১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ বিশ্ব গড়তে একসঙ্গে কাজ করতে হবে

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০
পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ বিশ্ব গড়তে একসঙ্গে কাজ করতে হবে

পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ বিশ্ব গড়তে একসঙ্গে কাজ করতে হবে

 

 

অভিযোগ ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারিকে মানবজাতির জন্য অভিন্ন হুমকি হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এগুলো মোকাবেলায় একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তুলতে মানবজাতিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

 

সোমবার বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রধানমন্ত্রীর একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। এগুলো মোকাবেলায় একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তুলতে মানবজাতিকে একসাথে কাজ করতে হবে।

 

নিবন্ধে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদ আছে: ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। আমাদের এমন কিছুই করা উচিৎ নয়, যার জন্য আফসোস করতে হয়।’

 

ফাইনান্সিয়াল টাইমস (এফটি) একটি আন্তর্জাতিক দৈনিক পত্রিকা। যেখানে সমকালীন ব্যবসা ও অর্থনীতি বিষয়ক বিভিন্ন ঘটনা প্রাধান্য পায়। ইংল্যান্ডের লন্ডন ভিত্তিক পত্রিকাটি জাপানি হোল্ডিং কোম্পানি নিক্কেই’র মালিকানাধীন। ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেও এর কার্যালয় রয়েছে।

 

বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সম্পূর্ণ নিবন্ধ : বাংলাদেশে পানি জীবন মরণের বিষয়।

 

আমার দেশ নদীমাতৃক দেশ। উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বহু লোক বাস করে। কিন্তু ২০২০ সালে আমাদের নজীরবিহীন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মে মাসে সাইক্লোন আম্পান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হেনে এর গতিপথে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন রেখে গেছে। এরপর মৌসুমী বৃষ্টিপাতে দেশের এক তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ শস্যের ক্ষতি হয়েছে।

 

আমি সে সব দেশকে সতর্ক করতে চাই, যারা মনে করে তারা জলবায়ু সংকট থেকে মুক্ত, ব্যাংকার এবং অর্থলগ্নিকারীদের কাছে যারা মনে করে তারা এটা থেকে রক্ষা পাবে: আপনি পারবেন না। কোভিড-১৯ দেখিয়েছে কোনও দেশ বা ব্যবসা একা টিকে থাকতে পারে না। যা ২০২০ সালকে এমনভাবে তৈরি করেছে যেখানে আমরা অবশ্যই বিজ্ঞানীদের কথা শুনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

জলবায়ু, স্বাস্থ্য এবং প্রকৃতির আমরা একটি ত্রিমুখী গ্রহগত জরুরী অবস্থা, সঙ্কটের মুখোমুখি। জীববৈচিত্রের ক্ষতি জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে ত্বরান্বিত হয় এবং তা আরও বাড়িয়ে তোলে।

 

প্রকৃতির ক্রোধ বাংলাদেশ একা অনুভব করছে না। এ বছর আমাজন, অস্ট্রেলিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া এবং সাইবেরিয়ায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং হ্যারিকেন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবিয়ান এবং এশিয়ার বেশিরভাগ অংশে আঘাত হেনেছে। আগামী বছর জলবায়ুু শীর্ষ সম্মেলন সিওপি-২৬-এর আয়োজক যুক্তরাজ্যও বন্যার সম্মুখীন হয়েছে।

 

জলবায়ুু পরিবর্তন মানুষের ক্রিয়াকলাপের স্থায়িত্বের অভাব থেকে উদ্ভূত হয়। আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্যা, বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ, ভূমিধস এবং খরা আরও বেশি বিরূপ ও তীব্রতার সঙ্গে উপলব্ধি করছি যা খাদ্য সুরক্ষাও বিপন্ন করে। আমাদের এগুলোর গুরুত্ব স্বীকার করতে হবে।

 

