চয়তা রয়েছে। ২০১৭ সালে জেলার শ্রেষ্ট জয়ীতা বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কণ্যা সংগ্রামী এই নারী বলেন, বান্দরবান জেলা জয়ীতা ভবনের স্টলে এসব পণ্য বিক্রি হবে। এছাড়া এসব কিছু বিপণনে লামা পৌরশহরে শোরুম নেয়া হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক -শেখ তিতুমীর আকাশ। প্রকাশ কর্তৃক : এডভানসড প্রিন্টং - ক-১৯/৬, রসুল বাগ, ঢাকা। মহাখালী ঢাকা হতে মুদ্রিত এবং ১৭৮, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা-১২১৭ হতে প্রকাশিত। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ অফিসঃ ৩৮৯ ডি আই.টি রোড (৫ম তলা) পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা ১২১৯ ,মোবাইল: - ০১৮৮৩২২২৩৩৩,০১৭১৮৬৫৫৩৯৯ ইমেইল: abhijug@gmail.com
Copyright © 2025 Weekly Abhijug. All rights reserved.