Sharing is caring!
অভিযোগ ডেস্ক : বিগত ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দেশটির সঙ্গে ২৭ প্রকল্পে ২২ বিলিয়ন (২২০০ কোটি) ডলারের ঋণ সহায়তার সমঝোতা হয় বাংলাদেশের।
এরমধ্যে গত তিন বছরে পদ্মাসেতু রেলসংযোগসহ ৫ প্রকল্পে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে দেশটির সঙ্গে। শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে আগামী
জুলাইয়ে চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে আরও বেশ কিছু প্রকল্প আশার আলো দেখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’সহ বেশ ক’টি প্রকল্প বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
এর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও আছে ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক’ প্রকল্প, ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং’ প্রকল্প, ‘জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েল গেজ রেললাইন’ প্রকল্প, ‘আখাউড়া-সিলেট রুটে ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্প ও আইপি টিভি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল টিভি সেবা চালু প্রকল্প। তবে চীনা ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে বা হবে এমন ২৭টি প্রকল্পেরই সবশেষ তথ্য তুলে ধরে দেশটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে চিঠি দেবে ঢাকা। চীনের ঋণে বাস্তবায়ন হবে এমন বেশ কিছু প্রকল্প ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়েছে।
ইআরডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের মূল্য উদ্দেশ্য ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী আশুলিয়া অংশের যানজট নিরসন করা। সফলভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সহজ সংযোগ স্থাপিত হবে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও হবে যানজটমুক্ত। পাশাপাশি যানজটমুক্ত হবে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা এলাকা।
এ প্রকল্পে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দেবে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নেওয়া হবে। সমঝোতা হলেও প্রকল্পের ঋণ চুক্তি এখনো সই হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সফরে এই প্রকল্পের ঋণ চুক্তির বিষয়টি গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, সমঝোতা অনুযায়ী এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক প্রকল্পে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চীন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)। ইতোমধ্যেই সরকারি খাত থেকে এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। ঋণ চুক্তির জন্য প্রকল্পটি প্রস্তুতও করা হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি)। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হতে পারে চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অংক প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এজন্য ইতোমধ্যে এডিপিতে ৭১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এছাড়া আখাউড়া-সিলেট রুটে ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রুটের বিদ্যমান মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপ দেওয়ার প্রকল্পটিতে চীন সরকার জিটুজি পদ্ধতিতে দেবে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা ঋণ। অন্যদিকে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েল গেজ রেললাইন প্রকল্পের আওতায় এক বিলিয়ন ডলার (৮ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা) ঋণ দেবে চীন সরকার।
এর বাইরে দেশে ছয়টি আইপি টিভি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল টিভি বা ইন্টারনেট টেলিভিশন আসছে। আম্বার আইটি লিমিটেড, বিডিকম অনলাইন লিমিটেড, লিংক থ্রি টেকনোলজি লিমিটেড, ডোজ (কার্নিভাল) ইন্টারনেট, চট্টগ্রাম অনলাইন এবং আইসিসি লিমিটেড নামের ছয়টি কোম্পানি এই আইপি টিভি এবং ভিওডি সেবা চালু করতে যাচ্ছে। এ খাতেও চীন দেবে ১২ দশমিক ৫ কোটি ডলার ঋণ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, একনেকে অনুমোদন পাওয়া বেশ ক’টি প্রকল্পের ঋণ চুক্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে গতি পাবে। অন্য প্রকল্পের বিষয়ও প্রাধান্য পাবে, যেন কম সময়ে ঋণ চুক্তিতে দু’টি দেশ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র। চীনা ঋণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আরও নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে চীনা ঋণের ওপর নির্ভর করে। তাই প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর সাম্প্রতিক জাপান সফরের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরে কয়েকটি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি হতে পারে। ঋণ চুক্তি না হলেও বেশ কিছু প্রকল্প গতি পাবে। কিছু প্রকল্প একেবারেই ফাইনাল স্টেজে আছে, যেমন ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক’ প্রকল্প। আর যেসব প্রকল্প এখনো ফাইনাল স্টেজে আসেনি সেসব প্রকল্পের অগ্রগতিও হবে যেমন ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি’ ।