অভিযোগ প্রতিবেদক :: যে সময় স্কুলে থাকার কথা, সেই সময়ে মেয়ে হয়েও হাল ধরেছে বাবার ব্যবসা। এজন্য সপ্তাহের ৭ দিনকেও ভাগ করেছেন দুই ভাগে। তিনদিন স্কুলে যান আর তিনদিন ব্যবসা করেন।
এখানেই শেষ নয়, যে তিনদিন স্কুলে যান সেই তিনদিনও বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যস্ত বসে পড়েন পান-সুপারির দোকানে।
এমনি ভাবে ৩বছর ধরে চলছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর এলাকার ইকড়ছই হলি চাইল্ড নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মনিকা রানী দে’র জীবন-যাপন। পরিবারের আর্থিক অনটন, শিক্ষার খরচ ও বাবার ক্যান্সার সব মিলিয়ে তাকে এ ব্যবসার হাল ধরতে হয়েছে।
সরেজমিনে জগন্নাথপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের মোল্লারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা পিযুষ দে জগন্নাথপুর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে পান সুপারির ব্যবসা করে আসছিলেন।
এই ব্যবসা থেকেই ৫ মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সাত সদস্যর পরিবারের ব্যয়ভার চালিয়ে আসছিলেন পিযুষ দে। হঠাৎ করে তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ক্রমশ অসুস্থ হতে থাকেন তিনি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
পীযুষ দে’র স্ত্রী লাভলী দে জানান, স্বামীর পান সুপারি ব্যবসায় মেয়েদের ভরণপোষণ লেখাপড়া উপজেলা সদরে বাসা ভাড়া দিয়ে ভালই কাটছিল সংসার।
হঠাৎ করে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে পুরো সংসার তছনছ হয়ে যায়। তখন মেয়ে হয়েও ছেলের মত বাবার ব্যবসার হাল ও সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে আমার মেয়েরা।
তিনি জানান, বড় মেয়ে রীমা দে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার পর টাকার অভাবে আর কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। দ্বিতীয় মেয়ে সোমা দে ও তৃতীয় মেয়ে মীতা দে সৈয়দপুর আদর্শ কলেজে এবার একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। চতুর্থ মেয়ে মনিকা দে হলি চাইল্ড নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েছে।
পঞ্চম মেয়ে লাভনি দে ইকড়ছই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। রিমা ও সোমা টিউশনি’র পাশাপাশি বিউটি পার্লারে কাজ করে লেখা পড়ার খরচ এবং সংসার খরচ যোগাতে সাহায্য করছে। এসব আয়ে সংসারের খরচের পাশাপাশি অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা ব্যয়ও চলছে। সব মিলিয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটছে আমাদের।
মনিকা দে জানায়, সপ্তাহের শনি, সোম, বৃহস্পতিবার সে বিদ্যালয় ছুটির পর বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পান সুপারি বিক্রি করে। রোববার ও বুধবার এবং মঙ্গলবার তাকে পুরো দিন দোকানে সময় দিতে হয়। তাই এই দিনগুলোতে তার স্কুলে যাওয়া হয় না।
বড় মেয়ে রিমা রানী জানান, আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা প্রচুর টাকা খরছ করেছি। বর্তমানেও তার চিকিৎসা চলছে।
এ চিকিৎসার ব্যয়ভার, সংসার ও পড়ালেখার খরচের টাকা যোগার করা আমাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তবে আমরা সবাই পড়তে চাই। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন আমাদেরকে কিছুটা হলেও যেন সাহায্য করেন।
জগন্নাথপুর বাজার তদারক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহির উদ্দিন বলেন, আমরা মেয়েটির খেয়াল রাখি, যাতে কোন সমস্যা না হয়। মেয়েটি খুব ভদ্র ও বিনয়ী হওয়ায় সবাই তাকে সহযোগিতা করে।
হলি চাইল্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, মনিকার বাবা অসুস্থ তাই তাকে বাবার ব্যবসা দেখতে হয়। বিষয়টি জানার পর আমরা তাকে সহযোগিতা করি। মেয়েটি পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী, আশা করি দারিদ্র ও শিক্ষার সংগ্রামে সে জয়ী হবে।