২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সুনামগঞ্জে ৪৭জন স্বামীকে ক্ষমা করে ফুল দিয়ে বরণ করেন স্ত্রীরা

অভিযোগ
প্রকাশিত নভেম্বর ২৭, ২০২০
সুনামগঞ্জে ৪৭জন স্বামীকে ক্ষমা করে ফুল দিয়ে বরণ করেন স্ত্রীরা

সুনামগঞ্জে ৪৭জন স্বামীকে ক্ষমা করে ফুল দিয়ে বরণ করেন স্ত্রীরা

 

ফকির হাসান :: সুনামগঞ্জে নির্যাতন, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুকসহ স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্যের কারণে স্ত্রীদের দায়েরকৃত ৪৭টি মামলায় সাজা না দিয়ে দাম্পত্য জীবনে ফিরে আসার শর্তে স্বামীদের মুক্তি দিয়েছে আদালত। স্ত্রীদের দায়েরকৃত মামলায় জেলে ও জামিনে থাকা স্বামীদের এজলাসের সামনে ফুল দিয়ে বরণ করেন স্ত্রীরা। স্বামীরাও ফুল দিয়ে গ্রহণ করেছেন তাদের স্ত্রীদের।

গত বুধবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এমন ব্যতিক্রমধর্মী রায় দিয়েছেন।

এমন বিরল রায়ের ফলে সংসারের ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে ৪৭টি পরিবার। মা ও বাবার মধ্যে ফের সম্পর্ক জোড়া লাগায় উৎফুল্ল ছিলেন সন্তানরাও। সন্তানদের সঙ্গে নিয়েই স্বামীদের বরণ করেছেন স্বামীরা।

জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে স্বামীদের নানামুখী নির্যাতনের শিকার ৪৭ জন নারী অতিষ্ট হয়ে স্বামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এসব মামলায় অনেক স্বামী জেল হাজতে ছিলেন। কেউ কেউ বিচারাধীন মামলায় জামিনেও ছিলেন। মামলার কারণে সংসারের বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়। মা-বাবার কলহের কারণে ছিটকে পড়ে ছোট ছোট সন্তানরাও। এতে নারীরা আরও অসহায় ও মানবেতর জীবনে পড়েন। স্বামীহীন অবস্থায় সন্তানদের অনিশ্চিত জীবনের মুখে পড়েন স্ত্রীরা। সামাজিক গঞ্জনার শিকারও হন তারা। পাশাপাশি সন্তানদের পড়ালেখা ও স্বাভাবিক বিকাশও ব্যাহত হয়।

আদালত এসব মামলাগুলো পর্যবেক্ষণ করেন নিবিড়ভাবে। সংসার জোড়া লাগানোর জন্য স্বামী ও স্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন আইনজীবী ও মামলার সংশ্লিষ্টরা। একপর্যায়ে উভয়ের সম্মতিতে মামলার রায়ের দিকে না গিয়ে স্ত্রীদের আবারও বরণ ও সন্তানদের ভরণপোষণের শর্তে স্বামীদের জামিনের সিদ্ধান্তের কথা জানান আদালত। স্বামীরাও বিষয়টি মেনে নিয়ে আবারও সাংসারিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এতে আদালত রায়ে না গিয়ে ৪৭ জন স্বামীকে খালাস দেন।

বুধবার দুপুরে তাদের খালাসের সময় এজলাসের সামনেই সন্তানদের নিয়ে ফুল হাতে অপেক্ষায় ছিলেন স্ত্রীরা। তারা নিজের দায়েরকৃত মামলায় স্বামীদের ক্ষমা করে দিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে আবারও সংসারের পথে পা বাড়িয়েছেন। এতে ভেঙে যাওয়া পরিবারের সেতু জোড়া লেগেছে। স্বজনরাও তাদেরকে আশির্বাদ করেছেন। তবে বাবা-মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ায় সন্তানরা ছিলেন খুবই উৎফুল্ল।

স্ত্রীদের দায়েরকৃত মামলায় কয়েকমাস জেলে থাকার পর কিছুদিন আগে জামিনে বেরিয়েছেন দুই সন্তানের জনক সুনামগঞ্জের রাধানগর গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও সিলেটের লালাবাজারের ১ সন্তানের জনক রুহুল আমিন। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সাংসারিক বিভিন্ন বিষয়ে আমার ও স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের কারণে সে মামলা দায়ের করেছিল। এই মামলায় জেল খেটেছি।

পরে আমার উপলব্ধি হয়েছে এই বিষয়গুলো আমরা পরস্পরের মধ্যে আপসে নিষ্পত্তি করতে পারতাম। অবশেষে আদালত আমাদের সেই সুযোগ দিয়েছেন। আবারও সংসার জোড়া লাগিয়ে দিয়েছেন। এখন আমি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুন্দরভাবে চলতে চাই।’

আর রুহুল আমিন বলেন, ‘আদালত আমাদের আবারও নতুন জীবন দিয়েছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। আমি স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বাকিটা জীবন সুন্দরভাবে কাটাতে চাই।’

সুনামগঞ্জ পাবলিক প্রসিকিউটর নারী ও শিশু এডভোকেট নান্টু রায় বলেন, ‘৪৭টি পরিবারকে জোড়া লাগিয়ে দিয়ে আদালত বিরল রায় দিয়েছেন। এর ফলে স্ত্রী ফিরে পেয়েছেন স্বামীকে, সন্তান ফিরে পেয়েছে বাবাকে। এতে ভাঙনের মুখে থাকা অনিশ্চিত জীবনে আবারও আশার আলো দেখা দিয়েছে। স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানরা আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30