২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বঙ্গভঙ্গ

অভিযোগ
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১, ২০১৯
বঙ্গভঙ্গ

আবু সাঈদ,শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে :

ভূচিত্রে পুর্ব এবং পশ্চিম বাংলার অবস্থান দেখানো হচ্ছে ১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গ ভারতবর্ষ বিভক্তির একটি অংশ হিসেবে ধর্মের উপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত বঙ্গ প্রদেশ ভারত এবং পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বিভক্ত হয়। প্রধানত হিন্দু অধ্যুসিত “পশ্চিম বাঙলা” ভারত এবং মুসলিম অধ্যুসিত “পূর্ব বাঙলা” পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়। ৩ জুন পরিকল্পনা বা মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৪৭ সালের ১৪ এবং ১৫ অগাস্ট যথাক্রমে এবং পাকিস্তান এবং ভারতের নিকট এই নতুন ভাবে বিভক্ত বাঙলা প্রদেশের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান যা পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল, তা ১৯৭১ সালে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

পটভূমি

১৯৪৭ সালের বাঙলা বিভক্তির পূর্বে,১৯০৫ সালে প্রশাসনিক কার্যক্রমকে সহজতর করার লক্ষ্যে পূর্ব এবং পশ্চিম বাংলায় বিভক্ত করা হয় যা বঙ্গ ভঙ্গ হিসেবে পরিচিত। সে সময় পশ্চিমবাংলা ছিল হিন্দু অধ্যুসিত এবং মুসলিমরা সেখানে সংখ্যালঘু, অন্যদিকে পূর্ববাংলা ছিল মুসলিম অধ্যুসিত এবং হিন্দুরা ছিল সংখ্যালঘু। মুসলিম অধ্যুসিত পূর্ববাংলার মানুষ এই বঙ্গ ভঙ্গের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছিল, কেননা তারা উপলব্ধি করেছিল যে এই বিভক্তির মাধ্যমে তারা তাদের নিজস্ব একটি প্রদেশ পেতে পারে। কিন্তু হিন্দুরা এই বিভক্তির বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়। এই বিতর্ক পরবর্তীকালে প্রতিবাদ এবং সন্ত্রাসের জন্ম দেয় এবং ১৯১১ সালে বঙ্গ ভঙ্গ রদের মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি করা হয়।

১৯০৫ সালের বাঙলা বিভক্তির সময়ে হিন্দু এবং মুসলিমদের মাঝে সৃষ্টি হওয়া এই মতানৈক্য পরবর্তীকালে আবারো বিতর্ক তৈরি করে যা আইন তৈরী, এমনকি ১৯৪৭ সালের বাঙলা বিভক্তিতে প্রভাব রেখেছে এবং সেই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডা হিসেবে বারংবার সামনে এসেছে।

বিভক্তিকরণ

পরিকল্পনা অনুসারে, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্যগণ বাঙলা বিভক্তিকরণ প্রস্তাবের উপরে তিনটি আলাদা ভোট প্রদান করেন।

পরিষদের সকল সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ অধিবেশনে, যৌথ অধিবেশন বিভক্তিকরণের পক্ষে ১২৬ ভোট এবং বিদ্যমান সংবিধান পরিষদের যোগ দেওয়ার পক্ষে ৯০ ভোট (অর্থাৎ, ভারত) প্রণীত হয়।

তারপর একটি পৃথক অধিবেশনে বাংলার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় সদস্যগণ, বাংলার বিভক্তি এবং সম্পূর্ণ একটি নতুন গণপরিষদ (অর্থাৎ, পাকিস্তান ) এ যোগদান করার সপক্ষে ভোট প্রদান করেন; যেখানে নতুন রাষ্ট্রে যোগদানের সপক্ষে ১০৬ এবং বিপক্ষে ৩৫ টি ভোট প্রণীত হয়।