সমুদপৃষ্ঠের এক মিটার বৃদ্ধি অনেক ছোট ছোট দ্বীপ এবং উপকূলীয় দেশগুলোকে নিমজ্জিত করবে। গলে যাওয়া হিমবাহ থেকে বন্যা হিমালয়ের দেশগুলোতে বিপর্যয় ডেকে আনবে। কয়েক কোটি মানুষ জলবায়ু শরণার্থীতে পরিণত হবে। এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতা পৃথিবীর নেই।

 

জি-২০ দেশগুলো প্রায় ৮০ শতাংশ নির্গমনের জন্য দায়ী এবং নিচের দিকের ১০০টি দেশ মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নির্গমন করে। বৈশি^ক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি থামাতে নিঃসরণকারী দেশগুলোর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব রয়েছে এবং তাদের নিঃসরণ প্রয়োজনীয় হ্রাসের মাধ্যমে বৃহত্তর অবদান রাখতে হবে।

 

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বর্তমান সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য দ্রুত অভিযোজনে অর্থ ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জি-২০ এর কাছ থেকে আরও সমর্থন চাইছে।

 

এই গ্রুপে বাংলাদেশ বিরূপ আবহাওয়ার জন্য অন্যতম সেরা প্রস্তুত দেশ। আমরা সমুদ্রপ্রাচীর নির্মাণ করছি, ম্যানগ্রোভ বন রোপণ করছি, সকল সরকারি কাজে স্থিতিস্থাপকতা যুক্ত করছি।

 

তবে, আমরা এই যাত্রা একা চলতে পারি না। ৬৪টি দেশ এবং ইইউ এই সপ্তাহে পৃথিবীর জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার জন্য ‘নেচার টু রেসপন্ড’ অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছে। তারা প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মানুষের এবং বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। সেখান থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পর্যায়ে অভিন্ন রাজনৈতিক সদিচ্ছা তৈরি করা দরকার।

 

পরবর্তী সিওপি, জি ৭ এবং জি-২০ সভাগুলোর আয়োজক হিসাবে, যুক্তরাজ্য এবং ইতালিকে অবশ্যই এই এজেন্ডাটি পরিচালনা করতে হবে, এজন্য প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি ব্যাপক সমর্থন প্যাকেজ দরকার।

 

ব্যবসায়ীদের নেতৃবৃন্দ, সিইও, সিএফও এবং সকল স্তরের বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা পালন করতে হবে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আপনার নীচের লাইনটি অনেক দূরে। কিন্তু, আমাদের অভিন্ন নীচের লাইনটি আরও গুরুত্বপূর্ণ: প্রকৃতি যদি লাঞ্ছিত হয়, তবে, এটি আমাদের রক্ষা করতে পারবে না, তখন আমরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হব। বাংলাদেশে যা ঘটে তা লন্ডন এবং নিউইয়র্কের শেয়ার বাজারকে প্রভাবিত করে।

 

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি থেকে কেউ মুক্ত নয়। একমাত্র সমাধান হচ্ছে, সরকারের নীতি এবং ব্যবসায়িক অনুশীলনের একটি পদ্ধতিগত পরিবর্তন, উচ্চতর থেকে কম কার্বন ও গ্রহের সম্পদ শোষণে যতœবান হওয়া। কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক অর্থনেতিক বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর এর প্রভাব মিশ্রিত হয়েছে। আমি সবুজ পুনরুদ্ধারের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য ইইউ’কে স্যালুট জানাই।

 

আমরা বাংলাদেশেও এটি করার পরিকল্পনা করছি এবং আমি আশাবাদী আমার সহকর্মী সরকারি নেতাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতারাও এটি করবেন। ভবিষ্যতের কাজগুলো অবশ্যই অগ্রাধিকার দিয়ে আগামী দশকের জন্য শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে হবে।

 

জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারী এবং প্রকৃতিকে ধ্বংস সাধারণ হুমকি। একটি পরিষ্কার, সবুজ এবং নিরাপদ বিশ্ব: একটি সার্বজনীন সমাধানের জন্য কাজ করতে তাদের আমাদের ঐক্যবদ্ধ করা উচিত।

 

যেমনটি আমরা বাংলায় বলি: ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’ আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যার জন্য পরে আফসোস করতে হয়। সূত্র : বাসস

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30