২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সুবর্ণ সুযোগের অভাবে থেমে আছেন সুন্দরগঞ্জের বাউল একরামুল

admin
প্রকাশিত জুলাই ১৩, ২০২১
সুবর্ণ সুযোগের অভাবে থেমে আছেন সুন্দরগঞ্জের বাউল একরামুল

Sharing is caring!

সুবর্ণ সুযোগের অভাবে থেমে আছেন সুন্দরগঞ্জের বাউল একরামুল

মো: আ: রহমান শিপন, রংপুর বিভাগীয় ব‍্যুরো প্রধান

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে চরাঞ্চলের বেলকা গ্রামে স্ত্রীসহ একই পরিবারের তিন ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন বাউল একরামুল হক লাল মিয়া। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও বাউল একরামুল হক বলেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে যত দূঃখ কষ্ট হোক না কেন সেটা আমি হাসিমুখে বরণ করে নিতে শিখেছি। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টের জায়গা হলো আমার দীর্ঘদিনের সঙ্গীত জীবনে সঠিক মূল্যায়ন পায়নি। আমার সপ্ন ছিল শিল্পী হিসেবে আমার একটা সুনাম থাকবে সারা দেশব্যাপী কিন্তু সে সুযোগ হয়তো আর কখনো বাস্তুবে পরিণত হবেনা। আমি ব্যক্তি গত জীবনে বহুবার চেষ্টা করে গেছি নিজেকে মেলে ধরার জন্য অথচ সব জায়গায় বড় ধরনের ধাক্কা পেয়েছি পেয়েছি অবহেলা পায়নি একটা সুযোগ।

সরেজমিনে একরামুল হকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, দুটি টিনের নড়বড়ে ভাঙা ঘরেই থাকেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। বাউল একরামুল হকের বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা বলেন, একরামুল হক সত্যিকার অর্থে একজন বাউল যে মানুষটি কারো লেখা গান গায় না সে নিজেই গান লেখেন, নিজেই সুরকার নিজেই গান গায়। অথচ সেই মানুষটি ভালো একটা সুযোগ না পাওয়ার কারণে নিজের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারছেনা। বাউলের অদম্য মেধাশক্তি থাকলেও সে সুযোগ না পাওয়ার অভাবে সারাদেশের মানুষের কাছে নিজেকে মেলা ধরতে পারছেনা।পারছেনা তার গানের ভাষাগুলো শোনাতে সঙ্গীত প্রেমিদের মাঝে। স্থানীয়রা আরো বলেন,সরকার ও স্থানীয় পর্যায়ে যদি বাউল একরামুল কে একবার সুযোগ দিত তাহলে সে নিজের কাজের যোগ্যতার মাধ্যমে সঙ্গীত জীবনে নিজ নামের পরিচয়টা সবার কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হত।তারা বলেন, বাউল একরামুল হক নিজের কষ্ট নিজের কাছেই পুষতে ভালোবাসেন সে শত কষ্ট থাকলেও অন্যের কাছে হাত পাতা দূরে থাক কাউকে বুঝতে দেয়না। তবে বাউলে কষ্টের জায়গা হলো সঙ্গীত জগতে যেতে চান বহূদূর কিন্তু সঠিক কোন সুযোগ না মেলায় গ্রামের প্রতিভার মূল্য যেন অবহেলার চাদঁরে ছেয়ে গেছে।আমরা চাই আমাদের গ্রামের মেধাবী সন্তান বাউল একরামুল হকের লেখা গানগুলো সংরক্ষণ করা হোক এবং তাকে শিল্প হিসেবে সঙ্গীত জগতে মেলে ধরার সুযোগ দেওয়া হোক এ দাবি স্থানীয় সাংসদ ও সরকার প্রধানের কাছে।

বাউল একরামুল হকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক পেশা, অনেক ব্যক্তিত্ব ও অনেক চরিত্রের মানুষ রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা বৈচিত্র্যপূর্ণ। লাল-বেগুনির মতো নয়, নীল-হলুদের মতো নয়, তবে সব রং মিলেই রংধনু হয়। ঠিক তেমনি নিজের জীবন নিজের নকশায় সাজাতে হয়। জীবনটা নিজের ঘরের মতো, তাতে নিজের পছন্দের জিনিসগুলো জায়গা পায়।যেমনটা যে ফুল পছন্দের সেই ফুল ফুলদানিতে থাকবে। যে পোশাক পছন্দ সেগুলো আলনায় থাকবে। যে মানুষ পছন্দ সেই জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী হবে।