একই পদ্ধতি বাংলার মুসলিম অধ্যুসিত নয়, এমন স্থানগুলোতেও অনুসরণ করা হয়েছিল। সেখানে ৫৮ ভোট বিভক্তিকরণের পক্ষে এবং ২১ ভোট বিপক্ষে প্রণীত হয়।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা অনুযায়ী, যদি একটিও একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বিভক্তিকরণের পক্ষে প্রণীত হয় তাহলে প্রদেশ বিভক্ত হবে । এই পরিকল্পনাকে তুলে ধরে, ২০ জুন পরিষদে ভোটাভুটির ফলফলের প্রেক্ষিতে পশ্চিম বাঙলা প্রদেশ ভারত এবং পূর্ব বাঙলা প্রদেশ পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।এছাড়াও, মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা অনুসারে,7 জুলাই অনুষ্ঠিত একটি গণভোটে, সিলেটের নির্বাচকমণ্ডলী পূর্ব বাঙলা প্রদেশে যোগদানের সপক্ষে ভোট প্রদাণ করে।

পরবর্তীতে স্যার সাইরিল র‍্যাডক্লিফ এর নেতৃত্বে সীমানা কমিশন দুই নব নির্মিত প্রদেশের মধ্যে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ অনুসারে ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগষ্ট ভারতকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

বাঙলা সমন্বিতকরণ পরিকল্পনা

“দ্বিজাতিতত্ব” এর উপর ভিত্তি করে ভারতের বিভক্তির পরে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এখানে ধর্মীয় বিষয়টিকে মূখ্য বিবেচনা করা হয়েছে। তখন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একটি ভিত্তিগত পরিকল্পনা পেশ করেন যে, পূর্ব এবং পশ্চিম বাঙলা ভারত কিংবা পাকিস্তানের অংশ হিসেবে না যুক্ত হয়ে বরং একটি স্বতন্ত্র রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে । সোহরাওয়ার্দী উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, যদি বাঙলা এভাবে বিভক্ত হয় তবে পূর্ব বাঙলা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কেননা, সব কয়লা খনি কিংবা পাট কল পশ্চিম বাংলার অংশ হয়ে যাবে এবং একটি সিংহভাগ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যারা কিনা শিল্পায়নের সাথে যুক্ত পশ্চিম বাংলায় অভিবাসন সম্পন্ন করবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ‘কোলকাতা’ যা ভারতের অন্যতম প্রধান শহর এবং শিল্প ও বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু তা পশ্চিম বাংলার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সোহরাওয়ার্দী ২৪ এপ্রিল, ১৯৪৭ সালে দিল্লির একটি সংবাদ সম্মেলনে তাঁর প্রস্তাব তুলে ধরেন। তবে পরিকল্পনাটি সরাসরি সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ (ব্রিটিশ শাসনাধীন সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল ছিলো এবং দ্বিজাতিতত্বের আলোকে একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছিলো) বাতিল করে দেয়। প্রাথমিকভাবে, বাঙলা প্রদেশের মুসলিমলীগ নেতারা দ্বিধা বিভক্ত ছিলেন। বর্ধমানের নেতা আবুল হাসিম সোহরাওয়ার্দীর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং অন্যদিকে,নুরুল আমিন এবং মোহাম্মদ আকরাম খান এর বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দীর প্রস্তাববের বৈধতা বুঝতে পেরে পরিকল্পনাকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছিলেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর সমর্থন লাভের পর সোহরাওয়ার্দী তার পরিকল্পনার সপক্ষে সমর্থন জমায়েত শুরু করেন।

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গুটিকয়েক নেতাই এই পরিকল্পনার সাথে একমত ছিলেন। তাদের মাঝে ছিলেন বাঙলা প্রদেশের প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা এবং নেতাজি সুবাস চন্দ্র বোসের বড় ভাই শরৎ চন্দ্র বোস এবং কিরণ সংকর রয়। তবে, জওহরলাল নেহেরু এবং ভাল্লাবভাই পাতিল সহ বেশিরভাগ বিপিসিসি নেতা এই পরিকল্পনা বাতিল করেন। এছাড়াও শ্যাম প্রসাদ মুখার্জীর নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল এর তীব্রভাবে বিরোধিতা করে। তাদের মতামত ছিলো যে, এই পরিকল্পনা আসলে বিভক্তিকরনের বিপক্ষে সোহরাওয়ার্দীর দ্বারা একটি চাল মাত্র যাতে কলকাতা শহর সহ শিল্পোন্নত পশ।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30