২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ভূয়া সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ গাজীপুরবাসী

অভিযোগ
প্রকাশিত নভেম্বর ১০, ২০২১
ভূয়া সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ গাজীপুরবাসী

ভূয়া সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের
দৌরাত্মে অতিষ্ঠ গাজীপুরবাসী

 

নিজেস্ব প্রতিবেদক : গাজিপুর শহরের অলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে নাম সর্বস্ব ভূয়া পুলিশ, ভূয়া মানবাধিকার, আর ভূয়া সাংবাদিক সংগঠনদের দৌরাত্ম্য অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে চরমে পৌঁছেছে। যার মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ তিনি এক মহা সাংবাদিক যার নাম সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম। এই ভূয়া সাংবাদিক ও তার সংগঠনের কারনে মানবাধিকার শব্দটি আজ গাজিপুর এলাকায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথাকথিত এই সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠন গুলোর কারনে ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ সাংবাদিক ও মানবাধিকারের উপর থেকে তাদের আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। ভূয়া সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমের একটি চক্র জেল থেকে আসামী ছাড়ানো এবং নির্যাতিত মানুষকে আইনী সহায়তা প্রদানের নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় খুলে বসেছে তৃনমূল সাংবাদিক কল্যান পরিষদ নামের দোকান।পাশাপাশি গাজিপুর শহর জুড়ে চলছে তাদের কার্ড বাণিজ্য। যাদের সাংবাদিকতা ও মানবাধিকার সম্বন্ধে নূন্যতম জ্ঞানও নেই তাদের হাতে মাত্র ১ হাজার টাকার বিনিময়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে সাংবাদিক কর্মীর আইডি কার্ড। তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে থানা কমিটি এবং ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে জেলা কমিটি গঠনের অনুমোদনও দেয়া হচ্ছে। ভূয়া সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম ও তার সিন্ডিকেট ব্যাঙের ছাতার মতো গাজিপুর শহরে খুলে বসেছে শাখা প্রশাখা। গাজীপুরে এমনও অনেক সংগঠন আছে যারা সরকারের কোন সংস্থারই অনুমোদন না নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু মাত্র প্রেস লেখা আইডি কার্ড কেনাবেচাই যাদের মূল পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভূঁইফোড় এই সংগঠনের মূলহোতা জাহাঙ্গীর আলমের সংগঠনে কাজ করে মাদক বিক্রেতা, ঝাড়ুদার, রোগীর দালাল, লঞ্চের দালাল, পতিতার দালাল, মুরগী আর পান ব্যবসায়ী, পেশাদার ছিনতাইকারীরা নামের আগে পিছে বসাচ্ছে সাংবাদিক। নিজের নাম লিখতে কলম ভাঙ্গে, সাংবাদিক বলতে গেলে উচ্চারণ করে বসে সামবাদিক, নিজের সংগঠনটির নাম পর্যন্ত বলতে পারে না-তারাই রাতারাতি মানবাধিকার-সাংবাদিক সংগঠনের নেতা বনে গেছেন। ভূয়া সাংবাদিকদের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে খোদ পুলিশেরও অনেকটা ভুমিকা রয়েছে। কারণ, পুলিশের সঙ্গেই ওইসব ভূয়া ও নামধারী সাংবাদিকদের বেশি সখ্যতা। প্রতারক জাহাঙ্গীর আলম নামের এই সাংবাদিক নিজের ফেসবুক আই ডি তে গাজিপুর সিটি করপোরেশনের আলোচিত মেয়র এ্যড,জাহাঙ্গীর আলমের একটি ফেষ্টুন প্রোফাইল জুরে দিয়ে নিজেকে ক্ষমতাশীল সাংবাদিক পরিচয় দেয় দাপটের সাথে। তার সহচরদ্বয় প্রায়ই থানার ভিতরে দারোগাদের সাথে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডাবাজিতে মত্ত থাকে। ‘দালাল’ হিসেবে ঘুষ বাণিজ্যে সরাসরি সহায়তা করে, পুলিশের ‘সোর্স’ হিসেবেও তারা বিশ্বস্থ! গাজিপুর শহরে এদের মত ‘ভুয়া মানবাধিকার কর্মি আর ভূয়া সাংবাদিক’দের দৌরাত্ম্য অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে চরমে পৌঁছেছে। এই ভুয়া সাংবাদিক নিজে বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ পেতে স্বাস্থ্য সেবার নামে ডক্টর’স চেম্বার খুলে বসেছে এবং তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন ও সাংবাদিক সংগঠন এর সদস্য-সমর্থকরা নিজেদেরকে ‘মানবাধিকার সাংবাদিক’ পরিচয় দিয়ে নিরীহ লোকজনকে নানাভাবে হয়রানি করছে বলেও এন্তার অভিযোগ উঠেছে। নামধারী