Sharing is caring!
অভিযোগ অনলাইনঃ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আবাদ যোগ্য এক ইঞ্চি জায়গাও যেন অনাবাদি না থাকে; সেই ঘোষণা বাস্তবায়নে কাজ করছে কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। প্রধানমন্ত্রীর কৃষি উন্নয়নমূলক এ ঘোষণা গ্রামাঞ্চলের কৃষক বাস্তবায়ন করায় শস্য বিন্যাস কর্মসূচির আওতায় রাস্তার দুইপাশে পতিত জমিতে শাক-সবজি চাষের ফলে পরিবারে পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সবজি ভান্ডার খ্যাত জেলার নকলা উপজেলায় রাস্তার পাশের পতিত জায়গায় শাক-সবজি চাষ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি রাস্তার ভাঙ্গন রোধ, পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণসহ বাড়তি আয় ও মৌসুমি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হয়েছে।
নকলার আবহাওয়া শাক-সবজি চাষের উপযোগী, তাছাড়া এখানকার মাটি দো-আঁশ হওয়ায় শাক সবজির ফলন ভালো হয়। তাই উপজেলার প্রায় সব রাস্তার পাশেই সারা বছর কমবেশি বিভিন্ন মৌসুমি শাক সবজি চাষ করা হয়। এতে উপজেলার শত-শত কৃষক পরিবার রাস্তার দুইপাশের পতিত জমিতে শাক-সবজি চাষ করে পরিবারে পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের পথ খোঁজে পেয়েছেন।
একজনের দেখাদেখি অন্যজন আগ্রহী হওয়ায়, উপজেলায় দিন-দিন রাস্তার দুইপাশের পতিত জমিতে শাক-সবজি চাষের পরিমাণ বাড়ছে। নিজস্ব আবাদী জমি ছাড়া, নামে মাত্র শ্রমে ও অল্প ব্যয়ে রাস্তার পাশের পতিত জমিতে শাক সবজি চাষ করে পারিবারের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট শাক সবজি বিক্রি করে প্রচুর টাকা আয় করছেন অনেকে।
কয়েক বছর ধরে উপজেলার গনপদ্দী, নকলা, উরফা, গৌড়দ্বার, বানেশ্বরদী, পাঠাকাটা, টালকী, চরঅষ্টধর ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার প্রায় সব রাস্তার পাশে নিয়মিত শাক-সবজি চাষ হচ্ছে।
বিশেষ করে ঢাকা-নাকুগাঁও স্থল বন্দর রাস্তার পাশে লাভা এলাকায়, নকলা-কলাপাড়া, নকলা-শিববাড়ী, নকলা-শেরপুর বাইপাস রোড, নারায়নখোলা-চন্দ্রকোনা, গণপদ্দী-ছাল্লাকুড়া, জালালাপুর-বানেশ্বরদী এসব পাকা সড়ক ছাড়াও গ্রামের বিভিন্ন কাঁচা ও পাকা রাস্তার দুই পাশের পতিত জমিতে বিভিন্ন শাক-সবজির সবার নজর কাড়ছে।
রাস্তার দু’পাশের জমিগুলো মূলত: সারাবছর পতিত পড়ে থাকার কথা। কিন্তু এসব পতিত জমিতে বিভিন্ন প্রকার সবজি বিশেষ করে লাউ, শিম, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, পুঁইশাক ও করোলাসহ বিভিন্ন মৌসুমী শাক-সবজি চাষ করা যায় সহজেই।
সরেজমিন নকলা উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা যায়, সড়কের দু’পাশের পতিত জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করে একদিকে যেমন শত-শত কৃষি পরিবার লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি রাস্তার ভাঙ্গন রোধ ও মৌসুমি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সামান্য হলেও কমছে বেকারত্ব, বাড়ছে কৃষি আয়। সমৃদ্ধ হচ্ছে কৃষি অর্থনীতি।
ভুরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আলহাজ মো. ছাইয়েদুল হক জানান, কৃষি বান্ধব সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছুদিন আগে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে নির্দেশক্রমে ঘোষণা দিয়েছেন যে, আবাদ যোগ্য দেশের এক ইঞ্চি জায়গাও যেন অনাবাদি না থাকে। ওই ঘোষণা বাস্তবায়নে তারা নিয়মিত কাজ করছেন। নিজেরা রাস্তার পাশের পতিত জমিতে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছেন, পাশাপাশি রাস্তার পাশের অন্যান্য কৃষক পরিবারকে তারা উৎসাহ প্রদান করে আসছেন। সংগঠনটির সাধারন সম্পাদক হেলাল উদ্দিন জানান, রাস্তার পাশের পতিত জমিতে একই মাচা ব্যবহার করে কয়েকবার শাক সবজি চাষ করা যায়, তাতে উৎপাদন খরচ কম হয়। এতে কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে উপজেলার প্রতিটি রাস্তার পাশের পতিত জমিতে শাক সবজি চাষ দিন দিন বাড়ছে বলে তারা মনে করছেন।
বানেশ্বরদীর দেলোয়ার, ছাল্লাতুলা এলাকার হাবিবুর রহমান, অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী তমিজ উদ্দিন, পোলাদেশীর এএসএমবি করিম, বানেশ্বরদী খন্দকার পাড়ার মোকলেছুর রহমান, ঈসমাইল, কামাল, কমল, বেলাল; পাঠাকাটার সেলিম রেজা ও মিলন, চরঅষ্টধরের সামছুল, চন্দ্রকোণার হেলেনা বেগম; গনপদ্দীর ছাইদুল ইসলাম, টালকী ইউনিয়নের আসলাম উদ্দিন ও আক্তার; পৌরসভার আলাল মিয়া, লাভার রিপন মিয়া ও জালালপুর এলাকার আলাল ও শামীমসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা রাস্তার পাশে শাক সবজি চাষ করে পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা আয় করছেন। এতে করে বছরের হিসেবে প্রতি পরিবারে শাক সবজি ক্রয় বাবদ ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বেঁচে যাচ্ছে। অনেকে নিজের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত শাক সবজি বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন বলে তারা জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মণি জানান, উপজেলায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার রাস্তার পাশে বছরে অন্তত দুইবার শাক-সবজি চাষ করা হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন জাতের কালাই চাষ করেও সুফল পাচ্ছেন কৃষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নকলা উপজেলার মতো সারাদেশের রাস্তার দুই পাশের পতিত জমিকে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষের আওতায় আনার পরিকল্পনা হাতে নেয়া উচিত। এবছর নকলা উপজেলার সুবিধাজনক ও দৃশ্যমান ৫ কিলোমিটার রাস্তার পাশে কৃষি বিভাগের আওতায় বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতি বছর এর পরিমাণ বাড়বে বলে তিনি জানান। এতে করে নিজেদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আসতে পারে বাড়তি টাকা। তাছাড়া রাস্তার ভাঙ্গন রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে; ফলে কিছু হলেও কমবে বেকারত্ব, বাড়বে কৃষি আয়, সমৃদ্ধ হবে কৃষি অর্থনীতি, বাস্তবায়ন হবে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা ‘আবাদ যোগ্য এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’।