৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

চাঁদাবাজির কোটি টাকা কোন হারাম খোরেরা খাচ্ছে?

অভিযোগ
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৫, ২০২৩
চাঁদাবাজির কোটি টাকা কোন হারাম খোরেরা খাচ্ছে?

এস. হোসেন মোল্লা: সারা দেশে বিভিন্ন রুটে অটোরিকশা-ইজিবাইক চলছে প্রায় কয়েক লাখ। এতে লাগছেনা কোন প্রকার লাইসেন্স বা রুট পারমিট। আবার এ সমস্ত ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটোরিকশা-ইজিবাইকের মালিক বা গ্যারেজ মালিকরা অটোরিকশা চালাতে দেয় অনেক ক্ষেত্রেই অযোগ্য, অদক্ষ কিংবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক / উঠতি বয়সী ছেলেদের । অনেক ক্ষেত্রেই এরা কানে হেডফোন লাগিয়ে অটোরিকশা চালিয়ে থাকে । যত্রতত্র যাত্রী ওঠা নামা করাতে বিভিন্ন এলাকা বা মহল্লায় যানজট ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। এমন ঘটনায় কেউ প্রতিবাদ করলেই প্রতিবাদকারির সাথে অশ্লিল আচরনও করতে দেখা যায় প্রায়ই । এতে বারেবারে প্রতিয়মান হয়, এই সব চালকরা বখাটে,মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত সিন্ডিকেট বাহিনীর সদস্যও বটেই !

বিভিন্ন অনুসন্ধান ও গবেষণায় জানা যায়, বেশির ভাগ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা-ইজিবাইক চালক যেন স্বভাবতই বেপরোয়া! না বুঝে না দেখেই কখনো পথচারী, কখনো প্রাইভেট কার, আবার কখনো মোটর সাইকেল ইত্যাদির সাথে দুর্ঘটনা ও দাপুটে ঝগড়াঝাটি তাদের নিত্যকার স্বভাব ও চালচিত্র । এমনকি কোনো অটোরিকশা চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেলে তার গ্যারেজ বা মালিকের কাছে সেই চালক বা গাড়ি সনাক্ত করার জন্য যথাযথ ব্যাবস্থা নেই। তারপরও কেউ খোঁজ খবর নিতে চেষ্টা করলে তার কপালে আছে মহাজনের সিন্ডিকেট বাহিনীর রোষানল ! এছাড়া এই গাড়ীগুলো এক প্রকার বেওয়ারিশ কিংবা উড়নচণ্ডী রুপে হঠাৎ দ্রুত এসেই রাস্তার মধ্যে ক্ষমতাধর নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে রুট পরিবর্তন করে বা উল্টো পথে ঘুরে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি করে যা নিত্যকার ঘটনা !

আরও জানা যায়, এই রিকশাগুলোর ভাড়াও বাড়ে মাত্র কয়েক মাস অন্তর অন্তর। কারা,কিভাবে, কেন এই ভাড়া বাড়িয়েছে তার খোঁজ নিলে জানা যায়, কমিটি বাড়িয়েছে! তাদের মাসিক চাঁদা আদায় করা হয় নিজ নিজ এলাকার তথাকথিত দেশপ্রেমিক বা দেশসেবক লেবাসে মোড়ানো নেতা-মাস্তান-সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে। মানে যারা এই সিন্ডিকেট এর হর্তাকর্তা! মুলত : এই কারনেই তাদের অটোরিকশা-ইজিবাইকের সামনে বিভিন্ন মুল্যমানের ছোট স্টিকার দেখা যায়! এলাকা ভেদে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের জন্য বিভিন্ন পরিমান টাকা দিলেই এই স্টিকার মেলে। এই স্টিকারের সুবিধা জানতে চাইলে তারা বলেন,স্টিকার লাগানো থাকলে পুলিশ আর ধরবে না! তাহলে বুঝতে পারা যায়, এই সব সিন্ডিকেট বাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ অবদান। কাজেই পুলিশের নাকের ডগার সামনে দিয়ে এমন বৈচিত্রপুর্ন অপরাধ চলছে।জানা যায়, এই স্টিকার যারা দেয় তারা লাইনম্যান হিসেবেই চালকদের কাছে পরিচিত।এই ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা-ইজিবাইক যারা কন্ট্রোল করেন তারা আবার সরকারি কিংবা ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে সুনাম ও সম্মানের সাথে নির্ভয়ে চাঁদাবাজি করে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল তথা জীবন ধন্য করতে ব্যাস্ত ! এই স্টিকার ব্যাবহারের আরও সুবিধা সম্পর্কে জানা গেছে , গাড়ির কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এই স্টিকার দেয়া কমিটিই তাদের অপরাধ ঢাকতে সহযোগিতা তথা অপশক্তি প্রয়োগ করেন ! আবার স্টিকার বিহীন গাড়ির চলাচল সরাসরি বন্ধ রাখতে এই শক্তিশালী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট বাহিনীই নাকি যথেষ্ট।যদিও দেশের সরকার বা প্রশাসন এই রিকশাগুলো বন্ধ করতে সক্ষম হননি এতো বছরেও !

