২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ডিমলায় ২০ বছর ধরে জোঁয়াল বুকে জড়িয়ে তেলের ঘানি টানছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ

প্রকাশিত অক্টোবর ১১, ২০২০
ডিমলায় ২০ বছর ধরে জোঁয়াল বুকে জড়িয়ে তেলের ঘানি টানছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ

Sharing is caring!

 

মোঃরুহুল আমিন,স্টাফ রিপোর্টার (নীলফামারী):

বৈচিত্রময় এই প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক । জীবন-জীবিকার তাগিদে দু’মুঠো অন্ন জোগাতে বিচিত্র অনেক পেশায় নিয়োজিত রয়েছে কিছু মানুষ।এমনই এক হৃদয়বিদারক পেশায় জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসতেছেন সহায়-সম্বলহীন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৭নং খালিশা চাপানী ইউনিয়ন সরকার পাড়া গ্রামের মৃত মামুদের ছেলে সইমুদ্দিন (৭০)।

গরুকেনার সামর্থ্য নেই তার। আছে শুধু দারিদ্রের কষাঘাত। দু’মুঠো পেটের অন্ন জোগাতে গরুর অভাবে কলুর বলদ সেজে ষাটোধর্ব স্ত্রী নুর নাহার’র সহায়তায় গত ২০ বছর ধরে খাঁটি সরিষারতেল তৈরির কাঠের ঘানির জোঁয়াল বুকে জড়িয়ে টানছেন সইমুদ্দিন ।

 

বয়সের ভারে অনেকটাই অক্ষম হয়ে পড়লেও উভয় দম্পতি পরিবারের চার সদস্যের মুখে অন্ন তুলে দিতে সাতসকাল হতে তেলের ঘানির জোঁয়াল বুকে জড়িয়ে ঘূর্ণায়নমান জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েন।

 

জানা গেছে, ব্যাক্তি জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের বাবা। ছেলেরা যে যার সংসার নিয়ে টানা পোড়া, ৩ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ছোট মেয়ে নিলুফা আক্তার সে জলঢাকা সরকারী ডিগ্রী কলেজে ডিগ্রী ২য় বর্ষে অধ্যায়নরত। এতিম নাতি মনির হোসেন (১২), স্ত্রী নুর নাহার (৫৫) সহ ৪ সদস্যের সংসার তাঁর।

 

গরু ছাড়াই তৈলের ঘানি টানার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবত সরিষার তৈলের ব্যবসা করে আসছি। ব্যবসার শুরুতে ১টি গরু ছিলো। সেই টানতো তৈলের ঘানি। ১৫ বছরের মাথায় গরুটি মারা যায়। সে থেকে গরু কেনার সামর্থ না থাকায় নিজেই ঘানি টানছি। ভোর ৩ টায় ৫ কেজি সরিষা ঘানিতে দিলে সকাল ১১টার দিকে তৈল মাড়াই শেষ হয়।

 

বৃদ্ধ সইমুদ্দিন আরো জানান, বাহে হামরা জম্মের গরিব। এক সময়ে একটা গরু আছিল মরি গেইছে ২০ বছর আগে, তখন থেকে আর গরু কিনবার পরনাই। তিনি আরও জানান,এই বয়সে আর ঘানি টানবার পারনা। গায়ে বল কমি গেইছে। ঘানির সাথে ঘুরতে ঘুরতে মাথা ঘুরতে থাকে। বয়সও হোইছে মেলা। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জন নেত্রী শেখ হাসিনা সহ সমাজের বিত্তশালী মানুষের কাছে সহযোগীতার আশা করেছেন। যদি তাঁকে কেউ একটা ঘানি টানার গরু কিনে দিত তাহলে বৃদ্ধ বয়সে পরিশ্রম কমত, আয় রোজগারও একটু বাড়ত।