সোমেন সরকার, ক্রাইম এডিটর চট্টগ্রাম
২৪০ কোটিরও বেশি টাকা বিদেশে পাচারের মামলায় হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা আবু আহাম্মদ ওরফে গড ফাদার আহাম্মদকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন বলেন, বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও ৯ মাস ধরে নানা অজুহাতে সময় ক্ষেপণের কারণে তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সেই তথ্য গোপন করে আবারও উচ্চ আদালতে এসে আগাম জামিনের আবেদন করলে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তিনি যেন দেশ ছাড়তে না পারেন, সেজন্য ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে ইমিগ্রেশনকে।এর আগে সোমবার ২০৪ কোটি টাকা পাচারের মামলায় আবু আহাম্মদ হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। তবে দায়রা জজ আদালত আবু আহাম্মদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন সে তথ্য জামিন আবেদনে গোপন করেন তিনি। ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু আসামি হাজির না হওয়ায় আসামির আইনজীবী ফারিয়া বিনতে আলম জামিন আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করার আবেদন করেন। এসময় জামিন আবেদনে তথ্য গোপন করার বিষয়ে আদালত আইনজীবীকে সতর্ক করেন।প্রসঙ্গত, ২০৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবু আহাম্মদসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ কোতয়ালি থানায় মামলা করে সিআইডি। ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিএফআইইউ থেকে প্রাপ্ত ব্যাংক হিসাব বিবরণী, কাগজপত্র পর্যালোচনা, লেনদেনের ধরন এবং আসামির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, আসামিরা একে অপরের সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১২ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা ও হুন্ডির মাধ্যমে ২০৪ কোটি টাকার পাচারের অর্থ দিয়ে গাড়ি, বাড়ি, মার্কেটসহ বিভিন্ন সম্পত্তি অর্জন করেছেন।
এই মামলায় হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান ওই আসামি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামিকে তিন সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের পর ২২ ফেব্রুয়ারি আসামি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন দাখিল করেন। চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. ইসমাইল হোসেন নথি তলব পূর্বক ৫ মে জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য রাখেন।
কিন্তু চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি। এরপর ১৩ জুলাই দিন ধার্য রাখা হলেও নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি। এরপর ধার্য তারিখে নথি না আসায় ৩১ আগস্ট নথি উপস্থাপনপূর্বক ৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে আদালত। এভাবে আরও কয়েকবার শুনানির জন্য সময় প্রার্থনা করেন আসামি। এসব আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।গত ১৩ নভেম্বর আসামির সময় আবেদন না মঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। বিশেষ আদালতের আদেশে বলা হয়, গত ৯ মাস যাবত জামিন শুনানি না করে আসামি সময়ের দরখাস্ত দিয়ে আসছেন। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার সামিল। এরপরই ওই আসামি তথ্য গোপন করে পুনরায় হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন চান।প্রসাশন ও ইমিগ্রেশন বিভাগ উক্ত বিষয়ে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করছে।