২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল অবস্থা : রোগীদের ভোগান্তি চরমে

অভিযোগ
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৫, ২০২০
লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল অবস্থা : রোগীদের ভোগান্তি চরমে

লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল অবস্থা : রোগীদের ভোগান্তি চরমে

ফৌজি হাসান খাঁন রিকু,মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ-

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সমস্যায় জড় জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও কর্মচারী না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রোগী থাকলেও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পর্যাপ্ত লোকবল,যন্ত্রপাতি নেই বললেই চলে।

এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগীদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও চিকিৎসক আছে মাত্র ৬জন।তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীর অধিকাংশ পদই শুন্য।হাতে গনা নামমাত্র দুই একটি পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোন পরীক্ষা হয়না এখানে।স্বাস্থ্য সেবা পেতে উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

কিন্তু জনবল সংকটের কারণে যেনো দূর্ভোগের শেষ নেই উপজেলাবাসীর। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।

এদিকে টানা ছয়দিন যাবৎ চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের সামনে স্বাস্থ্য সহকারিদের কর্মবিরতি এতে আরও দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নে ছোট একটি অস্থায়ী ভবনে এ হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় হাসপাতালটি ৩১ শয্যার ছিলো। ২০০৫ সালে বেজগাঁও ইউনিয়নের হাটভোগদিয়া এলাকায় ৪ তলা ভবনে ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হয়।

হাসপাতালের বর্হিবিভাগে দৈনিক ৩শ থেকে ৪শ রোগী সেবা নিতে আসেন। গরমের মৌসুমে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ে। আরও জানা যায়, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য চিকিৎসক থাকার কথা ২১ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তকর্তাসহ কাগজে কলমে আছে মাত্র ৬ জন চিকিৎসক। বর্তমানে ৬ জন ডাক্তার দ্বারাই চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। চক্ষু, হাড়, চর্ম-যৌন, অ্যানেসথেসিয়া, অর্থপ্রেডিক্স, ডেন্টাল, মেডিসিন, নাক-কান-গলা, শিশুবিভাগসহ বেশ কিছু বিভাগে কোন চিকিৎসক নেই।

হাসপাতালটিতে ঘুরে দেখা যায় জরুরি বিভাগের পাশে সব বয়সের শিশু,নারী,পুরুষসহ বৃদ্ধ রোগীদের ভিড়। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশায়। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, এখানে চক্ষু, হাড়, চর্ম-যৌন, অ্যানেসথেসিয়া, অর্থপ্রেডিক্স, ডেন্টাল, মেডিসিন, নাক-কান-গলা, শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। হাসপাতালে শুধু রক্ত ও মলমুত্র পরীক্ষা করা যায়। অন্য সব পরীক্ষাগুলো বাহিরের ক্লিনিক ও ডায়গোনেষ্টি সেন্টারে করতে হচ্ছে।

তাই ভালো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না তারা। ডাক্তার স্বল্পতার কারণে লাইনে থেকেও ভালো করে ডাক্তার দেখানো যাচ্ছেনা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ডাক্তারের কক্ষে যেতে পারলেও এক সাথে ৩-৪ জন রোগীকে ২-৪ মিনিটের মধ্যেই কোন রকম দেখে ঔষুধ লিখে দিচ্ছেন।প্রায় অনেক ঔষধও হাসপাতালে পাওয়া যায় না।শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট কোন ওয়ার্ড নেই।নারী,পুরুষ ওয়ার্ড দুইটি প্রায় রোগী শুন্য।পুরুষ ওয়ার্ডে ৯-১০ জন ও নারী ওয়ার্ডে ৫-৬ জন রোগী আছেন।

স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, হাসপাতালে রোগীদের তেমন চিকিৎসা দেওয়া হয় না। রোগের ধরণ অনুসারে চিকিৎসক নেই। তাই এখানে তেমন কোন সেবা পাওয়া যাচ্ছেনা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসান মাহমুদ বলেন, আমাদের এ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসক ও লোকবলের সমস্যাটা সবচেয়ে বেশী। সম্পূর্ণ উপজেলায় চিকিৎসা সেবা চলমান রাখতে হাসপাতালে কমপক্ষে ২১ জন এবং সাব সেন্টার গুলোতে আরও ১০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। সেখানে সব মিলিয়ে আছে মাত্র ৬ জন।ডাক্তার ও যন্ত্রপাতির অভাবে অপারেশনের কক্ষটি চালু করা যায়নি এখনো। হাসপাতালটির এক্সরে মেশিনও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় রোগীর সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে। ভালো চিকিৎসার আশায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছেন তারা।

তিনি আরও জানান, রোগীদের কাঙ্খীত সেবা দিতে হলে, যে সমস্ত ডাক্তারদের পদগুলো শুন্য আছে সেখানে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে। যারা এখানে নিয়োগ নিয়ে অন্যত্র কাজ করছেন, তাদের পদ গুলোও শুন্য ঘোষণা করা দরকার। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীর প্রতিটি পদ পূরন করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30