৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

অনিয়ম ও রাক্ষুসে বানিজ্য অনুসন্ধান সরকারি স্বাস্থ্য সেবায়

অভিযোগ
প্রকাশিত মার্চ ১৩, ২০২৪
অনিয়ম ও রাক্ষুসে বানিজ্য অনুসন্ধান সরকারি স্বাস্থ্য সেবায়

এস. হোসেন মোল্লা :দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে চিকিৎসা সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, সেই অধিকার যেন শুধু আজ বই-পুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।বহু বছর যাবত চিকিৎসা সেবা অনৈতিক ব্যবসায়ে পরিনত হয়েছে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা ছাড়া যেনো কিছুই বোঝে না এই চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট মহাশয়েরা । রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে চলছে নানান অরাজকতা ও তান্ডব!চলছে অনিয়ম-দুর্নীতির তুখোড় প্রতিযোগিতা!

জানা যায়, কোনো মুমূর্ষু রোগীকে দেখলেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যেনো ওঁত পেতে থাকা বিভিষিকাময় বানিজ্যের দ্বার খুলে যায়।একদিকে রোগী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে থাকে। আর আরেকদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি চিকিৎসা সেবা না দিয়ে তাদের স্বজনদের টিকিট নেয়া এবং ভর্তির জন্য নানান অজুহাতে শুরু করে রাক্ষুসে বানিজ্য ! যেমন – কেবিন নিয়ে দরকষাকষি (এসি-নন এসি/সিঙ্গেল বেড-ডাবল বেড), পোষ্য দালালদের উপদ্রব, রোগীদের একাধিক পরীক্ষা/টেস্ট যা নিছক বাড়তি বা অপ্রয়োজনীয় ইত্যাদি!

আমাদের প্রতিনিধিদের বিভিন্ন অনুসন্ধানে জানা গেছে,সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাদের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে রুগীকে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান।ফলশ্রুতিতে ভালো কমিশন চিকিৎসকের কাছে চলে যায়। আবার সরকারি হাসপাতালের বেশকিছু অসাধু ডাক্তার বাবু প্রকাশ্যভাবেই নিয়মিত বসেন বেসরকারি হাসপাতাল বা ব্যাক্তিগত চেম্বারে। সেই সব খবরাখবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের ফলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন লোকদেখানো ব্যবস্থা নেয়ায় আজও চলছে এই বিশ্বয়কর মহাবানিজ্যিক তান্ডব লীলা সেই প্রশাসনেরই নাকের ডগায়!দেশের স্বাস্থ্য সেবা আজ চরম বেপরোয়া ভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে !

আরও দেখা যায়,অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালের রান্নাঘর অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা। এমনকি এই হাসপাতাল গুলোর আশপাশে রোগীদের ব্যাবহৃত বর্জ্য( সিরিঞ্জ,গজ কাপড় ইত্যাদি) ফেলাতেও পরিবেশ দুষিত হয়ে মশাসহ রোগ জীবানু জন্ম নিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই কেমন যেন একটা বিশ্রী দুর্গন্ধ মেশালো পরিবেশ বিরাজমান। চিকিৎসকদের দেয়া টেস্টের জন্য রোগীদের ও তাদের স্বজনদের দৌড়াদৌড়ি করতে হয় বিভিন্ন স্থানে। তাতে রোগীরা চিকিৎসা পেতে গিয়ে হয়রানির ফলে আরও অসুস্থ হয়ে যায়।আরও জানা গেছে, অনেকেই চক্রান্ত মুলক মামলার উদ্দেশ্যে ক্ষমতা ও টাকার জোরে গোপনে পুলিশ কেস এর প্রেসক্রিপশন ও সনদ নিয়ে থাকেন।তাছাড়াও এখানে রহস্যজনক কারণে যুগ যুগ ধরে কোন ব্যাবস্থাতেই স্থানীয় নেতা-মাস্তান-সন্ত্রাসীদের উৎপাত আদৌ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।

আরও জানা যায়,কোনো গর্ভবতী মহিলা হাসপাতালে গেলেই চিকিৎসকরা কথায় কথায় সিজার করতে বলেন। সাথে জুড়ে দেন একাধিক টেষ্টও! যা কিনা অলিখিত ভাবেই আবশ্যিক বা পূর্বশর্ত ! রোগীর সঠিক চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি হাসপাতাল যথেষ্ট উন্নত হওয়া সত্বেও তাদের যেনো মাথা ব্যাথাই নেই । দেশের অনেক বিত্তবানরা তাদের চিকিৎসার জন্য ভারত, সিঙ্গাপুর,থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে থাকেন।কারন হিসেবে জানা যায়, দেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ওপর তাদের মোটেই আস্থা নেই । এতে সহজেই বোধগম্য যে, আস্থাহীন ভাবে চলছে দেশের স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান! তার ওপর আরও আছে ভুল চিকিৎসা, প্রতারণা, দালালের খপ্পর এমনকি ব্যক্তিগত সন্ত্রাস বাহিনী ! যেন ভেলকিবাজি ও প্রতারণা দিয়েই চলছে দেশের স্বাস্থ্যখাত ! সকল অনিয়মই আজ যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে।

জাতির মনে প্রশ্ন, সাধারণ জনগণ বা অসহায় রুগী হাসপাতালের দালালদের জ্বালাতন, অপচিকিৎসা এবং চক্রান্তমুলক ভাবে পরিকল্পিত বৈচিত্রপুর্ন প্রতারণার হাত থেকে আদৌ রেহাই পাবে কি ? এসব কি স্বাস্থ্য সেবা নাকি মরন দশা? এভাবে অপকর্ম চালু থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাজ কি ?এতো প্রশ্নের জবাব কেই বা দেবে? দেশের স্বাস্থ্য সেবা ধ্বংসের দিকে কেন ? কেনো চিকিৎসা সেবায় এমন দুর্নীতি”? হায় আফসোস! আজও এর জবাব কেউই দিতে পারেননি! চিকিৎসা ব্যবস্থা কেন মুখ থুবড়ে পরে আছে !

বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত তথ্য, অভিযোগ ও অসংখ্য প্রশ্নের সঠিক জবাব ও সত্যতা বের করতে বহুদিন যাবত বিভিন্ন সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠন দেশের অনেক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান সমুহে অনিয়ম নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য বা সদুত্তর প্রদানতো দুরের কথা ! উল্টো মানবাধিকার ও গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর আক্রোশমুলক চড়াও হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মেতে নাজেহাল ও হয়রানি করার ঘটনাই ঘটিয়েছে মর্মে অহরহ শোনা যাচ্ছে! পাছে প্রশ্ন থেকে যায়,

“এমন অপ্রতিরোধ্য অনিয়মের শেষ কোথায় ” ?

এই খবর প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে উক্ত অনিয়মগুলো রাষ্ট্র ও জনতার স্বার্থে জরুরি ভাবে খতিয়ে দেখা সহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই কঠোর জবাবদিহিতার আওতায় আনার লক্ষ্যে সকল প্রভাবশালী ও সচেতন মহলসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন সাপেক্ষে আন্তরিক সহযোগিতা জরুরি ভাবে কামনা করা হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031