৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সিলেটে টোকেন বাণিজ্যে প্রশাসনের নীরব ভূমিক

অভিযোগ
প্রকাশিত নভেম্বর ৬, ২০২০
সিলেটে টোকেন বাণিজ্যে প্রশাসনের নীরব ভূমিক

 

 

সিলেটে টোকেন বাণিজ্যে প্রশাসনের নীরব ভূমিক

 

সিলেট অফিসঃ- গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেটে সড়ক জোন অফিস ভবণের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে বক্তব্যে নম্বরবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধে প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এসব যানবাহন আমদানি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দেয়া হয়েছে বলেও ওই সময় জানান মন্ত্রী।

কিন্তু সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সড়কে প্রায় তিন হাজার অবৈধ রেজিস্ট্রেশনবিহীন (নম্বরবিহীন) সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে দেদারছে চলাচল করছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের অভিযানে দু’চারটি নম্বরবিহীন অটোরিক্সা আটক হলেও অদৃশ্য কারণে অভিযানগুলো থেমে যায়! ফলে এই তিন সড়কে নম্বরবিহীন অটোরিক্সা চলাচলে বাধা থাকছে না কোথাও।

কিন্তু সরেজমিন অনুসন্ধানে, উটে আসে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার তিন সড়কের টোকেন বাণিজ্যের প্রদানসহ সিন্ডিকেটের কয়েকজনের নাম।

জানা গেছে, এই তিন সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সার সংখ্যা প্রায় তিন হাজারেরও বেশী। আর অবৈধ গাড়িগুলো চলছে বিশেষ টোকেন’র মাধ্যমে। টোকেন বাণিজ্য করে মাসে লাখ ও বছরে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। অবৈধ এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে সাহস যেন কারই নেই!

অনুসন্ধানে জানা যায় টোকেন সিন্ডিকেট প্রদান হচ্ছে,(টোকেন নাজিম) সে পীরেরবাজার হাতুড়া গ্রামের বাসিন্দা ও পীরেরবাজার সিএনজি স্টেনের ভূঁইফোড় শ্রমিক নেতা। এই প্রদানের ইশারায় এই তিন সড়কে দীর্ঘদিন দিন থেকে চলছে নম্বরবিহীন অটোরিক্সা।

এই সড়কগুলোতে রেজিস্টেশনবিহীন অটোরিক্সা চলতে প্রতিটি সিএনজি অটোরিক্সাকে প্রতি মাসে কিনতে হয় ৫শ’ থেকে ১৫শ’ টাকার টোকেন। আদায়কৃত এই চাঁদা থেকে নম্বর ও রেজিষ্ট্রেশনবিহীন অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা চলাচলের জন্য বিআরটিএ এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করা হয়ে থাকে বলে বিশ্বস্থ একটি সূত্র তা নিশ্চিত করেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধান ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টোকেন বাণিজ্যের মূলহোতা ( টোকেন নাজিম ) ও তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেট জৈন্তাপুর উপজেলার হেমু হাদপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে (টোকেন কুদ্দুস)। ( টোকেন জয়নাল ) বটেশ্বর বাজার সিএনজি উপ-পরিষদের সাবেক সভাপতি ও সিলেট জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান জেলার মেম্বার।

এবং হরিপুর বাজারের বিশিষ্ট চোরাচালান কারবারিদের গডফাদার একাধিক চোরাচালান মামলার আসামী ( চোরাকারবারী ইয়াহিয়া )। তাদের বিরুদ্ধে জাতীয়-স্থানীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেলসহ অনলাইন নিউজপোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হলেও রহস্যজনক কারনে এখনও তারা আইনের ধরাচোয়ার বাইরে। তারাই হচ্ছেন জৈন্তা,গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট তিনটি উপজেলার টোকেন বাণিজ্যের মূল কারিগর।

এই চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে সিলেট-তামাবিল রোডে চাঁদা আদায় বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় এলাকায় তাদেরকে সকলেই ‘পুলিশ টোকেন’র মালিক হিসেবে চিনে। থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের অতি কাছের লোক এই চার চাঁদাবাজ।

জানা গেছে, হাজার-দেড়হাজার অনটেষ্ট সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে মাসে অন্তত (৮ লাখ) টাকা উর্পাজন হয় তাদের। প্রতি সিএনজি ফোরষ্ট্রোক হতে টোকেন প্রতি হাতিয়ে নেয়া হয় ৫-৭শ’ টাকা হারে। যে চালক তাদের টোকেন ব্যবহার করবেনা তাদের কপালে জুটে মামলা, হামলা ও গাড়ি ছিনতাই। এভাবে সে নিজেও বেশ কয়েকটি সিএনজি ফোরষ্ট্রোক গাড়ির মালিক বনে গেছে।

এদিকে নাজিম উদ্দিন সিলেট নগরীর ট্রাফিক পুলিশ ও শাহপরাণ (রহ.) থানা পুলিশের নামে চাঁদা আদায় করে থাকে। জেলা পর্যায়ে কুদ্দুস আর এসএমপি পর্যায়ে নাজিম। রাতভোর পর্যন্ত তাদেরকে কখনও বটেশ্বর বাজার, পীরের বাজার, সুরমা গেইট পয়েন্ট ও থানা-পুলিশ ফাঁড়িতে দেখা যায়। এমন কোন পুলিশ সদস্য নেই রাতের ডিউটিতে গেলে তার সাথে বসে নাস্তা করেন না। তবে ট্রাফিক পুলিশের ব্যাপারটি তারা গোপনে ছেড়ে ফেলে। ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট এই মাসোহারা চাঁদা আদায় করে থাকেন।

ওই সার্জেন্ট সিলেটের স্থানীয় লোক হওয়াতে অফিস আদালতেও রয়েছে তার আধিপাত্য। অনেক সময় তার বিরুদ্ধে সিনিয়র অফিসাররাও কথা বলতে নারাজ। আর ওই সার্জেন্টকে সহযোগীতা করেন আরেক ট্রাফিক পুলিশ কর্মচারী। অভিযোগ রয়েছে তিনটি উপজেলার প্রত্যেকটি থানা পুলিশ টেবিলে মাসোহারা চাঁদা পৌছে দেয় এই চক্র।

এতে লক্ষ্য নেই বিআরটি এর কতৃপক্ষেরও। লাইসেন্স বিহীন চালক,মালিকানা নিবন্ধন, ট্যাক্স টোকেন ছাড়াই চালিয়ে দিচ্ছে এসব মোটরযান। তাও গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে শুধুমাত্র একটি টোকেন।

প্রশাসনের এমন কর্মকান্ডে দিশেহারা সচেতন মহল। কারন এমনিতেই হাইওয়ে রোডে এসব যানবাহন চলাচলেও রয়েছে বিধি-নিষেধ। কিন্তু কেউ কারো কথা কর্ণপাত করছে না। প্রশাসনিক তৎপড়তার দুর্বলতার কারনে চাঁদা আদায় বাণিজ্য মহামারী রুপ ধারণ করছে! অথচ তাদের কোন বক্তব্য নিতে গেলেই বরাবরের মতো চক্রটি চাঁদাবাজির বিষয় এড়িয়ে যায়।

 

 

বিস্তারিত আসছে আগামী সোমবার জাতীয় সাপ্তাহিক অভিযোগ পত্রিকায়।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031