১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বর্তমান, অতীত,ভবিষ্যত ও বৃদ্ধাশ্রম

অভিযোগ
প্রকাশিত মার্চ ১৫, ২০২৪
বর্তমান, অতীত,ভবিষ্যত ও বৃদ্ধাশ্রম

স্টাফ রিপোর্টার: সবজি কেনার জন্য ১৫মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু দোকানদার আমাকে সবজি দিচ্ছে না। আমার পরে যারা আসছে সবজি বিক্রেতা তাদের কাছে ঠিকিই সবজি বিক্রি করছে অথচ আমাকে তাকিয়েও দেখছে না। আমি কিছুটা রেগে বললাম,

– ফাইজলামি করেন আমার সাথে? কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি সবজি কেনার জন্য আমাকে পাত্তা দিচ্ছেন না অথচ আমার পরে যারা আসছে তাদের কাছে ঠিকিই সবজি বিক্রি করছেন।

সবজি বিক্রেতা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
– “যে ছেলে তার বৃদ্ধ বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে পারে তার কাছে কোন সবজি বিক্রি করবো না। শুধু আমি কেন এই বাজারের কোন সবজি বিক্রেতাও আপনার কাছে সবজি বিক্রি করবে না”

সবজি বিক্রেতার কথাই সত্যি হলো। আমার কাছে কেউ সবজি বিক্রি করতে চাইলো না। আমি টাকা বাড়িয়ে দিতে চাইলাম তবুও না। মাথাটা ঠান্ডা করার জন্য একটা দোকানে গিয়ে দোকানদারকে যখন বললাম,
– ভাই একটা সেভেন আপ দেন তো।
দোকানদার লোক বললো,
সেভেন আপ নাই।
আমি দোকানদারকে ফ্রিজে থাকা সেভেন-আপ দেখিয়ে অবাক হয়ে বললাম,
-এইগুলো কি তাহলে? সেভেন-আপ থাকার পরেও আপনি না করছেন কেন?
দোকানদার উত্তর দিলো,
– “এই সেভেন-আপ আপনার কাছে বিক্রি করবো না। শুধু সেভেন-আপ কেন? আপনার কাছে কোন কিছুই বিক্রি করবো না। যে ছেলে তার বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধশ্রমে রেখে আসতে পারে। তার কাছে আমি একটা সুইও বিক্রি করবো না”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে চুপচাপ চলে আসলাম।

বাসার দারোয়ান সব সময় আমায় দেখলে স্যালুট দেয় কিন্তু আজকে আর দেয় নি। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম,
– কি চাচা, আজকে যে স্যালুট দিলেন না?
চাচা মাথা নিচু করে বললো,
– “আপনার মতো কুলাঙ্গার সন্তানকে বাসায় যে ঢুকতে দিছি তাই তো অনেক”

আমি দারোয়ানকে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলাম না। বাসায় এসে আমার স্ত্রীকে যখন বললাম,
-টেবিলে খাবার দাও তো খুব খিদে পেয়েছে।
আমার স্ত্রী আমার পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– “খাবার দিবো কি করে, রান্নাই তো করতে পারি নি। বাসায় পানি নেই। গ্যাস নেই। আমি ভেবেছিলাম সবার একই অবস্থা। কিন্তু না পরে খোঁজ নিয়ে দেখি শুধু আমাদের বাসাতেই গ্যাস পানি নেই।”

আমাদের কথা বলার মাঝখানে কারেন্ট চলে গেলো। একটু পর বাড়িওয়ালার ছোট ছেলে এসে আমাদের বললো, আগামী মাসে আমরা যেন বাসা ছাড়ি।

খুব অবাক হয়ে বললাম,
-বাসা ছাড়বো মানে! আমরা তো ঠিক সময়ের আগেই বাসা ভাড়া দেই। তাছাড়া আমরা তো এমন কোন অন্যায় করি নি যার জন্য আমার বাসা ছাড়তে হবে।

বাড়িওয়ালার ছেলে বললো,
– “নিজের জন্মদাতা পিতা মাতাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন এর চেয়ে বড় অন্যায় আর কি হতে পারে? যাই হোক আমার বলা উচিত বলে দিয়েছি সামনের মাসে বাসা না ছাড়লে আমি আপনাদের গলা ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবো।”

আজকাল বেশিভাগ মানুষেই বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে কিন্তু তাদের সাথে তো কেউ এমন কিছু করে না। আমি রেখে আসলাম আর আমার বেলায় এতো দোষ। একে তো বাজার করতে পারি নি আর দ্বিতীয়ত বাসায় যা আছে তাও রান্না করার সুযোগ নেই। আমি আর আমার স্ত্রী বের হলাম বাহিরে অন্য দূরে কোথাও খেয়ে আসার জন্য। বাসা থেকে বের হবার সময় আমাকে আর আমার স্ত্রীকে দেখে পাশের বাসার ভাবী তার ছেলেকে বললেন,
– “ এই যে দেখ তোর আবীর আংকেল। উনি কিন্তু নাম করা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছে। তাছাড়া এখন অনেক বড় চাকরি করে। কিন্তু আমি তবুও চাই না তুই উনার মতো হো। আমি চাই তুই কম পড়াশোনা করে ছোট চাকরি করলেও মানুষের মতো মানুষ হ। উনার মতো অমানুষ যেন না হোস।”

মায়ের কথা শুনে ছেলে তখন বললো,
– আমরা অমানুষ কাদের বলি?

ভাবী উত্তর দিলো,
– মানুষের মতো দেখতে হলেও যারা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না তাদের অমানুষ বলে। তুই কখনো পারবি আমাকে ছাড়া একটা রাত ঘুমাতে।

ছেলেটা মনমরা হয়ে উত্তর দিলো,
-কখনোই পারবো না তোমায় ছাড়া একটা দিন থাকতে।

ভাবী আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-কিন্তু যারা অমানুষ তারা নিজের বাবা মাকে ছাড়া দিনের পর দিন থাকতে পারে। আসলে মানুষ তো মরে গেলে পচে যায় অথচ অমানুষগুলো বেঁচে থাকাকালীনই পচে যায়।

কথা গুলো বলে ভাবী নাক মুখ চেপে ধরে এমন ভাবে আমাদের সামনে থেকে চলে গেলো মনে হলো আমাদের শরীর থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছিলাম আমি কতবড় ভুল করেছি। যে বাবা মা না থাকলে আমি পৃথিবীর আলো বাতাস দেখতে পেতাম না আমি কিনা সেই বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছি । পাশে তাকিয়ে দেখি আমার স্ত্রী কাদছে। আমার হাত ধরে সে বললো,
-আমরা অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি চলো আমরা বাবা মাকে ফিরিয়ে আনি।
আমিও আমার চোখের জলটা মুছে বললাম চলো যাই—-

এটা গল্প হলেও আমাদের সামজের মানুষগুলো যদি গল্পের প্রতিটা চরিত্রের মতো এইভাবে প্রতিবাদ করতো তাহলে সমাজের কেউ তাদের বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার সাহস করতো না। সমাজটাই বদলে যেতো-

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031