ভূয়া সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে চ্যানেল এইচ টিভি নামের একটি অনলাইন পোর্টাল খুলে সাংবাদিক পরিচয়ে কৌশলে করছে নানা প্রতারণা। এরা নানা অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ছে। এই চক্রে বিতর্কিত লোকজন সহ নারী সদস্যও থাকেন। এরা মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে ‘প্রেস’ কিংবা ‘সংবাদপত্র’ লিখে পুলিশের সামনে দিয়েই নির্বিঘ্নে দাপিয়ে বেড়ায়। এদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনও থাকে চোরাই এবং সম্পূর্ণ কাগজপত্রবিহীন। ভূয়া সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম ও তার কথিত সংগঠনের কর্মিদের নানা অপকর্মের কারণে প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আর বর্তমানে ‘তাদের ফেসবুকে’ চোখ রাখলেতো কোন কথাই নেই সাংবাদিক আর মানবাধিকার নেতার অভাব নেই। এতে করে পেশাদার সাংবাদিকরা আজ নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেন। ভূয়া সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমের প্রতারণার জাল কোনো এক ছড়াকার টিটকারির সুরেই ছন্দ মিলিয়ে লিখেছেন- ‘হঠাৎ করে এই শহরে এলো যে এক সাংবাদিক, কথায় কথায় তোলে ছবি ভাবখানা তার সাংঘাতিক। তিলকে সে তাল বানায় -তালকে আবার তিল, চড়ুইকে সে পেঁচা বানায় কাককে বানায় চিল।
পুলিশ দেখে মুখ লুকিয়ে পালায় দিগ্বিদিক, সবাই বলে লোকটা নাকি ভূয়া সাংবাদিক।’
পেশাদার সম্মানিত সাংবাদিকদের জন্য বিষয়টি লজ্জাকর হলেও ছড়া ছন্দের মত জাহাঙ্গীর আলমের মত ভূয়া সাংবাদিকরা শহর জুড়ে বেহাল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ফেলেছে। সাংবাদিকদের মতো বেশভূষায় সেজেগুজে একশ্রেণীর প্রতারক অলিগলি, হাট-বাজার চষে বেড়াচ্ছেন। পান থেকে চুন খসলেই রীতিমত বাহিনী নিয়ে হামলে পড়ছেন সেখানে। প্রকৃত ঘটনা কি-সে ঘটনার আদৌ কোনো সংবাদের গ্রহনযোগ্যতা আছে কি না, সেসব ভেবে দেখার সময় তাদের নেই। তাদের দরকার নিজেদের প্রভাব দেখিয়ে, আতঙ্ক ছড়িয়ে অর্থ কামিয়ে নেয়া। টাকা পকেটে না আসা পর্যন্ত চিল্লাপাল্লা, হুমকি, ভীতি প্রদর্শনের সব কান্ডই ঘটিয়ে থাকেন তারা। গাজিপুর শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত পল্লীর সাধারণ বাসিন্দারা পর্যন্ত কথিত সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমের মত কার্ডধারী ভূয়াদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। পেটে বোমা ফাটালেও দু’ লাইন লেখার যোগ্যতাহীন টাউট এই বাটপারের দল চাঁদাবাজিতে মত্ব থাকেন। এদের মত ভূয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্য নতুন নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। সাংবাদিকতা যে মহান পেশা সকল শ্রেণী-পর্যায়ের ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম, বিভ্রান্তি, অসঙ্গতির বিস্তারিত তুলে ধরে, এখন সে পেশার নাম ভাঙ্গিয়েই চলছে ভয়ংকর ফাঁকিবাজী, চাঁদাবাজি, জোর-জুলুমের হাজারো কারবার। গাজিপুরে এহেন কারা অপকর্মটি করছেন অনেকেরই তা জানা আছে। জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিক না হয়েও সাংবাদিকতার বেশভূষা তার মূল পুঁজি। খ্যাত-অখ্যাত একাধিক গণমাধ্যমের ৪/৫টি আইডি কার্ড বুকে পিঠে ঝুলিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় সে সর্বত্র। জাহাঙ্গীর আলম যারা পেশাদার সাংবাদিক তাদের কারো না কারো সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে সাইনবোর্ড হিসেবেও ব্যবহার করে । সম্ভব হলে সাংবাদিকদের কোনো সংগঠনে নিজের নামটা লিখিয়ে নেয়, তা না হলে নিজেরাই ‘সাংবাদিক’ ‘রিপোর্টার’ ‘প্রেসক্লাব’ শব্দ যোগ করে ভূইফোঁড় কোনো সংগঠন খুলে বসে। প্রয়োজনে টাকা-পয়সা খরচ করে রেজিস্ট্রেশনও করিয়ে নিতেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পেশাজীবী সংগঠন গড়তে, বৈধতা পেতে যেহেতু আলাদা কোনো নিয়ম কানুনের দরকার পড়ে না। সেই সুযোগে তাদের বুলি থাকে অন্যরকম-“আমি সাংবাদিক কি না সেটা আপনার জানার দরকার নাই, আমি সাংবাদিকদের প্রেসিডেন্ট। আমি সাংবাদিক বানাই, আমার স্বাক্ষরে আইডি কার্ড দেই- আমার পরিচয় আলাদাভাবে দেয়ার কি আছে? ভূয়াদের এতোসব সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ও