অভিযোগ ডেস্ক : বাবা শাশ্বত, চির আপন। ভাষা ভেদে হয়তো শব্দ বদলায়, স্থান ভেদে বদলায় উচ্চারণও। কিন্তু বদলায় না রক্তের টান। আমেরিকায় যিনি ‘ড্যাড’ বাংলায় তিনি ‘বাবা-আব্বা’।
বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। অবশ্য বাবার জন্য বিশেষ দিন হিসেবে প্রতি বছর ‘বিশ্ব বাবা দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। আজ বিশ্ব বাবা দিবস।
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর, বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকের সুযোগ্য সন্তান আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। শনিবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আনিসুল হক তার বাবার কথা বলতে গিয়ে বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, তার বাবা ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেছেন।
বাবার শূন্যতা তাকে এখনও কাঁদায়। বাবা এখনও তার কাছে এক অসীম শূন্যতার প্রতীক। বাবাই তার আদর্শ।
বাবার আদর্শ, সততা আর শিক্ষার মধ্য দিয়েই তিনি প্রতিদিন চলেন, কাজ করেন। তার জীবনাচারে বাবার ছায়া-আশীর্বাদ প্রতিনিয়তই থাকে। বাবা শাশ্বত, চিরন্তন। রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় থাকেন আয়েশা বিনতে মানিক (২৩)। তিনি জানান, তার বাবাই তার একমাত্র ভরসা-সাহস। বাবা রক্ত পানি করে তাদের তিন ভাই-বোনকে মানুষ করেছেন। বাবাই তার কাছে একমাত্র সুপারহিরো। সিনিয়র সাংবাদিক আহমেদ দীপু তার প্রিয় বাবাকে হারিয়েছেন ১৯৮৭ সালে। বাবার একমাত্র সন্তান তিনি। বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি শিশুর মতো হাউমাউ করে কাঁদেন। তিনি বলেন, ‘বাবার আদর্শে আমি চলি। আমার বাবা ছিলেন আমার বটগাছ, এখনও তাই। এ অনুভূতিটাই আমাকে একটা নিরাপত্তা আর নির্ভরতার বোধ দেয়। দেয় আত্মবিশ্বাস।’
‘বাবা’ শব্দটা যেন এক বিশাল পৃথিবীর সমান। একজন বাবা তার সন্তানদের শুধু ভালোবাসা নয়, তার শেষ সম্বলটুকু উজাড় করে দিতেও দু’বার চিন্তা করেন না। কারণ তার কাছে সন্তানের চেয়ে দামি আর কিছু নেই। কিন্তু, সেই সন্তানদের কেউ যদি বাবাকেই ভুলে যায়?
শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, ৩০ জন বাবার করুণ চিত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক অধ্যাপক জানান, টিভিতে অনুভূতি প্রকাশ করলে তার সন্তানরা রাগ করে, গালমন্দ করে। এরপর তিনি মুখ ফিরিয়ে কান্না করেন। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি এক প্রকৌশলী জানান, ‘যাদের জন্য জীবনের সব আরাম-আয়েশ ত্যাগ করলাম তারা আজ পর হয়ে গেল। সন্তানদের কাছে ভালো খাবার, জামা-কাপড় চাইনি। একটু আশ্রয় শুধু চেয়েছিলাম।
কাছে থাকতে চেয়েছিলাম। সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত, প্রফেসর, ডাক্তার। মেয়েরা বিদেশে থাকে। তাদের দেখতে বুকটা ফেটে যায়।’ এ সময় তার চোখ-মুখই বলে দিচ্ছিল তার কষ্টের কথা। তার ঠোঁট বারবার কেঁপে উঠছিল। চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল। ৮৫ বছর বয়সী এক বাবা বলেন, ‘শুনেছি, সন্তানদের দেয়া কষ্টে কোনো মা-বাবার চোখে জল এলে সেই সন্তানদের চরম অমঙ্গল হয়। তাই অনেক কষ্টে কান্না চেপে রাখি। কিন্তু চোখের জল তা মানতে চায় না। বেরিয়ে আসে বারবার।’
সরেজমিন দেখা যায়, কোনো কোনো বাবা বিলাপ করছেন, কেউ আবার প্রিয় সন্তান ও প্রিয়তমা স্ত্রীর ছবি বুকে জড়িয়ে আর্তনাদ করছেন। ৮০ বছর বয়সী এক বাবা নামাজে বসে কাঁদছিলেন। জানা যায়, বাবা দিবস উপলক্ষে একটি এনজিওর সদস্যরা খানিকটা আগে অসহায় বাবাদের নিয়ে কেক কেটে গেছেন। এক সময় সন্তানদের নিয়ে তিনি এমন কেক কাটতেন। এটি তার কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলতেই তার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। যে সন্তানের উনিশ থেকে বিশ হলে বাবার খাওয়া-ঘুম হারাম হয়ে যেত।
চিকিৎসককে দেখাতে ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। সেই বাবা এখন টানা অসুখে ভুগছেন। তার পাঁজরের হাড়গুলো স্পষ্ট গোনা যাচ্ছিল। প্রবীণ হিতৈষী সংঘের চিকিৎসক ডা. মহসীন কবির বলেন, ‘বাবাদের কষ্ট অনেক। শুধু সন্তানরাই পারেন সেই কষ্ট লাগব করতে। হৃদয়ের শূন্যস্থান পূরণ করতে।’
প্রতি বছর বিশ্বের ৫২টি দেশে দিবসটি পালিত হয়। জুনের তৃতীয় রোববার বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে বাবা দিবস পালন করা হয়। সে হিসাবে এ বছর বাবা দিবস আজ ১৬ জুন। ১৯১০ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সনোরা স্মার্ট ডোড নামের এক তরুণীর মাথায় আসে বাবা দিবসের কথা। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিতৃ দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণার বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন।
<p>ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক -শেখ তিতুমীর আকাশ।<br>সহকারী সম্পাদক-নাসরিন আক্তার রুপা।<br>বার্তা সম্পাদক-মোঃ জান্নাত মোল্লা।<br>প্রধান উপদেষ্ঠা: আলহাজ্ব খন্দকার গোলাম মওলা নকশে বন্দী ।<br><br>প্রকাশ কর্তৃক : এডভানসড প্রিন্টং - ক-১৯/৬, রসুল বাগ, ঢাকা। মহাখালী ঢাকা হতে মুদ্রিত এবং ১৭৮, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা-১২১৭ হতে প্রকাশিত। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ অফিসঃ ৩৮৯ ডি আই.টি রোড (৫ম তলা) পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা ১২১৯ ,<br>মোবাইল: - ০১৮৮৩২২২৩৩৩,০১৭১৮৬৫৫৩৯৯</p><p>ইমেইল : abhijug@gmail.com ,</p>
Copyright © 2024 Weekly Abhijug. All rights reserved.