এই অবৈধ রিকশার সহযোগিতার জন্য সারা দেশে প্রকাশ্যেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ গ্যারেজ ও অনুমোদনহীন ব্যাটারি চার্জ প্রদান কেন্দ্র! এতে নানান ভাবে বিদ্যুৎ চুরি হয়ে বিদ্যুৎ ঘাটতির কবলে পরেছে গোটা দেশ ও জাতি! এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা সম্পৃক্ত নানান উদ্ভট কর্মকাণ্ড বেশ কয়েক বছর যাবত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হলেও উল্লেখযোগ্য কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেননি কোন প্রশাসন কিংবা সচেতন মহল। এই সম্পর্কে অনেকেই গণমাধ্যমকে জানায়,আপনারা যতই লেখেন আর ভিডিও করেন কোনো লাভ নেই। তাহলে কি এরপর ও কেউ বলতে চান যে প্রশাসন এই অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত নয়!আসলে অবশ্যই প্রশাসনই সেই মুখোশধারী বা লেভাসধারী সন্ত্রাসী বলেই সাহসীকতার সাথে বিরামহীন চাঁদাবাজি করতে অলিখিত অনুমতি রয়েছে !ভিন্ন ভিন্ন জরিপে পাওয়া গেছে সারা দেশে এই চাদাবাজী থেকে উত্তলন করা হচ্ছে অন্তত কয়েকশত কোটি টাকা! আরও জানা যায় , উচ্চ আদালত দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এগুলো চলাচলের নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন। কিন্তু,বাস্তবতার চিত্র উল্টো! কে শোনে কার কথা!

জনমনে ভাবনা ও প্রশ্ন — তাহলে কে বা কাদের প্রশ্রয়ে এই অটোরিকশা-ইজিবাইক আজও দেশব্যাপী দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে?প্রতি মাসে স্টিকার বিক্রি করে চাঁদাবাজির কোটি টাকা কোন হারাম খোরেরা খাচ্ছে এবং দেশের কি কাজেই বা আসছে?এই ব্যাপারে প্রশাসনের রহস্যময় নিরবতাই প্রমান করছে আসলেই প্রশাসন এই সিন্ডিকেট বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত! তাহলে কি এই অবৈধ কর্মকাণ্ড কোনদিনও বন্ধ হবেনা ? তাহলে কি এসব বন্ধ করার নামে গোপনে নিজ স্বার্থসিদ্ধি চলমান রাখতে বৈধ করার নীলনকশা আঁকতে প্রশাসন নিজেই মহাব্যস্ত! তাহলে কি উদার চিত্তের দেশপ্রেমিক বা দেশসেবক নামের মুখোশধারী অসাধু মহল অবশেষে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বৈধতা প্রদানের যৌক্তিকতা বহির্ভুত গাঁজাখোরী নিয়ম-আইন সৃষ্টিতে মশগুল! এ কেমন বিভীষিকাময় অপশক্তির অদৃশ্য কালো হাত? দুর্নীতির ভয়ংকর ভাবমূর্তি নিয়ে উচিত কাজে অকেজো হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে দেশের প্রশাসন ব্যাবস্থা! একই পথের পথিক যেনো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা গুলোও। তার ওপর কিভাবে সাবলিল ভাবেই তারা বলে বেড়াচ্ছে দেশে নাকি অনিয়ম-দুর্নীতি কমে গেছে! বলাই বাহুল্য যে, আমরা এমনই চরম অরাজকতা ও মগের মুল্লুকের দেশে বাস করি যেখানে তথাকথিত দেশ প্রেমিক বা দেশ সেবকদের না আছে নুন্যতম চক্ষু লজ্জা, না আছে আত্নসম্মান বোধ !!

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031