জৈন্তাপুর সীমান্ত এখন জিম্মি চাঁদাবাজ- শহিদ -করিম -মির্জা রুবেল বাহিনীর হাতে।
স্টাফ রিপোর্টারঃ-
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে অবাধে আসছে ভারতীয় পণ্য। অবৈধ পথে শুল্ক না দিয়ে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার মালামাল আসছে সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশে। বিজিবি, থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে দৈনিক বিপুল পরিমাণ টাকা। চলছে রমরমা চোরাই পণ্য বাণিজ্য।
পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। সীমান্ত এলাকার স্থানীয় লোকজন বলছেন, নিয়মিত নজরদারির মধ্যেও থেমে নেই সীমান্তের চোরাচালান।
তারা বলছেন, ভারতীয় গরু-মহিষ, নাছির বিড়ি, মদ, ইয়াবা,হিরোইন,মোটরসাইকেল,মোবাইল, কসমেটিক্স, শাড়ী, থ্রি-পিস,গাড়ীর টায়ার,রেড ব্লু,মসলাসহ ভারতীয় পণ্য আসছে প্রচুর। ভারতীয় এসব চোরাই পণ্যের দখলে চলে গেছে সীমান্ত এলাকা।
বলা চলে অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে সিলেটের ওই সব সীমান্ত। আর ওই সব সীমান্তে চোরাকারবারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে ও প্রশাসনের নামে টাকা আদায় করছেন উপজেলার যশপুর গ্রামের মৃত আছান উল্লার ছেলে শহিদ আহমদ, ঘিলাতৈল গ্রামের মৃত মছদ্দর আলীর ছেলে করিম মিয়া ও কেন্দ্রীগ্রামের আহমদ মেম্বারের ছেলে মির্জা রুবেল।
বিভিন্ন সূত্র মতে জানা যায়, সিলেটের তামাবিল শুল্ক বন্দর দিয়েই বৈধ পথে সিংহভাগ পণ্য বাংলাদেশে আসে। কিন্তু এখন অবস্থা খুবই নাজুক।
শুল্ক না দিয়ে চোরাই পথে পণ্য আমদানির কারণে তামাবিল শুল্ক বন্দরের রাজস্ব আদায়ও পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অবৈধ আমদানি বন্ধে কড়াকড়ির কারণে চোরাচালান চক্রের মূলহোতা শহিদ আহমদ, করিম মিয়া ও মির্জা রুবেল বর্তমানে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। তারা বিভিন্ন অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা দিয়ে শুল্ক না দিয়েই পণ্য আমদানি করছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।
অভিযোগ উঠেছে, সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে নিয়োজিত কতিপয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চোরাকারবারী সিন্ডিকেট অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য আনছে।
বর্তমানে এ সিন্ডিকেট অতীতের ন্যায় এখন আরও সক্রিয়। দেদারসে দেশে ঢুকছে ভারতীয় পণ্য। আর তাতে করে সিন্ডিকেট প্রধান শহিদ আহমদ, করিম মিয়া ও মির্জা রুবেল হাতিয়ে নিচ্ছে বিশাল অংকের টাকা।
তামাবিল শুল্ক বন্দরে কড়াকড়ি হওয়ার পর চোরাকারবারী চক্রের মূলহোতা শহিদ আহমদ, করিম মিয়া ও মির্জা রুবেল বিজিবির কিছু অসাধু সদস্যকে ম্যানেজ করে জৈন্তাপুর উপজেলার বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়ন ও ১৯ ব্যাটালিয়নের অধীন কয়েকটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই পথে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসছে।
বিশেষ করে বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়নের আলুবাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর আদর্শ গ্রাম, মিনাটিলা, কেন্দ্রী, কাঠালবাড়ী, ডিবির হাওর, খলারবন্দ এবং বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের অধীন ফুলবাড়ী, ঘিলাতৈল, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, গোয়াবাড়ী, বাইরাখেল, হর্ণি, কলিঞ্জি, জালিয়াখলা, বাগছড়া, লালাখাল, তুমইর, অফিফানগর, বালিদাঁড়া, ইয়াং রাজা সীমান্ত পয়েন্ট ব্যবহার করে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকারও বেশি ভারতীয় পণ্য অবাধে দেশে প্রবেশ করাচ্ছে। ফলে সরকার বিশাল অংকের