Sharing is caring!
অভিযোগ ডেস্ক : মাছের পচন ধরে মাথা থেকে, দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। তেমনি স্বাস্থ্য বিভাগের অনিয়ম, দুর্নীতি শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। পচনের বিস্তৃতি ঘটেছে অনেক জায়গায়, শাখা-প্রশাখায়। একজন ভুক্তভোগী বলেছেন এমন কথা। এই ভুক্তভোগীর নাম তাজরিয়ান বাবু (৩৪)।
তাজরিয়ানের বাবার নাম আব্দুস সামাদ, মা মোছা. মাহমুদা বেগম। বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামে।
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেছেন, আমি বিয়ে করেছিলাম দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার রণগাঁ গ্রামের শামসুদ্দিন আহমেদ ও রেজিয়া খাতুনের প্রথম কন্যা মোছা. সানোয়ারা আক্তারকে (৩২)। ২০১২ সালে আমাদের বিয়ে হয়। এর আগে ২০১০ সালে মোবাইল ফোনে আমাদের পরিচয় হয়।
একই বছরে আমরা দুজনে দিনাজপুর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির হয়ে অ্যাফিডেভিট করি। সে সময় সানোয়ারা আক্তার কুড়িগ্রাম সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে তিন বছর মেয়াদি নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স করছিলেন। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের দেওয়া তার স্টুডেন্ট রেজি. নম্বর ছিল ৩৫২৪৮।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র নার্স পদে সানোয়ারা আক্তারের চাকরি হয়। এর আগে তাজরিয়ান বাবু জানতে পারেন, তাঁর স্ত্রী সনদ জালিয়াতি করে কুড়িগ্রাম সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন।
সানোয়ারা আক্তারের এসএসসি ও এইচএসসি পাসের সনদ থেকে জানা যায়, তিনি দিনাজপুরের রাণীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০০২-২০০৩ সেশনের পরীক্ষার্থী ছিলেন। পাস করেছেন ২০০৫ সালে (রাজশাহী বোর্ড)। তার প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্ট ছিল জিপিএ ২.৭৫, রোল নম্বর-৩৫৯৩৭৮, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৮৩৫৫৮৬/২০০২-০৩।
এরপর ২০০৮ সালে তিনি রাজশাহী বোর্ডের অধীনে দিনাজপুরের চাঁদগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৩.১০ পেয়ে পাস করেন। তার রোল নম্বর ছিল ৮৫০৪৩৩। এইচএসসি পাসের পর সানোয়ারা আক্তার কুড়িগ্রাম গভ, নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তির চেষ্টা করেন।
ওই সময় ঘোষিত সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির জন্য প্রয়োজন ছিল এসএসসি ও এইচএসসি মিলে ৭.৫০ পয়েন্ট। কিন্তু তার এই পয়েন্ট ছিল না। তার ছিল এসএসসি ২.৭৫ ও এইচএসসি ৩.১০ মিলে ৫.৮৫ পয়েন্ট।
এ সময় তিনি একটি সিন্ডিকেটের কাছে যান। তার এসএসসি পাসের সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে কম্পিউটারে টেম্পারিং করে ২.৭৫-এর জায়গায় ৪.৭৫ করা হয়। এতে তার নার্সিং কোর্সে ভর্তি হতে আর কোনো বাধা থাকে না।
তাজরিয়ান বাবু বলেন, গত ২৪ আগস্ট আমি একটি অভিযোগপত্র কুড়িগ্রাম গভ. নার্সিং ইনস্টিটিউটে জমা দিয়েছি। এ সময় আমাকে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ বলেছে, সনদ জালিয়াতির ব্যাপারটি বাংলাদশ নার্সি কাউন্সিল দেখবে। অন্য কারো দেখার এখতিয়ার নেই বলে ইনস্টিটিউট থেকে তাকে জানানো হয়েছে।
তাজরিয়ান বাবু তার অভিযোগপত্র সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়; মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন; রেজিস্ট্রার, বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল; বিভাগীয় কমিশনার, রংপুর; জেলা প্রশাসক, দিনাজপুর; উপপরিচালক, সমন্বিত জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন, দিনাজপুর; সিভিল সার্জন, দিনাজপুর ও অধ্যক্ষ, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে পাঠিয়েছেন।
তাজরিয়ান বাবু বলেন, আমি সানোয়ারাকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলাম, তোমার এসএসসি ও এইচএসসি পাসের যোগ্যতায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অথবা অন্য যেকোনো চাকরি হয়ে যাবে।
কিন্তু সে আমার কোনো কথা রাখেনি। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে, কোলের শিশু ছেলেকে ফেলে রেখে চলে গেছে। যাওয়ার আগে আমাকে বলেছে, আমি একা নই, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সনদ জালিয়াতি করে নার্স পদে আরো ১২ জন চাকরি করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মরত ডাক্তার বলেছেন, গভীর উদ্বেগজনক অভিযোগ। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।