কথিত ক্লাব-ইউনিটির দাপ্তরিক প্রতারণার ধকলে নানাভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মানুষজন। এদের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে মহান সাংবাদিকতার পবিত্র পেশাটিও। গাজিপুর বোর্ড বাজার এলাকায় আইন সহায়তা প্রদানের নামে জাহাঙ্গীর আলমের গড়ে তোলা কথিত এই তৃনমুল সাংবাদিক কল্যান পরিষদ ১ হাজার টাকায় তাদের সদস্যপদ বিক্রি করছে। কোন থানা কমিটি করতে আগ্রহীদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা এবং জেলা কমিটির জন্য ১০ হাজার টাকা ফি আদায় করে নেয়। শর্ত দেওয়া হয়, সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে কোন টাকা আয় হলে তা আলোচনার মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। আজীবন সদস্য হতে হলে দিতে হবে অন্তত ১০ হাজার টাকা। সংগঠনের কোন সদস্য সাংবাদিক হতে চাইলে ‘সাংবাদিক কার্ড’ বাবদ তাকে দিতে হবে আলাদা টাকা। শুধু এই সংগঠনই নয়, এভাবে সাধারন মানুষের সঙ্গে মানবাধিকারের নামে প্রতারনা করছে দেড় শতাধিক তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন। একই ভাবে মানবাধিকার ও পরিবেশ সাংবাদিক সোসাইটি নামেও আরেকটি সংগঠন সদস্যদের ‘মানবাধিকার সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচয়পত্র দেওয়ার নাম করে এক হাজার টাকা এবং বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন করে আঞ্চলিক পরিচালক, সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদের জন্য ৩ হাজার টাকা করে আদায় করছে। ভূয়া সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমের এহেন কর্মকান্ডের উপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রস্তুতের নিমিত্তে গত কয়েকদিন গাজিপুর শহরের থানা প্রাঙ্গন গুলোতে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরেজমিনকালে অনুসন্ধান কালে এক হতাশাব্যঞ্জক চিত্রই বেরিয়ে আসে। ভূয়া সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম সমাজের উচ্চবিত্ত ভদ্রপরিবারে প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তিদের হয়রানি করার লক্ষ্য নিয়ে ফোনে নিউজ প্রকাশ করার হুমকিতে ব্লাক মেইল করা সহ চাঁদাদাবী করে। নিকৃষ্ট জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জৈনিকা মহিলা জানান তাকে সাংবাদিক বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক্য গড়ে তুলে দিনের পর দিন ভোগ করে। এছাড়া গাজিপুরের গাছা থানা এলাকায় বসবাসরত এক গার্মেন্টকর্মীর সাথে স্বামী স্ত্রী কতৃক ভূল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দিবে বলে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বার করিয়ে কায়দায় ফেলে ধাপে ধাপে অর্থ আদায় করা সহ অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত করে তার সাথেও অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। বিভিন্ন নামের হরেক আকৃতির পত্রিকা আর মানবাধিকার সংগঠনের ‘সাংবাদিক কার্ডধারীরা’ থানা-পুলিশের দালালি ও তদবির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেকে আইডি কার্ড ঝুলিয়ে প্রকাশ্যেই পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি’র সোর্সের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। সংগঠনগুলো থেকে দেয়া আইডি কার্ডসমূহে ‘মানবাধিকার লংঘন সংক্রান্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা’ ফিল্ড অফিসার, জোনাল অফিসার (ইনভেস্টিগেশন), থানা কমিটির সেক্রেটারী, মহানগর কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, কো-অর্ডিনেটর, পরিচালক ইত্যাদি পদবী লেখা থাকে। সন্ধ্যার পর একেকটি থানা চত্বরে, আশপাশের চা দোকানে, দারোগাদের টেবিলে টেবিলে ১৫/২০ জন কথিত সাংবাদিক ও তথাকথিত মানবাধিকার কর্মির জটলা থাকে। থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ ষ্টেশন কেন্দ্রিক তথাকথিত সাংবাদিক আর মানবাধিকার তদন্ত কর্মকর্তার সংখ্যা কত-তা হিসেব কষে বলা মুশকিলই বটে। থানায় থানায় গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ কেন্দ্রিক কি কাজ তাদের এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান চলমান।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30