Sharing is caring!
দেড় দশকে বদলে গেছে রংপুরের কৃষি
রংপুর প্রতিনিধি : শস্যবহুমুখী ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, উন্নত বীজ, সার-কীটনাশক সরবরাহ, সেচ-ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানা উদ্যোগে গত দেড় দশকে বদলে গেছে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষি। একদিকে ফসলের নিবিড়তা বেড়েছে, আরেক দিকে সুগন্ধি চাল, চা, ভুট্টা, আলু, ফুলসহ নতুন নতুন ফসল উৎপাদনের দিকে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে ওঠায় মজবুত হয়ে উঠছে এই এলাকার কৃষিনির্ভর অর্থনীতি।
একসময়ের মরুময় পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার বেশিরভাগ জমিতে এখন ধানের আবাদ। তামাক হটিয়ে ভুট্টা, আলু, মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বেড়েছে রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটে। দিনাজুপর-ঠাকুগাঁও এখন সুগন্ধি ধানের এলাকা। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধাসহ বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের ৮টি জেলার আবাদী জমির প্রায় সবটুকু এখন আমন ও বোরো ধানসহ তিন ফসলি। ক্রমেই ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতে শুরু করেছে কৃষক। প্রধান ফসল ধান ও আলুর দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তুষ্টি এসেছে কৃষককূলে।
চা, কফি ও ফুল চাষ নতুন স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে কৃষককে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় গত বছর থেকে শুরু হয়েছে টিউলিপের চাষ। প্রথমবারই বাণিজ্যিকভাবে করা হয়েছে এর উৎপাদন। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর তেঁতুলিয়ায় বিদেশি ফুলের চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।
পঞ্চগড়ে চা উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ অসংখ্য কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখেনে এখন চা চাষ ও চা শিল্প ক্রমবিকাশমান।
ভোজ্যতেলের সংকট কাটাতে এখন হাত বাড়ানো হচ্ছে কৃষির দিকেই। চলতি বছর রংপুরজুড়ে সরিষার আবাদ হয়েছে ব্যাপকভিত্তিতে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এই অঞ্চলে সূর্যমূখির চাষও জনপ্রিয় হচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, সনাতনী চাষ পদ্ধতির বদলে এসেছে যন্ত্রপাতি। কম্বাইন্ড হাভেস্টরের মতো কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, সেচ-সার-বীজের নিরববচ্ছিন্ন সরবরাহ, নীতিগত সহায়তায় ২২৫ শতাংশ থেকে ২৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে ফসলের নিবিড়তা।
রংপুরের আঞ্চলিক কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন কৃষি সম্প্রসারণে প্রশিক্ষণ, উন্নত বীজ, সার সরবরাহ, উন্নতজাত উদ্ভাবনসহ সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, প্রণোদনা, ভর্তুকির তথ্য উল্লেখ করে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এই অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে দিনরাত নিবেদিত। তবে চরের কৃষি আর এই অঞ্চলের কৃষকের অবদান স্বীকার করেন তিনি।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বেলাল আহমেদ বলেন, সরকারের শস্যবহুমুখীকরণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে উৎপাদন বেড়েছে। এভাবেই এক সময় বদলে গেছে এ অঞ্চলের কৃষি।
তবে এই অগ্রগতির পেছনে ভূমিকা রাখা প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের হাত পর্যন্ত কৃষিঋণসহ সরকারের সব সহায়তা পৌঁছানোর অনুরোধ করেছেন রংপুর জেলা ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী।
এক সময় সার, বীজ, কীটনাশক, ডিজেল, বিদ্যুতের সংকট আর ফসলের দাম না পাওয়া কৃষক হাপিত্যেস করলেও দিন বদলেছে উত্তরের শস্যভাণ্ডারখ্যাত এই অঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের। খাদ্য ঘাটতি-সংকটের এলাকাটি কেবল স্বয়ম্ভরতাই অর্জন করেনি, পরিণত হয়েছে উদ্বৃত্ত খাদ্যের এলাকায়।