২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কালীগঞ্জে প্রসুতির মৃত্যু নিয়ে দুম্রজাল,ফেসে গেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

অভিযোগ
প্রকাশিত আগস্ট ২৫, ২০২২
কালীগঞ্জে প্রসুতির মৃত্যু নিয়ে দুম্রজাল,ফেসে গেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার:

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পথে স্বজনদের অবহেলায় শিরিন বেগম (৩২) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে দুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে ফেসে গেলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রসব বেদনা উঠার পর সংকটাপন্ন প্রসূতীকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরাঘুরি এবং একাধিক ডাক্তার রোগীকে ঢাকায় ও গাজীপুরে রেফার্ড করার পরও সেখানে না নিয়ে কালক্ষেপনের বিষয়টি নিয়ে জনমনে সন্দেহ বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শনিবার (২০ আগষ্ট) সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের গর্ভবতী স্ত্রী শিরিন বেগমের (৩২) সিজার করার জন্য তার স্বজনরা “সেন্ট মেরি’স ক্যাথলিক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার হাসপাতাল” এ নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষার পর রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। ঢাকায় না নিয়ে পরদিন ভোর ৫টায় প্রসব ব্যাথাসহ পুনরায় রোগীকে তার স্বামী ওই হাসপাতালেই নিয়ে গেলে ডাক্তার গর্ভের বাচ্চার বয়স পূর্ণ না হওয়ায় সিজার সম্ভব নয় বলে তাকে আবারো ঢাকায় রেফার্ড করেন। তারপরও সে প্রসূতীকে ঢাকায় না নিয়ে সকাল ৭টায় কালীগঞ্জ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তার না থাকায় কর্তৃপক্ষ প্রসূতীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলে সকাল সাড়ে ৭টায় তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানেও কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে গাইনী বিশেষজ্ঞের সাথে ফোনে কথা বলে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক একাধিক ডাক্তারের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে তার সংকটাপন্ন গর্ভবতী স্ত্রীকে কালীগঞ্জ জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। স্বজনদের অনুরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশনের জন্য ডাক্তার মাসুদকে ইনকলে নিয়ে আসেন। ডাক্তার মাসুদ প্রসূতীর অপারেশন করেন এবং একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। অপারেশনের পর রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে একব্যাগ এবি+ রক্ত পুশ করে ডাক্তার রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করেন। হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে প্রসূতী শিরিন আক্তার মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয়দের ধারণা, সংকটাপন্ন অবস্থায় প্রসূতীকে নিয়ে তার স্বামী স্বজনদের একাধিক হাসপাতালে ঘুরাঘুরি, ডাক্তারদের পরামর্শকে অবজ্ঞা, অবহেলা ও সময় কালক্ষেপণের কারণেই ঢাকায় নেওয়ার পথে প্রসূতীর মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে সেন্ট মেরি’স ক্যাথলিক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তপতী কস্তা প্রতিবেদককে জানান, শনিবার সন্ধ্যায় পানি ভাংগা অবস্থায় প্রসূতী শিরিনকে তার স্বজনরা অপারেশনের জন্য আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন। গর্ভের বাচ্চার বয়স ৩৫ সপ্তাহ হওয়ায় এবং ইনকিউভেটর না থাকায় আমরা রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করি। কিন্তু রোববার ভোরে প্রসব ব্যাথা নিয়ে পুনরায় প্রসূতীকে তার স্বামী হাসপাতালে এনে অপারেশন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। অপারেশনে ঝুঁকি থাকায় আমরা রোগীকে পুনরায় ঢাকায় রেফার্ড করি।
পরে এ বিষয়ে কালীগঞ্জ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, রোববার সকাল ৭টায় সংকটাপন্ন অবস্থায় গর্ভবতী শিরিনকে নিয়ে তার স্বামী আমাদের হাসপাতালে আসেন। ওই সময় রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে আমরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেই।
পরে এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাানজিদা পারভিন জানান, রোববার সকাল ৭.৩৫ মিনিটে প্রসূতী শিরিনকে তার স্বামী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসেন (সিরিয়াল নং ১৮৭৬)। আমি হাসপাতালে আসার পথে কর্তব্যরত ডাক্তার বিষয়টি আমাকে ফোনে জানান। আমি ডাক্তারের কাছে বিস্তারিত শুনে রোগীকে দ্রুত শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করার জন্য বললে ডাক্তার রোগীকে সেখানে রেফার্ড করেন।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30