৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

নিজের আইডি দিয়ে অন্যের যেসব উপকার করবেন না

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯
নিজের আইডি দিয়ে অন্যের যেসব উপকার করবেন না

!

মারুফ রানা দোহা কাতার থেকেঃ

কাতারে বৈধভাবে বসবাসের প্রথম শর্ত হচ্ছে, একটি পরিচয়পত্র থাকা। এই পরিচয়পত্রকে আরবিতে ‘ইকামা’ বা কখনো কখনো ‘বিতাকা’ বলা হয়ে থাকে। এটি কেবলমাত্র কাতার কর্তৃপক্ষের দেওয়া পরিচয় পত্র-ই নয়, বরং একইসঙ্গে এটি কাতারে প্রবেশের জন্য ভিসা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি না থাকলে কাতারের কোনো অভিবাসী নিজ দেশ থেকে কাতারে প্রবেশের বেলায় বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
এছাড়া আর্থিক লেনদেনসহ নানা কাজে প্রতিনিয়ত পরিচয়পত্র ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনেক। মোবাইলের সিম কেনা থেকে শুরু করে দেশে যেতে প্লেনের টিকেট কাটা, হাসপাতালের সেবাসহ বিভিন্ন কাজে এই পরিচয়পত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি এই পরিচয়পত্রের নাম্বার ব্যবহার করে যে কোনো আর্থিক লেনদেন বা কর্মকান্ডের দায়ভারও ওই পরিচয়পত্রধারী ব্যক্তির ওপর বর্তাবে।
এ বিষয়গুলো তুলে ধরার উদ্দেশ্য হলো, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, অনেক প্রবাসী নিজের পরিচয়পত্র ব্যবহারের বেলায় উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। যেমন, ধরা যাক, একজন প্রবাসী নিজের পরিবারের কাছে অর্থ পাঠাতে কোনো এক্সচেঞ্জে যাচ্ছেন। তাকে যেতে দেখে আরেক প্রবাসী বন্ধু নিজের কিছু অর্থ দিয়ে তাঁর বাড়ির ঠিকানায় সেটি পাঠাতে অনুরোধ করলেন। এখানে হয়তো ওই প্রবাসী বন্ধুর সময় নেই অথবা তাঁর পরিচয়পত্রের মেয়াদ নেই।
ফলে এক্সচেঞ্জে গিয়ে ওই প্রবাসী নিজের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে প্রথমে নিজের পরিবারের জন্য অর্থ পাঠালেন, পরে আবারও নিজের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বন্ধুর পরিবারের জন্যও অর্থ পাঠালেন। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে এটি একজন আরেকজনকে সহায়তা করা ছাড়া তেমন কিছুই নয়।
আবার এমনও দেখা গেছে, কেউ নতুন কাতারে আসার পর অন্য কেউ নিজের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তাঁকে একটি মোবাইলের সিম কিনে দিলেন। এরপর বছরের পর বছর ওই প্রবাসী আরেকজনের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কেনা সিমটি ব্যবহার করছেন। এটিও আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক ঘটনা।
কিন্তু অনেকেই জানেন না, উপরোক্ত দুটি ঘটনার মতো এমন অনেক স্বাভাবিক কাজের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছি। যেমন, জয়নাল আবেদিন নামের একজন প্রবাসী কর্মীকে তাঁর প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থ চুরির দায়ে অভিযুক্ত করলো।
ঘটনা সত্য হোক কিংবা ষড়যন্ত্রমূলক হোক, সরকারি কর্তৃপক্ষ যখন অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করবে, তখন দেখা যাবে, কোনো এক মাসে জয়নাল আবেদিন তার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে দু বার দেশে অর্থ পাঠিয়েছেন। এই দ্বিতীয় অর্থের উৎস কী এবং কীভাবে তিনি এই অর্থ পেলেন, সেটি নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এমন বিপদের মুহূর্তে ওই বন্ধু হয়তো অস্বীকার করে বসবেন যে, তিনি জয়নাল আবেদিনকে কখনো তাঁর বাড়িতে অর্থ পাঠাতে বলেননি। এমতাবস্থায় সেদিনের সহায়তা অনেক বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
একইভাবে আপনার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যাকে মোবাইলের সিম কিনে দিয়েছেন, তিনি যদি কখনো মোবাইলে কাউকে হুমকি দেন বা অন্য কোনো প্রতারণামূলক বা অনৈতিক কাজে মোবাইল ব্যবহার করে থাকেন, তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ যখন ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর অনুসন্ধান করবেন, তখন ওই সিমের সঙ্গে সংযুক্ত পরিচয়পত্র হিসেবে আপনাকে গ্রেফতার করতে পারেন। এতে আপনি ফেঁসে যাবেন। কারণ, যে নাম্বার ব্যবহার করে অপরাধ করা হয়েছে, সেটি আপনার নামে কেনা।
এ দুটি ঘটনা কেবল উদাহরণ নয়, বরং বাস্তবে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনা থেকে দুটি নমুনা। তাই এ ব্যাপারে প্রত্যেক প্রবাসীর সতর্কতা কাম্য।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031