৩রা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

অবিভক্ত বাংলার প্রথম স্পিকার সৈয়দ নওশের আলী

admin
প্রকাশিত মার্চ ২, ২০২৫
অবিভক্ত বাংলার প্রথম স্পিকার সৈয়দ নওশের আলী

Sharing is caring!

বিশেষ প্রতিনিধি, শেখ আসাদুজ্জামান আহমেদ টিটু:-সৈয়দ নওশের আলী আইনবিদ এবং রাজনীতিবিদ। জন্ম ২ মার্চ ১৮৯০ সালে নড়াইল জেলার মির্জাপুর গ্রামে।

নওশের আলীর প্রাথমিক শিক্ষা মির্জাপুর এবং দৌলতপুরে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতা সিটি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এম. এ করেন।
তিনি আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯২১ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইন চর্চা শুরু করেন এবং ১৯৫২ সালে নয়াদিল্লীর সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এ্যাডভোকেট হন।
নওশের আলী ১৯২০ দশকের প্রারম্ভে কংগ্রেস দলের সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।
তিনি ১৯২৭ সালে যশোর জেলা বোর্ড এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং প্রায় এক দশক এই পদে নিয়োজিত ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদএর সদস্য (১৯২৭) এবং ১৯২৯ সালে যশোর দক্ষিণাঞ্চলীয় নির্বাচক মন্ডলীর মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত আসনে কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি কৃষক প্রজা পাটিতে যোগ দেন ও এ দলের পক্ষে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। তিনি ১৯৩৭ সালের বঙ্গীয় আইন সভার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।
মুসলিম লীগ ও এ কে ফজলুল হকের প্রধানমন্ত্রীত্বে কোয়ালিশন সরকারের অধীনে গঠিত মন্ত্রী সভায় নওশের আলী স্থানীয় সরকার ও জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভা সহ অন্যান্য বিভিন্ন কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে নওশের আলীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল।

তিনি ১৯৪০ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভার প্রাদেশিক বোর্ড-এর সদস্য নির্বাচিত হন।
নওশের আলী ১৯৪১ সালে পুনরায় কংগ্রেসে ফিরে আসেন। তিনি একাধারে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৪২ সালে তিনি সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ এর সদস্য হন। কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৪২ সালে আইন অমান্য আন্দোলন এ অংশগ্রহণ করার দায়ে কারাবরণ করেন।
নওশের আলী বাংলা সাপ্তাহিক ‘সহচর’-এর সম্পাদনার কাজ করেন ও ‘দৈনিক কৃষক’-এর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৪৩ সালে ‘পিপল্স রিলিফ কমিটি’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ১৯৪৫ সালে আই.এন.এ ত্রান তহবিলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।

১ মার্চ ১৯৪৩ সালে নওশের আলী প্রগতিশীল কোয়ালিশন পার্টির প্রার্থী হিসেবে আইন সভার স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল, ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত এই পদেই বহাল ছিলেন। স্পিকার থাকাকালে তিনি আইনের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস এবং সংসদীয় মূল্যবোধ রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর নওশের আলী গ্রামের বাড়ি যশোরে (বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ) ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে কলকাতায় থেকে যাওয়াকে শ্রেয় মনে করেন।
ভারতে তিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য এবং পাশাপাশি ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর কংগ্রেস এর মাধ্যমে রাজ্য সভায় মনোনীত হন। তিনি অল্প কিছুদিনের জন্য ভারতের কয়লা বোর্ডেরও সভাপতি ছিলেন।
১৯৫২ সালের ১২ আগস্ট শাসক দলের প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও নওশের আলী রাজ্য সভার আলোচনায় নিবৃত্তিমূলক আটক আইন’ (Preventive Detention Act) এর তীব্র বিরোধিতা করেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তার এহেন আচরণের অতিসত্ত্বর কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান করেন।

এই ঘটনার পর থেকে কংগ্রেসের সাথে তার সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং ১৯৫৬ সালের পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে রাজ্য সভায় দলের পক্ষ থেকে তাকে আর মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। অতঃপর ১৯৫৭ সালের ২৩ জানুয়ারি নওশের আলী চূড়ান্তভাবে কংগ্রেসের সাথে তার দীর্ঘ সম্পর্কের অবসান ঘটান।
পরবর্তী সময়ে ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত একজন স্বাধীন প্রতিনিধি হিসেবে নওশের আলী কমিউনিষ্ট দলের সমর্থনে পশ্চিম বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। যেহেতু তিনি সর্বদা বাম দলীয় রাজনীতিতে আগ্রহী ছিলেন, সে কারণে পুনরায় ১৯৬২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কমিউনিষ্ট দল সমর্থিত রাজ্য সভার সদস্য হন।
সৈয়দ নওশের আলী ছিলেন নীতির সাথে আপোসহীন রাজনীতিবিদ। তিনি সব সময়ই বঞ্চিত শ্রেণির পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি বাম রাজনীতিবিদ হায়দার আকবর খান রনোর মাতামহ।
১৯৭২ সালের ৬ এপ্রিল সৈয়দ নওশের আলীর মৃত্যু হয়।