২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

“অসমাপ্ত ভালবাসা” – লেখক : শামীম ইসলাম

admin
প্রকাশিত এপ্রিল ২৪, ২০২১
“অসমাপ্ত ভালবাসা” – লেখক : শামীম ইসলাম

Sharing is caring!

“অসমাপ্ত ভালবাসা” (পর্ব -১)

 

লেখক : শামীম ইসলাম

বিকেলটা ভালোই মিষ্টি ছিল। বৈশাখের প্রথম দিন সময় বিকাল ৫ টা পশ্চিমা আকাশে ভানু রক্তিম ললাটে হয়েছে। আকাশে কালো মেঘ জমতে শুরু হয়েছে। পশ্চিমে গর্জন শুনা যাচ্ছে হঠাৎ মনে হলো কাল বৈশাখের ঝড় আসবে।

মাত্র কয়েক মিনিটেই আকাশের ভানু যেন হারিয়ে গেল কালো মেঘের আরালে। হঠাৎ আমার পাশে একটা মেয়ে। লম্বা কালো কেশ, হরিণের মতো ঐ চোখ, মায়াবী ওই হাসি।

আমাকে পাগল করে দিল। আমি ভয়ে ভয়ে সামনে এক পা দুই পা করে এগিয়ে গেলাম। হঠাৎ ময়েটা এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল ভাইয়া আমাকে একটু মোল্লা বাড়িটা দেখিয়ে দিবেন।

আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুখন। তার পর বললাম হ্যাঁ চলুন।

রাস্তায় লোকজন ছিল অনেক কিন্তু সবাই ব্যাস্ত ছিল নিজ নিজ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য।

ভয় ভয় করে বললাম আপনার নাম টা?
মেয়েটি বলল- আমি লাবণ্য আক্তার মিমি। আপনার নাম টা ভাইয়া?

আমি একটু রাগাগ্গিত হয়ে বললাম। আমি লাবিব।
মিমি- ভাইয়া আরও কত দুর?

বললাম- এইত সামনেই যে বাড়ি গুলো। ও আপনি কোথায় থেকে আসলেন?

মিমি- আমি আমার নানুর বাড়িতে ছিলাম। আর এখানে লাবলু মোল্লা আমার বাবা। আমি তার বড় মেয়ে।

আজ প্রথম বাবার বাড়িতে আসলাম। আমার জন্মের সময় মা পৃথিবী থেকে চলে যায়। এ কারনে বাবা আমাকে ভুল বুঝে আমাকে সন্তানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখে। আজ আমি এসেছি আমার বাবার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। ভাইয়া আপনি শুধু বাবার বাসা টা দেখিয়ে দিন?

আমিত আরো হতবাক হয়ে বললাম আপনি এখন আমাদের বাসায় চলুন। ভয় নেই বাসায় মা ও ছোট বোন আছে। আপনার কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগল। আজ আপনি এসব নিয়ে কথা বলতে পারবেন না। আকাশ টা ভাল না৷ আর আপনাকে আমি একা ছাড়তে পারব না। কাল সকাল সকাল আমাদের বাসা থেকে চাচার বাসায় আমি নিয়ে যাব।

মিমি– মানে?

আমি- – না, লাবণু মোল্লা আমার চাচা। আর তুমি আমার চাচাত বোন।

মিমি চোখের পানি যেন টলমল হয়ে করছে। বলতে বলতেই বৃষ্টি শুরু হলো। আমরা দুইজন দৌড়ে বারান্দায় উঠলাম। ছোট বোন জানালা দিয়ে দেখল আমার সাথে মিমি কে। ও না বুঝে মা কে বলল মা দেখ তোর ছেলে আমাদের মান সন্মান সব শেষ করছে। মেয়ে নিয়ে এসেছে।

মা দৌড়ে এসে আমাকে বলল – লাবিব এইটা কে?

আমি বললাম মা তোমাকে সব বলব। এখন এগুলো নাও । বলে মিমির ব্যাগ টা মা কে দিলাম। মা রাগ করে থমকে দাঁড়িয়ে রইল। ছোট বোন নাদিয়া মনে করলো আমি বিয়ে করে বৌ নিয়ে এলাম। ও বলল- ভাই তুই আমাদের কথা একবারও ভাবলি না। এইটা কি করলি?