শুল্ককর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চোরাই পথে আসা ভারতীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে গরু-মহিষ, নাছির বিড়ি, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিয়ার, ব্যাকপাইবার হুইস্কি, মোটরসাইকেল, মোবাইল, কসমেটিক্স, শাড়ী, থ্রি-পিস, শার্ট ও প্যান্টের থান কাপড়, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, গরু মোটা-তাজাকরণের স্টেরয়েড ট্যাবলেট, হলুদ, জিরা, এলাচি, দারুচিনি, গোলমরিচসহ যাবতীয় মসলা, মুভ, ইসগার্ড, লিভ ৫০২, রিভাইটেল, সেনেগ্রা, ভায়াগ্রা, এডিগ্রা, ডক্টরেট, ফেয়ার এন্ড লাভলীসহ বিভিন্ন কসমেটিক্স।
এসব চোরাই মালামালের কিছু কিছু মাঝে মধ্যে বিজিবি আটক করলেও পরবর্তীতে কাস্টমসে জমা দেয়ার আগে বেশিরভাগই পেছনের দরজা দিয়ে চলে যায় চোরাই সিন্ডিকেট শহিদ আহমদ, করিম মিয়া ও মির্জা রুবেলদের হাতে। এ অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শহিদ আহমদ বলেন- এলাকার কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।
এ ব্যাপারে করিম মিয়া জানান- ‘‘জীবনের পঞ্চাশ বছর পাড়ি দিয়েছি। এই বয়সে এসব মানায় না’’ বলে তিনি ফোন রেখে দেন।
মির্জা রুবেল তাঁর উপর আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমি এলাকায় পাথর ব্যবসার সহিত সম্পৃক্ত।
স্থানীয়রা আরও জানান, শহিদ আহমদ, করিম মিয়া ও মির্জা রুবেলদের নেতৃত্বে বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার পণ্য আমদানি হচ্ছে ওই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে। উপরোক্ত সকল পণ্য ভারত থেকে আসছে। কিন্তু এসব পণ্য বৈধ পথে আসেনা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অবাধে ঢুকছে এসব ভারতীয় পণ্য।
আর এসবের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে হুন্ডিতে। এভাবে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের অবৈধ আমদানির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্পোৎপাদন। অবৈধ পথে আমদানিকারকদের শুল্ক পরিশোধ করতে হয় না। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, শক্তিশালী একাধিক সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত। প্রভাব থাকায় ভারতীয় পণ্য এ দেশে বাজারজাতকরণে তাদের খুব একটা বেগ পেতে হয় না।
ব্যবসায়ীরা জানান, চোরাই পণ্য বিক্রিতে লাভ বেশি। শুল্ক ছাড়া এসব পণ্যের বাজার মূল্য অনেক কম থাকে। এ কারণে দেশীয় উৎপাদনমুখী শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের কাছে মূল্য ও মানে অনেক দেশীয় পণ্য মার খাচ্ছে। এ ছাড়া বৈধপথে আমদানিকারকরাও এতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বেশি লাভজনক হওয়ায় বৈধ আমদানির চেয়ে অবৈধ আমদানির দিকেই ঝুঁকছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ডিবি পুলিশ (উত্তর) এর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল আলম বলেন- চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে সিলেট জেলা পুলিশের রয়েছে কঠোর অবস্থান। পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে ওদের বিরুদ্ধে জেলা ডিবি পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।
করিম, শহিদ ও মির্জা রুবেল জেলা ডিবি পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন। ওদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান ওসি সাইফুল আলম।
জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের নামে টাকা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসিন আলী বলেন- চোরাকারবারী চক্রের সাথে থানা পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। চোরাচালানের বিরুদ্ধে রয়েছে জিরো ট্রলারেন্স। তবে শহিদ, করিম ও রুবেল বিজিবি’র সোর্স বলে জেনেছি।