Sharing is caring!
আব্দুল করিম, চট্রগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান :-
চট্রগ্রাম চান্দগাঁও-মোহরা এলাকা রিকশা প্রতি দিনে একশ টাকা হারে মাসে ৩০ লাখ টাকার চাঁদা আদায়। কালুরঘাট ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ
নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, সিএন্ডবি এলাকায় আবারো দাপটের সাথে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা।
সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসব রিকশা চলাচল করছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। স্থানীয়রা জানায়, এসব এলাকা থেকে ৫ মাস আগে বন্ধ হয়েছিল অবৈধ রিকশা। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় তা বন্ধ হয়েছিল।
তবে প্রধান সড়ক ছাড়া বিভিন্ন উপ-সড়কে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েক মাস ধরে চলাচল করে আসছিল। ১৫-২০ দিন থেকে একেবারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক, উপ-সড়ক। অভিযোগ রয়েছে, চান্দগাঁও থানা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ি ও কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের যোগসাজশে ফের ব্যাটারি রিকশা চলাচল শুরু হয়েছে।
মহিউদ্দিন, বেলাল, ইসমাইল, লিটন ও সেলিম কোম্পানি নামে ৫ জন তা নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা পুলিশের নামে রিকশাপ্রতি দৈনিক একশ চাঁদা আদায় করেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।জানা যায়, মহিউদ্দিন, লিটন ও সেলিমের বাড়ি নোয়াখালী জেলা। বেলালের বাড়ি বাঁশখালী।
বেলাল, মহিউদ্দিন নগরীতে এসে রিকশাচালক হিসেবে জীবন-জীবিকা শুরু করেন। ব্যাটারি রিকশা চলাচল শুরু হওয়ার পর তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। পুলিশের টোকেন বিক্রি ও চাঁদা তুলে কয়েক বছরেই লাখপতি হয়ে যান। টাকার ভাগ দেয় পুলিশ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আগে রিকশাপ্রতি ৫০-৬০ টাকা করে তোলা হতো। এখন নিচ্ছে একশ টাকা করে।
মহিউদ্দিন কোম্পানি বলেন, ‘ভেতরে ভেতরে চুরি করে চলাচল করে। মেইন রুটে আসে না।’ টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লাইন খরচের জন্য ৫০-৬০ টাকা করে নিই।’এদিকে, সিএন্ডবি এলাকায়ও চলাচল করে শতাধিক ব্যাটারি রিকশা।
দিনে সিএন্ডবি মোড় ফায়ার সার্ভিস থেকে বিসিক ও হামিদচর এলাকায় চলাচল করে। রাত ৮টার পর থেকে সিএন্ডবি মোড়ে প্রধান সড়কে চলে আসে। ওসমানিয়াপুল, বিসিক ও সিএন্ডবি-এই অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন ইসমাইল কোম্পানি। আর পাঠানিয়া এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন লিটন। লাইন পরিচালনা করেন মোজাম্মেল। মোজাম্মেল আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানায় স্থানীয়রা।
প্রতি রিকশা থেকে দৈনিক একশ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।ইসমাইল কোম্পানি নিজ থেকে ফোন করে বলেন, ‘ওখানে (কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কাদের) আর ফোন দিতে হবে না। আপনার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করব। আমরা কাউকে বিমুখ করি না।’ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কাদের এই প্রতিবেদককে ফোন করার জন্য নাম্বার দিয়েছেন বলে জানান ইসমাইল কোম্পানি।
পরে বেলাল কোম্পানি ফোন করে বলেন, ‘আপনি কোন জায়গা আছেন। আপনার সাথে সাক্ষাতে কথা বলব। ফোনে সব কথা বলা যায় না।’ সরেজমিন দেখা যায়, কালুরঘাট, মোহরা, মৌলভী পুকুর পাড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা মাজার গেট, সিএন্ডবি মোড়, সিএন্ডবি শিল্প এলাকা, হামিদচর, ওসমানিয়ার পুল, গোলাপের দোকান, কুয়াইশ এলাকায় বিভিন্ন সড়ক, উপ-সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিরিকশা।
নগরীর অন্যতম প্রধান সড়ক আরাকান সড়কে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ বড় ও মাঝারি যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাপিয়ে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব কারণে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিনিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও যানজট লেগে রয়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশনা :
২০১৮ সালে চট্টগ্রাম মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করার জন্য দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। অটোরিকশা পক্ষে চট্টগ্রাম অটো রিকশা অটো টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ও প্যাডেলচালিত রিকশার পক্ষে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সিদ্দিক মিয়া এই রিট দায়ের করেছিলেন।
রিটের পরিপ্রেক্ষিত হাইকোর্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন ব্যাটারিচালিত রিকশামালিক সমিতি।
আপিল বিভাগের ৭ সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টে আদেশ বহাল রাখেন। এরপর চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চান্দগাঁও এলাকার বিভিন্ন সড়ত ও অলিগলিতে নির্বিঘেœ চলাচল করছে ব্যাটারি রিকশা।
রিকশাপ্রতি একশ টাকা চাঁদা আদায় এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন এলাকায় গড়ে এক হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করে। প্রতিরিকশা থেকে দিনে একশ টাকা হারে চাঁদা তোলা হয়। সেই হিসাবে দৈনিক চাঁদা আদায় করা হয় ১০ লাখ টাকা। মাসে দাঁড়ায় ৩০ লাখ টাকা। চাঁদায় ভাগ পায় চান্দগাঁও থানা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ।
এছাড়াও স্থানীয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদেরও চাঁদার ভাগ দিতে হয়। ভাগ পায় বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।
একাধিক পুলিশ সদস্যের ব্যাটারি রিকশা রয়েছে।
তাদের সহায়তায় পুরোনো সিন্ডিকেট ফের ব্যাটারি রিকশা চলাচল শুরু করেছে। তবে ব্যাটারি রিকশা চলাচলের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রয়েছে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাজল সরকারের।
কাজল সরকার দীর্ঘদিন ধরে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন। তখন থেকে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বেপরোয়া ছিল। পুলিশের নামে চাঁদার বড় অংশের ভাগ নিতেন কাজল সরকার। কাজল সরকার এখন কালুরঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ।
রাস্তার মাথা ফাঁড়ির ইনচার্জ এখন মো. কাদের। দুই ফাঁড়ির ইনচার্জের সহায়তায় ফেল চলাচল করছে অবৈধ ব্যাটারি রিকশা। সেখান থেকে আদায় করা চাঁদার বড় অংশে ভাগ বসান দুই ফাঁড়ির ইনচার্জ।
কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাজল সরকার বলেন, ‘ব্যাটারি রিকশা চলাচলের বিষয়টি নজরে আসেনি। মোবাইল পার্টি দিয়ে বন্ধ করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ পুলিশের নামে টাকা আদায়ের বিষয়ে কাজল সরকার বলেন, ‘পুলিশের নাম বিক্রি করে চলাচল করছে।কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কাদের বলেন, ‘চুরি করে কিছু চলাচল করে। রাস্তায় আসলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
পুলিশের নামে টাকা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যতা দিতে পারলে আমরা একশানে যাব।
ব্যাটারি চার্জ
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে অবৈধ সংযোগ নিয়ে বিভিন্ন গ্যারেজে রিকশায় চার্জ দেওয়া হয়। এতে প্রতিদিন শত শত কিলোওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হারাচ্ছে। উপরন্তু পকেট ভারী হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের মোহরা এলাকার গুটিকয়েক অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।