২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

মায়ার আরশী – রোখশানা রফিক

অভিযোগ
প্রকাশিত এপ্রিল ১৭, ২০২১
মায়ার আরশী  – রোখশানা রফিক

মায়ার আরশী

রোখশানা রফিক…..

ভোরের কুয়াশা কেটে শ্যামলা বরণ ঘনকালো চুলের প্রৌঢ় যে গোয়ালা সাদা ধুতির কোঁচা সামলে বাঁশের ভারায় ছোট ছোট চৌকো সবুজ কলাপাতায় মোড়ানো হিম হিম সফেন নরম মাখন ফেরি করতে আসতো রোজ সকালে আমাদের ছায়া ছায়া মফস্বলী পারায়, নামটা ভুলে গেছি তার।

কিন্তু আর কোথাও বাজার মাতানো জ্যাম-জেলী, বাটার-পনিরের অাস্বাদে খুঁজে পাইনি সেই সে ননীমাখা মাখনের স্বাদ, যেন মাতা যশোধারার লুকোনো ভান্ডারে শ্রী কৃষ্ণের চুরির ইন্ধন জোগানো অমৃতরস।….. অাসলে ছেলেবেলা গুলো এমনই লক্ষ্মীছাড়া, কেবল হারিয়ে যেতেই জানে, ফেরে না আর কোনোদিন।

ঝাঁপিয়ে শিউলি-কামিনী ফোটা আমাদের পেছন বাড়ীর বাগানে ঘাস পরিষ্কার করতে আসতো জিলদ্দি। খুরপি হাতে ওকে মনে থাকলে ও, ওর ঘর কোথায়, শোনা হয়নি কোনোদিন।

“লক্ষ্মী ” নামের যে ভিখারিনী সদর দরজায় এসেই আম্মাকে ” বউমা ” বলে কোমল গলায় তার আগমনী জানান দিতো, একবার দেশের বাড়ী থেকে ফেরার পথে গ্রাম্য এক ঝুপড়ির পাশে ওকে কাপড় মেলতে দেখে বুঝেছিলাম, দু’মুষ্টি ভিক্ষার অন্নের জন্য বহুদূর পথ পায়ে হেঁটে ও আমাদের শহরে আসে বড় ক্লান্ত পদক্ষেপে।

গ্রাম থেকে মোষের গাড়ীতে ধান বোঝাই করে আনতো নগগু গাড়োয়ান। ওর গোঁট্টাগাট্টা চেহারার কারণে ওকে কখনোই বন্ধুপ্রবন মানুষ মনে হতো না। তবুও ধান নামিয়ে দুপুরের খাবারের শেষে বিশ্রামের পর ও যখন স্পেয়ার চাকা বদলে ক্যাচ কোচ শব্দ তুলে আবার গ্রামের পথে ফিরে যেতো, অামি অার অামার চাচাতো-ফুফাতো ৩ ভাই প্রায় দেড় মাইল দূরের রেলষ্টেশন পর্যন্ত যেতাম ওর গাড়ীতে সওয়ার হয়ে। যতোদূর গিয়ে মনে হতো এবার শহরের সীমা শেষ, তখন নেমে পড়ে হেঁটে ফিরতাম বাসায়। কে যে এই সীমানা স্থির করে দিয়েছিলো আমাদের শিশুমনে, জানি না তো আজও…….

( ক্রমশ 🙂

Please Share This Post in Your Social Media
March 2024
T W T F S S M
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031