৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কুষ্টিয়া চিনিকলের সাবেক এমডির দুর্নীতির অভিযোগে ৩য় গ্রেড থেকে ৪র্থ গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে

অভিযোগ
প্রকাশিত জুন ১০, ২০২১
কুষ্টিয়া চিনিকলের সাবেক এমডির দুর্নীতির অভিযোগে ৩য় গ্রেড থেকে ৪র্থ গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে

 

কুষ্টিয়া চিনিকলের সাবেক এমডির
দুর্নীতির অভিযোগে ৩য় গ্রেড থেকে ৪র্থ গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে

সুমাইয়া আক্তার শিখা স্টাফ রিপোর্টার

সিবিএ নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় কুষ্টিয়া চিনিকলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম সারওয়ার মুর্শেদের পদাবনতি হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে এ শাস্তি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া চিনিকলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুর রহমান খান।

তাকে তৃতীয় গ্রেড থেকে চতুর্থ গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি প্রধান কার্যালয়ের প্রধান সিপিই পদে কর্মরত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব আরিফুর রহমান অপু স্বাক্ষরিত এক আদেশে উল্লেখ করা হয়।

কুষ্টিয়া চিনিকলের অভিযুক্ত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার মুর্শেদকে ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রধান কার্যালয়ের প্রধান সিপিই পদে বদলি করা হয়েছিল। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে পরে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।

তিনি বর্তমান পদ থেকে ২৫ জুন অবসর গ্রহণ করবেন। শাস্তি হিসেবে তাকে ৩য় গ্রেড থেকে ৪র্থ গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে তিনি অবসরকালীন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়।
চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ গোলাম সারওয়ারের বিরুদ্ধে চিনিকলের গ্র্যাচুইটি ও মালামাল সরবরাহকারীর বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধিবহির্ভূতভাবে রেজুলেশন করে ৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙানো, চিনিকলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, নিয়ম ভেঙে পিএফ ফান্ডের সদস্যদের মুনাফার টাকা চিনি ব্যবসায়ীদের প্রদান, মিলের অবসরপ্রাপ্তদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ প্রদানকালে ১৩ শতাংশ হারে ঘুষ আদায়সহ আরও কিছু অপরাধ প্রমাণিত হয়।

কয়েক মাস আগে কুষ্টিয়া সুগার মিলের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হলে দুদকের একটি দল মিলে অভিযান চালিয়ে সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেনকে আটক করে। এ সময় বাকিরা গা ঢাকা দেয়।

এদিকে করপোরেশনের চিফ অব পার্সোনাল মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে গুরুতর অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মিলের সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চলমান বিভাগীয় মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে অবহিত করার জন্য মিলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কুষ্টিয়া চিনিকল দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে একেবারেই ধ্বংসের মুখে পড়ে। ২০২০ সালে অক্টোবরের প্রথমদিকে মিলের বিক্রির লসের টাকা সমন্বয়ের নামে শ্রমিক ও কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

এছাড়া মিলের ৬০ টাকা কেজি দরে প্রায় ৩ কোটি টাকার চিনি ফ্রি সেলে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করা হয়। এতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়ে কুষ্টিয়া সুগার মিল। লোকসানের ওই টাকা সমন্বয়ের নামে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ও বেতন থেকে টাকা কর্তন করে নিজেরা ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয়।

আরও জানা যায়, ২০১৬ সালে মিলের স্থায়ী শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৫ কোটি টাকা ৫ বছর মেয়াদি জাতীয় সঞ্চয়পত্র কেনা হয়। একই দিনে মৌসুমি শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৫০ লাখ টাকার একই সঞ্চয়পত্র কেনা হয়। ২০১৮ সালে স্থায়ী শ্রমিকদের ৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্রের মধ্যে ১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ১ কোটি টাকার কোনো লভ্যাংশ না দিয়ে নিজেরা ভাগ করে নেয়।

কুষ্টিয়া চিনিকলের প্রভিডেন্ট ফান্ড দুর্নীতির সঙ্গে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, সহসভাপতি সুমন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিক হাসান সাগর ও নির্বাহী সদস্য আবুল কাশেমের জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে কুষ্টিয়া চিনিকলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুর রহমান খান বলেন, প্রধান দফতরের আদেশের কপি আমরা হাতে পেয়েছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খুব দ্রুত মিলের দোষী শ্রমিক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়া চিনিকলের অভিযুক্ত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার মুর্শেদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031