জীবনটা একই রকম নিজের পছন্দ ও মূল্যবোধ অনুযায়ী চলবে। তবে নিজের মূল্যবোধ মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। মানুষ বিভিন্নভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। কেউ জোরে হাসে, কেউ নাচে। মানুষ দুঃখ প্রকাশ করে বিভিন্ন ভাবে। কেউ জোরে কাঁদে, কেউ নীরব গম্ভীর হয়ে যায়। যার যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ আসে, সেটাই থাকবে ঠিক তেমনটা আমি একরামুল হক আমার জীবনে নেশা ও পেশা হিসেবে সঙ্গীত /শিল্পচর্চা বেচে নিয়েছি।আমি ১৯৯৪সালে সঙ্গীত জগতে আসি তারপর থেকে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি, চরাই-উতরাই পার করে আসছি এমনকি বর্তমানেও হাজারো বাধার সম্মুখীন হতে হয়।আমার বাউলিয়ানা জীবন দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও আমি আমাকে সবার মাঝে মেলে ধরার মত কোন সুযোগ পায়নি পেয়েছি অবহেলা আর বাধা।তবুও নিজের জীবনের শেষ একটি আশা আমার স্থানীয়ভাবে হোক কিংবা সরকারের সহযোগীতার মাধ্যমে হোক একটা সুযোগ দিলে আমি নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করতাম। বাউল বলেন, সঙ্গীত জীবনের এই ২৫ বছরে,বঙ্গবন্ধুর জীবনি নিয়ে ১০০গান,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজের উপর ১০০ গান,ভাওয়াইয়া ১০০গান,পল্লিগীতি, লালনগীতি প্রায় ৩০০ গান,তিস্তার ভাঙ্গন, বাস্তববাদী, করোনার সহ ১০০গান, গানে গানে গাইবান্ধা জেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রায় আমি তিন হাজার গান লিখেছি আমি চাই আমার লেখা গানগুলো কে ন্যায় বাচবিচারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হোক। এছাড়াও বাউল একরামুল চান একটা সপ্নের বাউল একাডেমী গড়তে কিন্তু কথায় আছেনা সাধ আছে তো তার সাধ্য নেই। সেজন্যই বাউল একরামুল আগে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ চান তারপরেই কারো সহযোগীতার হাত পেলে হাটতে চান নিজের বুনা সপ্ন কে বাস্তবায়ন করতে।পরিশেষে বাউল একরামুল হক একটি কথা বলেন,মানুষ নিজের মতো করে বাঁচতে না পারলে সুখী হতে পারে না। এ কারণে বিখ্যাত তারকারা সবচেয়ে অসুখী। তারকাদের দর্শকদের পছন্দের জীবনযাপন করতে হয়। দর্শক যাতে হাততালি দেয় তাই করতে হয়। অন্যের চুল মাথায় দিয়ে, অন্যের নির্দেশনায় চলে তারকাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অনেকে মাদকাসক্ত হন, কেউ বা আত্মহত্যাও করেন কিন্তু আমি বাউল সুযোগ না পেয়ে হয়তোবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দূঃখী একজন মানুষ।সুযোগ না পাওয়ার ব্যাথা,বেদনা আর দূঃখ করেছে আমায় পাথরের থেকে বেশি শক্তিশালী।

এ বিষয়ে বাউল একরামুল হকের সহধর্মিণী ছালেহা খাতুন বলেন,আমার স্বামী দীর্ঘদিন থেকে গান গায় শুধু গানই গায়না সে নিজেই গান লেখে, গানের সুর দেয়।এমনকি আমার চার সন্তানদের ও গানের জগতে রেখেছেন তিনি।গড়িয়েছেন তার মনের মত করে বাউল শিল্পী হিসেবে। আমার স্বামীর প্রত্যেকটি কাজেই সহযোগীতা করি এবং আমি নিজেও গান ভালোবাসি।

উল্লেখ্য, বাউল একরামুল হক শুধু নিজেই গান করেন না তিনি হাজারো দূঃখ কষ্টের মাঝে গড়িয়েছেন বাউল পরিবার। বাউল তার তিন ছেলে ও এক মেয়েকেও গড়িয়েছেন বাউল হিসেবে তার ইচ্ছে তার সন্তানরাও সঙ্গীত ভালোবাসুক সঙ্গীত কে বুকে আগলে রাখুক।