৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

‘জমি খেকো’ জিল্লুরের কাছে জিম্মি ৫ গ্রামের মানুষ

অভিযোগ
প্রকাশিত এপ্রিল ২৫, ২০২১
‘জমি খেকো’ জিল্লুরের কাছে জিম্মি ৫ গ্রামের মানুষ

‘জমি খেকো’ জিল্লুরের কাছে জিম্মি ৫ গ্রামের মানুষ

 

 

মোঃ আরিফ হোসেন,চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধানঃ-

‘জমি খেকো’ জিল্লুরের প্রতারণার শিকার অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ। জিল্লুর রহিম (ইনসার্টে)

শিক্ষা মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়। আর অশিক্ষিতরা পদে পদে বিপদে পড়ে। ঠিক তেমনি বিপদে পড়েছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ৫ গ্রামের শতাধিক পরিবার।

জমিসংক্রান্ত কাগজপত্রে অভিজ্ঞতা থাকায় জিল্লুর রহিম নামে এক ব্যক্তির প্রতারণায় ওই পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

তার বিরুদ্ধে কথা বললেই ভুক্তভোগীকে হামলার শিকার হতে হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে জিল্লুর ‘জমি খেকো’ হিসেবে পরিচিত। অভিযুক্ত জিল্লুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমটুয়া গ্রামের বসিন্দা।

প্রতারণা করে অসহায় মানুষের হাজার একর জমি জিল্লুর নিজ স্ত্রী ফাতেমা বেগম, মা ও ভাইদের নামে রেকর্ড করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

কমলনগর উপজেলার থেকে আসা মেঘনা নদী ভাঙনকবলিত কয়েকটি পরিবারের কাছে তিনি ভুয়া দলিল দিয়ে জমি বিক্রি করেছেন। কয়েক বছর পরই ওই জমিগুলো নিজের জমি বলে দাবি করে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে অসহায় পরিবারগুলোকে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জের চরমটুয়া গ্রাম ও কুশাখালীর ফরাশগঞ্জ গ্রামে গেলে অর্ধশতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষ জিল্লুরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে চরমটুয়া ও ফরাশগঞ্জ গ্রামে সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর নারী-পুরুষরা জড়ো হতে থাকে। সবাই নিজেদের জমি প্রতারণা করে নিয়ে যাওয়ার বিষয় প্রতিবেদকের কাছে উপস্থাপন করে।

এ সময় চরমটুয়া গ্রামের মারজাহান বেগম, নাজমা বেগম, ফাতেমা বেগম, আবুল কালাম, ফারুক হোসেন, নুরুল হুদা, আবদুস শহীদ, আবুল কালাম, মহিন উদ্দিনসহ প্রায় ২০ জনের সঙ্গে কথা হয়।

এরমধ্যে ফাতেমা বেগমের প্রায় ২০ শতাংশ জমি, নুরুল হুদার ৬০ শতাংশ, আবুল কালামের ২ একর ৪০ শতাংশসহ অভিযোগকারী সবার জমি প্রতারণা করে জিল্লুর নিজ ও আত্মীয়দের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন।

মারজাহান ও নাজমা বেগম নদী ভাঙনকবলিত পরিবার। কয়েক বছর আগে তারা প্রায় ৪০ শতাংশ জমি কিনে ফরাশগঞ্জে আসে। ওই জমিগুলো জিল্লুর তাদের কাছে বিক্রি করে। কিন্তু সম্প্রতি জিল্লুর ওই জমি নিজের বলে দাবি করছেন।

কুশাখালীর ফরাশগঞ্জ, কুশাখালী, নলডগী গ্রাম ও তেওয়ারীগঞ্জের চরমটুয়া, আন্ধারমানিক গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি জিল্লুরের প্রতারণা শিকার হয়ে জমি হারিয়ে শোকে মারা গেছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

জিল্লুরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় গত ১৯ এপ্রিল মহিন উদ্দিন নামে এক যুবককে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় মহিন চন্দ্রগঞ্জ থানায় জিল্লুরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মো. সুমন জানান, ২৪ বছর আগে তাদের কাছে জিল্লুর ৪০ শতাংশ জমি বিক্রি করেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাদের নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি। জমি রেজিস্ট্রি করার কথা বললে জিল্লুর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।

ফরাশগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল হুদা বলেন, আমাদের ৬০ শতাংশ জমি জিল্লুর ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নিজের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। জমিগুলো আমাদের নামে রেকর্ড করতে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতারণা করে ৫ গ্রামের অনেক মানুষের জমি নিজের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। অসহায় মানুষ সব হারিয়ে জিল্লুরের ওপর ফুঁসে উঠেছেন। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা
করা হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জিল্লুর রহিমের চরমটুয়া গ্রামের বাড়িতে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি সটকে পড়েন। তার বাড়ির লোকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে রূঢ়ভাবে আচরণ করেন।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল থেকে রোববার (২৫ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত তার মোবাইলফোন নম্বারে কয়েকবার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হুছাঈন বলেন, জিল্লুরের বিরুদ্ধে জমিসংক্রান্ত কয়েকটি অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি সবাইকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করতে বলেছি।

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার এইচএম কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি কেউ আমাদের জানায়নি। ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031