Sharing is caring!
নাজমুল ইসলাম: তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগির চাঞ্চল্যকার হত্যাকাণ্ডের দায় নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
তিনি বলেন, আমার নজরদারিতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।
গত বছরের অক্টোবরে সৌদি আরবের একদল আততায়ী মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের ওই সাংবাদিককে নির্মমভাবে হত্যা করে।
পিবিএসের একটি প্রামাণ্যচিত্রে দায় স্বীকার করে এই বক্তব্য দিয়েছেন পশ্চিমা বিশ্বে এমবিএস নামে পরিচিত ওই যুবরাজ। আগামী সপ্তাহে ওই প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রচার করা হবে।
বিশ্ব বিখ্যাত ওই সাংবাদিককে হত্যাকাণ্ড নিয়ে এর আগে প্রকাশ্যে কথা বলেননি সৌদি আরবের কার্যত নেতা মোহাম্মদ বিন সালমান। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও পশ্চিমা সরকারগুলো আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকেই দায়ী করে আসছিল।
কিন্তু সৌদি কর্মকর্তারা দাবি করেন, এতে তার কোনো হাত ছিল না।
সৌদি কনস্যুলেটে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন ওঠে। এতে বিশ্বজুড়ে যুবরাজের ভাবমর্যাদা যেমন প্রশ্নের মুখে পড়েছে, তেমনি সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী সৌদি অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে তার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাও বাধার মুখে রয়েছে।
ধর্মীয় নীতিতে গড়ে ওঠা সৌদি সমাজকেও উন্মুক্ত করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সৌদির এ প্রভাবশালী যুবরাজ। তবে ওই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপে সফরে যাননি।
মার্কিন দাতব্য সংস্থা গণসম্প্রচার সার্ভিসের (পিবিএস) মার্টিন স্মিথকে তিনি বলেন, ‘এটা আমার নজরদারিতে ঘটেছে। আমি সব দায়িত্ব নিচ্ছি, কারণ এটা আমার নজরদারিতে ঘটেছে।’‘সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি’ শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রটির প্রাক-প্রচার নিরীক্ষা থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
জামাল খাসোগির মৃত্যুবার্ষিকীর এক বছর পূর্ণ হওয়াকে সামনে রেখে আগামী ১ অক্টোবর ওই প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রচার করা হবে।
প্রথম দিকে ওই হত্যাকাণ্ডে যোগসাজশের কথা অস্বীকার করে দুর্বৃত্তদের দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন সৌদি কর্মকর্তারা। সরকারি কৌঁসুলি বলেন, তখনকার গোয়েন্দা উপপ্রধান তাকে প্রত্যাবাসনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তখনকার শীর্ষ রাজকীয় উপদেষ্টা সৌদআল-কাহতানি স্কাইপের মাধ্যমে খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেন। অভিযানের আগে খাসোগির তৎপরতাবিষয়ক আততায়ী দলকে তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।
মার্টিন স্মিথের উদ্ধৃতি অনুসারে, তার (যুবরাজ) জ্ঞাতসার ছাড়া এই হত্যাকাণ্ড কীভাবে সম্ভব প্রশ্নে মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, আমাদের দুই কোটি জনসংখ্যা রয়েছেন। আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ৩০ লাখ।
হত্যাকারীরা সরকারি প্রাইভেট বিমান ব্যবহার করেছিলেন কিনা প্রশ্নে সৌদি কার্যত নেতা বলেন, বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য আমাদের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা রয়েছেন। তারা দায়ী। তা করার কর্তৃত্ব তাদের রয়েছে।
গত জুনে এক সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডে দায়ীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে রিয়াদকে চাপে রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
খুবই গোপনীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১১ সৌদি সন্দেহভাজনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটা শুনানি হয়েছে মাত্র।
এ ঘটনায় তদন্ত করতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ওয়াশিংটন পোস্টের কলামনিস্ট খাসোগিকে গত বছরের ২ অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল। তুর্কি নারী খাদিজা সেনগিজকে বিয়ে করতে আগের বিয়ের কাগজপত্র আনতে সেদিন তিনি ওই কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন।
তার মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ওই ভবন থেকে সরানো হয়েছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়। এ পর্যন্ত তার মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।