২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

ইয়াবার নতুন রাস্তা সীমান্তবর্তী নাইক্ষংছড়ির পাহাড়ি এলাকা

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২, ২০২১
ইয়াবার নতুন রাস্তা সীমান্তবর্তী নাইক্ষংছড়ির পাহাড়ি এলাকা

ইয়াবার নতুন রাস্তা সীমান্তবর্তী নাইক্ষংছড়ির পাহাড়ি এলাকা

স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার :বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোটো বড়ো অসংখ্য কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি ইয়াবার চালান ঠেলে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশেে। শক্তিশালী মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটের হাত হয়ে এসব নেশাদ্রব্য চলে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় এখন ইয়াবা মিলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উখিয়া টেকনাফ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক নজরদারির কারণে পাহাড়ি পথকে নিরাপদ মনে করছে পাচারকারিরা। তাছাড়া উখিয়া-টেকনাফ এখন অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা শান্ত। আর এই সুযোগে নাইক্ষ্যংছড়িতে ইয়াবা পাচার বেড়ে গেছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে সড়ক পথের মতো পাহাড়ি পথে নজরদারি জোরদার করা সম্ভব হচ্ছে না! পুলিশের উপস্থিতি বুঝে সড়ক পথের পাশাপাশি পাহাড়ি পথে ইয়াবার চালান ঠেকাতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে ইয়াবা পাচারকারীর চক্র।

ইয়াবা চোরাচালানের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান চালাচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ। এক পরিসংখ্যান দেখেই দেশে ইয়াবা অনুপ্রবেশের হার কী পরিমাণ বেড়েছে তা সহজে অনুমেয়। নাইক্ষ্যংছড়িতে ছোটো চালানে শুরু হওয়া সেই ইয়াবা এখন লক্ষ পিসে চালান হয়। চালান যাচ্ছে দেশের আনাচে–কানাচে । বর্তমানে শুধু পাড়ায় পাড়ায় নয়, প্রায় ঘরে ঘরেই ইয়াবা। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা যেন গিলে খাচ্ছে পুরো দেশ। সমাজের উচ্চ শ্রেণি থেকে নিম্ন শ্রেণি পর্যন্ত এমন কোনো পেশা নেই, যেখানে ইয়াবা গ্রাস করেনি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খোদ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তারাও ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ছেন। ইয়াবা নিয়ে সারা দেশের কলঙ্কিত নাম কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পরই স্থান করে নিয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি।

নাইক্ষ্যংছড়ির এই ইয়াবা ব্যবসা যেসব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বা সিন্ডিকেটের যোগাযোগ ও পুলিশের হাতে আটককৃত প্রতিটি ইয়াবা চালান, স্বর্ণ চালানের সাথে বাংলাদেশে অবস্থানরত নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গারা জড়িত। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বিদেশি মাফিয়া চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। আবার টেকনাফ-কক্সবাজারের গডফাদারদের মধ্যে বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। তারা ইয়াবা চালানের সাথে অনেক বেশি ধরা পড়েছে। মোট কথা, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পর থেকে, তাদের হাতে ইয়াবা ব্যবসা চলছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গেলো তিন মাস তথা জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ২৪টি মামলা করা হয়েছে ইয়াবা কারবারীদের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা আনুমানিক ৬০ জন। ৫ লক্ষ ৬২ হাজারের উপরে ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। তার মধ্যে আগস্ট মাসে ৪ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়।

উল্লেখ্য, গত তিন মাসে ইয়াবার সাথে সাথে স্বর্ণ, সোলাই মদ এবং বিয়ারও উদ্ধার করছে পুলিশ। ১৩ জুনে ঘুমধুম তুমব্রু থেকে ৫০০ মিলি ৪০ ক্যান বিয়ারসহ ২ জন আটক হয় ও সাথে একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সা জব্দ করা হয়। ২১ জুন ঘুমধুমের বেতবুনিয়া বাজার থেকে ৪২ ভরি ওজনের ৩টি স্বর্ণের বারসহ এক রোহিঙ্গা নাগরিক আটক হয়। সর্বশেষ, ৩১ আগস্ট বাইশারি থেকে ১১০ লিটার দেশীয় চোলাই মদসহ ৪ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়। মদ বহন করা একটি সিএনজিও জব্দ করা হয়।

গত তিন মাসের প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে, নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ইয়াবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদকসহ আটক হচ্ছে নিয়মিত। অনেকেরই সাজা হয়ে কারাগারে আছে। আবার অনেকেই জামিনে বেরিয়ে পুনরায় ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। তাদেরও কাউকে কাউকে ফের গ্রেফতার করা হয়েছে । যারা বড়ো কারবারী তারা এলাকায় থাকে না। প্রতিদিনই নতুন নতুন মাদক কারবারী তৈরি হচ্ছে, ধরাও পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, গত ৩ মাসে সবচেয়ে বড়ো চালান ও বেশি ইয়াবা আটক করা হয়। ৩ মাসে ৫ লাখ ৬২ হাজারের বেশি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। যাতে জড়িতদের আদালতে সাজা হয়, সে ব্যাপারে কঠোরভাবে কাজ করে যাচ্ছি। শুধু ইয়াবা না, যেকোনো মাদক বিক্রেতা, মাদক কারবারে অর্থ লগ্নিকারী, পৃষ্ঠপোষক, সংরক্ষক, বহনকারী, খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলবে এবং মাদক নির্মূল করা হবে। এদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার আওতাধীন প্রতিটি পুলিশ সদস্য মাদকের বিরুদ্ধে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণুতা) দেখানো হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্ত করে ফৌজদারি আইনে মামলা করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শুধু প্রশাসনিক ভাবে ইয়াবা বা মাদক বন্ধ সম্ভব নয়। সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে মাদক বন্ধের সুফল পাওয়া যাবে।

Please Share This Post in Your Social Media
March 2024
T W T F S S M
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031