Sharing is caring!
লেখা শিরোনাম থাকার একটি সুবিধা হলো শিরোনাম থেকে আপনি পুরো বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। উপরের শিরোনামটি দূবোধ্য নয় আবার সহজ ও নয়। ক
মানুষ জীবিকার তাগিদে বেঁচে থাকার জন্য ভিক্ষা করে কিন্তু বৃক্ষ ভিক্ষা!!!!
চলুন আজকে আপনাদের বৃক্ষ ভিক্ষুক গহের আলীর গল্প শুনাই।
নওগাঁ জেলার শিকার পুর ইউনিয়নের গহের আলী যৌবন দিন মজুরী করতেন কিন্তু বার্ধক্যের ভারে যখন কুঁকড়ে গেছেন তখন পেটের টানে একদিন ভিক্ষার থালা হাতে নেমে আসেন রাস্তায়। কিন্তু সঙ্গে একটি অদ্ভুত খেয়াল চাপে বৃদ্ধ গহরের। রাস্তার দুপাশে গাছের চারা লাগাবেন। ভিক্ষাবৃক্তি যার সম্বল চারা কেনার টাকা কোথায় পাবেন তিনি?
গহের আলীর অবশ্য নেশা কাটে না।ভিক্ষার জন্য গহের আলী এ পাড়া ও – পাড়া ঘুরে বেড়াতেন সাথে থাকতো ভিক্ষার ঝুলি।দিন শেষে ভিক্ষার ঝুলায় চাল টাকা পয়সার বদলে বাড়ী ফিরতেন তালের আঁটি ভর্তি করে।
সেই আঁটিগুলো পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নওগাঁ রাজশাহী মহাসড়কে একটি একটি সারি বদ্ধ ভাবে তালের আঁটি লাগাতেন।বাদ যায়নি কবরস্থান ও। এভাবেই ভীমপুর,বলিহার ইউনিয়ন জুড়ে তিনি ১২ হাজার তাল গাছ লাগিয়েছেন। এভাবেই গড়ে উঠেছে গহের আলীর তাল সাম্রাজ্য।
অনেক বড় হয়েছে গাছগুলো আজ।নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নে গেলে দেখা যাবে,অসংখ্য তাল গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে।রাজশাহী নওগাঁ মহাসড়কের দুই ধার জুড়ে, বিরাট বিরাট ছায়াময়ী পাতা ছড়িয়ে।
সহায় সম্বলহীন গহর আলী বলতেন” আমি বেঁচে থাকবনা, তালগাছ গুলো বেঁচে থাকবে এতেই আমার সুখ।
বলুন দেখি আমরা কয়জনেই বা মনে রেখেছি এই বৃক্ষ ভিক্ষুক গহের আলী কথা যিনি ১০৬ বছর বয়সেও নিজের লাগানো তালগাছের পরিচর্যা করতেন।
২০০৮ সালে বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি এর মাধ্যমে গহের আলীকে বিরল সম্মানে ভূষিত করা হয়।
২০০৯ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক দেয়া হয়েছিল নিঃস্ব গহের আলীকে।
১০৮ বছর বয়সে আশ্রয় নেন শীতল মাটির কোলে।
যুগের পর যুগ ধরে গাছ কাটতে কাটতে প্রকৃতিকে আজ আমরা ফুঁসিয়ে তুলেছি।ফুঁসিয়ে তুলা প্রকৃতিতে আবারও প্রানের সঞ্চার ঘটাতে, আবার তাকে সবুজের রঙ্গে রাঙ্গাতে বিজ্ঞানীদের মতে এক লাখ কোটি গাছ লাগাতে হবে।
আমাদের ধরিত্রীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নওগাঁর নিঃস্বার্থ গহের আলীর মতো আরো অনেক গহের আলীর দরকার তাই আসুন আমরা সবাই আমাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে বৃক্ষরোপনের অঙ্গীকার করি।যে বৃক্ষ আমাদের দেশকে বাঁচাবে, আমাদের বাঁচাবে,আমাদের সন্তানদের বাঁচাবে।
লেখকঃ
মোঃ মনির হোসেন
সহকারী শিক্ষক ( বিজ্ঞান)
ভীমখালী উচ্চ বিদ্যালয়