Sharing is caring!
মোঃ ফিরোজ কবির সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রতিনিধি: খেয়ে-পরে জীবন বাঁচানোর তাগিদে অলস সময় কাটানোর যেন কোনো সুযোগ নেই চরাঞ্চলের মানুষের। তাই নারী, পুরুষ সবাইকে কাজ করতে হয় মাঠে। বাদ যায় না শিশু কিশোররাও। তাই স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি বাবা-মায়ের সাথে খেতখামারের কাজ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে সঙ্গ দেয় ওরা। রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে কাজের কাজী হয়ে ওঠে শিশু কিশোররা।
তেমনই এক শিশুর দেখা মিলল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের বেকরির চর গ্রামের শেষ প্রান্তের দিকে। নাম সজিব মিয়া। মাত্র কুড়ি টাকা দিয়ে দোকান শুরু করায় ওর নাম হয়েছে এখন ‘কুড়ি টাকার দোকানি।’ উপজেলা সদর থেকে মহিলা বাজার হয়ে খানিক পূর্ব দিকে গিয়ে সোজা উত্তর দিকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূর্গম মেঠোপথ পাড়ি দিলে তবেই পাওয়া যাবে সজিব মিয়ার সেই কুড়ি টাকার দোকান।
কৃষি শ্রমিক বাবা আমজাদ হোসেনের বাড়ি ছিল হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার হাজারিহাট গ্রামে। বার বার তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি হারা হয়ে অবশেষে ঠাঁই নিয়েছেন ওই বেকরির চর এবং কুড়িগ্রামের উলিপুরের চর বিরহিম সীমান্তের ধুধু বালুচরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাট খড়ির ছাউনি ও বেড়া দিয়ে তৈরি সজিবের দোকান ঘরটি। তাতে নেই কোনো পাটাতন। মাটির মধ্যে রয়েছে চটি বিছানো, তাতে বসেই দোকানদারি করে সজিব। দোকানে রয়েছে- পাউরুটি, বনরুটি, সিঙারা, সামুচা, ক্রিমবল, বালুশিয়াসহ বিভিন্ন বেকারি পণ্য। দোকানে পান পাওয়া গেলেও মিলবে না কোনো বিড়ি, সিগারেট বা জর্দা। রয়েছে পানি পানের জন্য জগ আর গ্লাস। ক্রেতা বলতে ওই মাঠে কাজ করা কৃষক আর শ্রমিক। আশপাশে কোনো দোকান না থাকায় দৈনিক বিক্রি হয় প্রায় দেড় থেকে দু’শ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া সজিব মায়ের দেওয়া টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে জমিয়ে ছিল মাত্র কুড়ি টাকা। মাস কয়েক আগে সেই কুড়ি টাকা দিয়ে দোকান শুরু করা ওই শিশু দোকানদারের মূলধন দাঁড়িয়েছে এখন ৭০০ টাকা। মা সুমি আকতার জানালেন, নিজের কোন ভিটেমাটি নেই তাদের। অন্যের দেওয়া একচিলতে মাটিতে তাদের বাড়ি। ঘর বলতে ওই একটি চালা আর রান্নার জন্য রয়েছে পলিথিন দিয়ে তৈরি একটি ছাউনি। স্বামী আমজাদের মত তিনিও একজন কৃষি শ্রমজীবী। কখনো কাজ পান আবার কখনোবা পান না। কষ্টের জীবন তাদের। সজিব তাদের একমাত্র সন্তান। খুব মিতব্যয়ী সে। মাত্র কুড়ি টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে তা ৭০০ টাকায় উন্নীত হওয়ায় শিশু ছেলের প্রতি এখন বেজায় খুশি শ্রমজীবী মা।
ক্যামেরা তাক করায় বেশ উৎফুল্ল মনে হলো সজিবকে। সে রিপোর্ট অভিযোগ কে জানায়, ‘তার মা-বাবার অভাবের সংসার। তাদের সাহায্য করতেই তার এ দোকান করা। বিক্রি শেষ হলে আবার পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সুন্দরগঞ্জ থেকে বেকারিপণ্য নিয়ে আসে। স্কুল খোলা থাকলে মা সুমি আকতার করেন সেই দোকান। স্কুল থেকে ফিরে দোকানে বসে ওই শিশু। যা আয় হয় মায়ের হাতেই তুলে দেয় সজিব।’