আমি কিছু বলার আগে মিমি মাকে বুকে জরিয়ে ধরল। আর কান্না করে বলল। আপনিত আমার মায়ের মতো। আমি আপনার ছেলের বৌ না আমি আপনার ভাতিজি। আপনার সই মনির মেয়ে।

মা হঠাৎ ওর মুখ টা দেখে কান্না শুরু করল। আমি বললাম এখন কান্না থামাও তোমরা। চাচা জানলে সমস্যা হবে। মিমি অনেক দুর থেকে এসেছে। ফ্রেশ হয়ে নাও। কিছু খেয়ে নাও। তার পর বাবা আসুক। কি করা যায় দেখি।

নাহিদা – মা এই কি আমার চাচার মেয়ে?
মা – হ্যাঁ রে মা হ্যাঁ। আমরা ভুল বুঝেছি।
নাহিদা- আপু এত দিন তুমি আসো নি কেন? বলে বুকে জরিয়ে ধরল।

মিমি- ও আনন্দে কান্না করল। আজ প্রথম নিজের রক্তের সংস্পর্শে এসেছে।

মা মিমিকে রুমে নিয়ে গেল। নাহিদা ওর রুম থেকে তোয়ালা এসে মিমির শরীর মুছে দিল। এবং আমার কে তোয়ালা টা দিল। আমিও আমার শরীর টা মুছে নিলাম। মা মিমি কে বিছানায় উপর বসিয়ে ভাত তুলে খাওয়াচ্ছে। ঠিক মিমি কে প্রথম দেখে আমি যতটা অবাক হয়েছিলাম। তার থেকেও বেশি অবাক হলাম মা কে দেখে। যে এই প্রথম মা একটা মেয়ে কে খুব ভালবাসতেছে।

ঠিক যত টা ভালবাসা আমাদের জন্য পাওয়া। তার সব টাই মা আজ মিমি কে দিচ্ছে। মিমির আনন্দে চোখের পানি বের হয়েছে। আমি মা কে বললাম মা ওই কাঁদছে এখনো। কেন?

মিমি – চাচি আপনাকে মা ডাকি?

মা – আরে পাগলী আমিত তোর মায়ের মতন। তুই যত খুশি মা ডাক। বলে কপালে মুখে মা চুমা দিল।

আমি আমার রুমে গেলাম। রাত কখন যেন শেষ হলো। পরের দিন সকাল বেলা।

মিমি ও নাহিদা চাচার বাসায় গেল। দাদা আর দাদি নাহিদার দিকে তাকিয়ে বলছে। কি রে নাইকা সকাল সকাল আবার নতুন নাইকা টা কোথা হতে আসল। হত ছাড়া লাবিব তো আবার বিয়ে করে নিত।

নাহিদা- দাদু তা নয়। কেন নায়কা টা পছন্দ হয়?
দাদু – হ্যাঁ নায়কা টা কে?
মিমি দৌড়ে গিয়ে দাদুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। দাদু বলছে আরে ছাড় আমি বুড়ো হয়েছি। কি হয়েছে বল সব কিছু ঠিক হবে। আমি আছিত তোদের দাদু এখনো।

নাহিদা – দাদু কিসব বলো যে। ও তোমার নাতি বৌ নয়। ও তোমার নাতনি চাচার মেয়ে। কাল এসেছে। আমাদের বাসায় ছিল রাতে। দাদা- দাদিও কাঁদে মিমিও কাঁদে। কান্না শব্দ চাচার ঘুম ভাঙ্গল। চাচা বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে বলছে। সকাল সকাল কি হলো যেন মরার বাড়ি এটা।

সবাই কান্না কাটি করছে।

নাহিদা – আপু এইত চাচা তোমার বাবা।
মিমি যেন চিৎকার দিয়ে চাচাকে জরিয়ে কান্না করতে লাগল। চাচা বুঝতে পারল হয়ত এটাই আমার মনির মেয়ে। চাচাও কান্না করতে করতে হঠাৎ মাটিতে পরে গেল। সবাই বুক টা মালিশ করল। চাচা একটু শান্ত হলো৷ মিমি চাচা কে বলছে। আব্বু তুমি এমন হলে কেন। আমি তো এসেছি। আব্বু ভাল হও।

চাচা- মা রে মা। তুই আমাকে খমা করে দে। আমি তোর উপর অন্যায় করেছি। ভুল বুঝেছি তোকে।

অনেক খুঁজেছি। কিন্তু তোর নানা আমাকে তোর ঠিকানা কখন দেয় নি। বলেছে তুই নাকি হারিয়ে গিয়েছিস।।

(একখন্ড)