Sharing is caring!
অভিযোগ ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ নিয়ে কাতার গিয়ে দেশটির ইমিগ্রেশনে আটক পাসপোর্টবিহীন পাইলট ক্যাপ্টেন মাহমুদকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তার জায়গায় অপর একজন পাইলটকে পাঠাতে বেসামরিক বিমানসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে ইতিমধ্যে ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত কিংবা কাল সকালেই ওই পাইলটকে কাতারে পাঠানো হবে।
মনোবিদরা বলছেন, পাসপোর্ট না নিয়ে যাওয়ার পর কাতার ইমিগ্রেশনে আটক ও তাকে নিয়ে লেখালেখির করণে তিনি মানসিকভাবে সুস্থির নেই। এমন অবস্থায় তাকে দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হবে হতে পারে।
মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ফেরত আসার পর ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাসপোর্ট ছাড়া দেশের বাইরে যাওয়ায় বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনও তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। সূত্র জানায়, কীভাবে তিনি পাসপোর্ট ছাড়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
কাজেই এসব কারণে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারেন। উল্লেখ্য, শুক্রবারে প্রধানমন্ত্রীকে আনতে একটি বিশেষ ফ্লাইট কাতার যাবে। যে কারণে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখতে বৃহস্পতিবার একটি ফ্লাইটে একদল ক্রুকে কাতার পাঠানো হয়েছে।
আর ফজল মাহমুদকে কাতারের এয়াপোর্টের একটি হোটেলে রাখা হয়েছে। তবে ধারনা করা হচ্ছে, আজ রাতে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি ফিরতি ফ্লাইটে তাকে দেশে পাঠানো হবে অথবা তাকে নন-অপারেটিং পাইলট হিসেবে দেশে ফেরত আনা হতে পারে।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) নিয়ম অনুসারে, যেকোনো ভিভিআইপি ফ্লাইটের ক্রু ও পাইলটকে বিশ্রামের জন্য একদিন আগেই গন্তব্যে উপস্থিত থাকতে হবে, যাতে তারা মানসিকভাবে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে পারেন। কিন্তু ফজল মাহমুদ মানসিকভাবে প্রস্তুত না।
আটক পাইলটের পাসপোর্ট নিয়ে রিজেন্ট ওয়ারওয়েজের ফ্লাইট ইতিমধ্যে কাতার রওনা দিয়েছে। পাসপোর্ট পৌঁছার পরে ফজল মাহমুদের ইমিগ্রেশন ছাড়পত্র নেয়া হবে।
বিমান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, এখন কোনোভাবেই তাকে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে রাখা হবে না। তবে ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনায় অভিজ্ঞ অন্য এক পাইলটকে তার জায়গায় পাঠানো হবে।
রিজেন্টের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টায় দোহাগামী তাদের শিডিউল ফ্লাইটে ফজল মাহমুদের পাসপোর্টটি পাঠানো হয়েছে।
পাসপোর্ট পাঠাতে বিমানের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। অনুমোদন থাকায় পাসপোর্ট বহনে সম্মত হয়েছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই কাতারে তার পাসপোর্ট পৌঁছাবে।
তবে পাসপোর্ট ছাড়া তিনি কেন যাচ্ছিলেন, তা নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। তদন্তের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
জানা গেছে, বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনতে বুধবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের একটি ড্রিমলাইনার দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যায়। বিশেষ এই বিমানের পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। তিনি পাসপোর্ট ছাড়াই কাতার যান, যেটি ধরা পড়ে সেদেশের ইমিগ্রেশনে। পরে তাকে ইমিগ্রেশনে আটকে রাখা হয়।
আইন অনুযায়ী, পাসপোর্ট ছাড়া কারো দেশত্যাগ কিংবা অন্য দেশে প্রবেশের সুযোগ নেই। ফজল মাহমুদ কাতার ইমিগ্রেশনকে জানান, তার পাসপোর্ট বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের লকারে।
পরে বিমানের নিরাপত্তা মহাব্যবস্থাপকের কাছ থেকে চাবি নিয়ে ফজল মাহমুদের পাসপোর্ট উদ্ধার করেন বিমানের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ মহাব্যবস্থাপক (জিএম সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ) আশরাফ হোসেন।
তিনি জানান, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন জামিল আহমেদের নির্দেশনা মোতাবেক তিনি পাসপোর্ট উদ্ধার করেন এবং এই পাসপোর্ট কাতারে পাঠানোর উদ্যোগ নেন তিনি।
বৃহস্পতিবার কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ফজল মাহমুদের পাসপোর্ট দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠানোর চেষ্টা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু কাতার এয়ারলাইন্স পাসপোর্ট বহনে অস্বীকৃতি জানায়। কাতার এয়ারলাইন্স জানায়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া একজনের পাসপোর্ট বহনের নিয়ম নেই।
পরে রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে ফজল মাহমুদের পাসপোর্ট কাতার পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। রিজেন্ট এয়ারওয়েজও ওই পাসপোর্ট বহনে অস্বীকৃতি জানায়।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহিবুল হক বলেন, বিষয়টি ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের ব্যক্তিগত গাফিলতি। তিনি দেশে ফিরে আসার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানতে বিমানের পরিচালক (ফ্লাইট অপরারেশন) ক্যাপ্টেন জামিল আহমেদকে (বর্তমানে বিমানের এমডির দায়িত্বে) একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভিভিআইপিকে বহন করতে যাওয়া কোনো ফ্লাইটের কোনো ক্রুর পাসপোর্ট ছাড়া যাওয়া ঠিক হয়নি। এটি বড় ধরণের অপরাধ। দেশে আসার পর তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে পাসপোর্ট ছাড়া লন্ডন যাওয়ায় বিমানের একজন পাইলটকে বড় অংকের আর্থিক জরিমানা গুনতে হয়েছে। ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ কাতার অবস্থান করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, ফজল মাহমুদ ড্রিমলাইনারের একজন ইনস্ট্রাকটরের দায়িত্বও পালন করছেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দেশে সরকারি সফরের অংশ হিসেবে বর্তমানে ফিনল্যান্ডে অবস্থান করছেন। ৮ জুন দোহা বিমানবন্দর হয়ে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তাকে বহন করতে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের ড্রিমলাইনার বর্তমানে কাতার অবস্থান করছে।