Sharing is caring!
ফৌজি হাসান খাঁন রিকু, লৌহজ (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ স্বপ্নের পদ্মাসেতুর ৩৩তম স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সোমবার ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্তে (৩ ও ৪) নম্বর পিয়ারের ওপর স্প্যান ১-সি বসাতে সক্ষম হয় প্রকৌশলীরা। এর মধ্যে দিয়ে দেশের দীর্ঘতম এই সেতুর ৪ হাজার ৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার সকাল সোয়া ৯টার সময় মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তে অবস্থিত কন্সন্ট্র্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে স্প্যানটি নিয়ে সেতুর উদ্দেশে রওনা দেয় ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই। প্রায় আধাঘন্টা পর কাঙ্খিত (৩ ও ৪) নম্বর পিয়ারের কাছে পৌঁছে ৩ হাজার ৬০০ টন বহন সক্ষমতার ক্রেনটি। এরপর ক্রেন নোঙর করে পিয়ারে স্প্যান উঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়। চলতি মাসের ১১ অক্টোবর রবিবার মাওয়া প্রান্তে ৩২তম স্প্যানটি বসানো হয়েছে। ৩২তম স্প্যান বসানোর আটদিনের মাথায় বসলো ৩৩তম স্প্যানটি। পদ্মাসেতুতে ৩৩তম স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্য হওয়ায় বাকি রইল আর মাত্র আটটি স্প্যান বসানোর কাজ।প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূল থাকলে আগামী ২৫ অক্টোবর সেতুর (৭ ও ৮) নম্বর পিয়ারের উপর ৩৪তম স্প্যান,৩০ অক্টোবর (৮ ও ৯) নম্বর পিয়ারে ৩৫তম স্প্যান, ৪ নভেম্বর (২ ও ৩) নম্বর পিয়ারে ৩৬তম স্প্যান,১১ নভেম্বর (৯ ও ১০) নম্বর পিয়ারে ৩৭তম স্প্যান,১৬ নভেম্বর (১ ও ২ নম্বর পিয়ারে ৩৮তম স্প্যান,২৩ নভেম্বর (১০ ও ১১) নম্বর পিয়ারে ৩৯তম স্প্যান,২ ডিসেম্বর (১১ ও ১২) নম্বর পিয়ারে ৪০তম স্প্যান ও ১০ ডিসেম্বর সেতুর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যানটি (১২ ও ১৩) নম্বর পিয়ারের ওপর বসানো হবে।দ্বিতল বিশিষ্ট এ সেতুর পিয়ারের উপর
বসানো স্প্যানগুলোতে স্ল্যাব বসানাের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।সেতুর উপরের তলায় এ পর্যন্ত মোট ১০৭৬টি রোডওয়ে স্ল্যাব ও ১৫৯০টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৫০ ভাগ,আর্থিক অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৫৫ ভাগ এবং নদী শাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৫০ ভাগ। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৯৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর (৩৭ ও ৩৮) নম্বর পিয়ারে সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় ৩১টি স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ৪ হাজার ৬৫০ মিটার। ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে।মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা বিশিষ্ট।কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে।