১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সুদের গ্রাম ছিকরগাছার রাজবাড়িয়া সুদের মহাজনের অত্যাচারে গ্রাম ছাড়া অনেক

অভিযোগ
প্রকাশিত জুলাই ১১, ২০১৯
সুদের গ্রাম ছিকরগাছার রাজবাড়িয়া  সুদের মহাজনের অত্যাচারে গ্রাম ছাড়া অনেক

অসহায় পরিবার পর্ব -১

মোঃ সবুজ মাহমুদ,যশোর থেকে : সুদ, সমাজের একটি অভিশাপ। দিনে দিনে গরীব, অসহায় নিন্মো আয়ের মানুষ সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই সুদের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। বাড়ি, ঘর, জায়গা জমি, আত্মীয়, পরিবার পরিজন ফেলে সুদের দেনার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অনেক পরিবার। কোন কোন পরিবার সুদে মহাজনের চাপ আর একমাত্র ভিটেবাড়ি টুকু বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ সহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কথা বলে নানাবিধ হুমকি ধামকির মধ্যে রয়েছে। যার ফলে এক প্রকার গৃহবন্দি ভাবে দিন কাটাচ্ছে আরো কয়েকটি পরিবার।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নে পাওয়া গেল এমন একটি গ্রাম, যে গ্রামে খুঁজে পাওয়া গেল এমন কিছু পরিবার যে পরিবার গুলো সুদের দেনায় জর্জরিত। কেউ কেউ বাড়ি ছাড়া, কেউ কেউ সহায় সম্বল সব কিছু হারিয়ে অন্যের দারস্ত হয়েছে। অভাব দারিদ্রতা এখন যাদের নিত্য সঙ্গি। আনন্দ যাদের দু’চোখ দিয়ে জল হয়ে পড়ে। হাজার কষ্ট, দীর্ঘশ্বাসকে
যারা কষ্টকে আড়াল করে বেঁচে আছে।
বলছিলাম শংকরপুর ইউনিয়নের রাজবাড়িয়ার গ্রামের কথা যে গ্রামে কয়েকজন সুদে মহাজনের অত্যাচারে এমন হৃদয় বিদারক রহস্য রেরিয়ে এসেছে। সরেজমিনে সপ্তাহ ব্যাপি তথ্য অনুসন্ধানে একটি চৌকস সাংবাদিক টিম ঘুরে এলাম রাজবাড়িয়া গ্রাম থেকে। দেখে এলাম সুদের গ্রাম রাজবাড়িয়া কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে সেখানকার মানুষের কাছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের রাজবাড়িয়া গ্রামের জিন্নাহ নামের এক ব্যক্তি এলাকার গরীব অসহায় দুস্থ্য ব্যক্তি বা পরিবারকে চিহ্নিত করে তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মোটা অংকের টাকা সুদের মাধ্যমে ধার দিয়ে থাকে। লাখ টাকায় প্রতিমাসে নিয়ে থাকে চড়া সুদ। যা কিনা প্রতি লাখে ১ হাজার থেকে শুরু করে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। এমন আকাশ ছোঁয়া চড়া সুদের ভারে সুদের টাকা ধার নেওয়া পরিবার গুলো দিনে দিনে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর সুদে নেওয়া টাকার মুল টাকা পরিশোধ তো দুরের কথা বরং সুদের টাকাই পরিশোধ করতে হিমশিম খেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে এই গ্রামের অসহায় পরিবার গুলো। গ্রামের ভুক্তভোগী পরিবার গুলোর জীবন জিবীকার হালচাল এবং তাদের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে জানার পর অভিযুক্ত জিন্নার নাম উঠে আসে প্রথমে। রাজবাড়িয়া গ্রামের এক প্রান্ত অন্য প্রান্ত তন্নতন্ন করে খুঁজার পর এক সময় দেখা মেলে জিন্নার সাথে।
রাজবাড়িয়া গ্রামের ছোট্র বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে কথা হয় তার সাথে। জানতে চাওয়া হয় তার সুদের ব্যবসা এবং তার এত টাকার উৎস কোথা থেকে এলো সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। সাংবাদিক দেখে ক্যামেরার সামনে জিন্নাহ কিছুটা ভয় পেয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও বলে দেয় তার এত টাকার যোগান দাতাদের নাম। কাপা কাপা গলায় লুকিয়ে থাকা থলের বিড়াল বাহিরে বের করে দেয় জিন্নাহ। জিন্নাহ জানায়, এই সুদের ব্যবসায় সে শুধু মাত্র একজন আদায়কারী হিসাবে কাজ করে।
টাকার যোগানদাতা কামাল হোসেন আর আনোয়ার হোসেন আনার নামে দুই সহদর। উভয়ই রাজবাড়িয়া গ্রামের হাজী আমির হোসেনের ছেলে এবং জিন্নাহ একই গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে। অভিযোগকারী ভুক্তভোগীরা হলো শওকত-পিতা মুনসুর আলী, রফিকুল-পিতা লুৎফর সরদার, মোমিন-পিতা বাবর আলী, জাহাঙ্গীর-পিতা রাজ্জাক সরদার, উজ্জল-পিতা রওশন, সবুর খান-পিতা সায়েদ আলী, ই¯্রাফিল-পিতা হাজী নূর ইসলাম সহ অনেকে। সদে মহাজন আনোয়ার হোসেন আনারের সাথে কৌশলে কিছুটা কথা হলেও সাংবাদিক দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে কামাল হোসেন। প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকার দিয়ে দ্রুত সরে পড়ে কামাল হোসেন।
সুদে মহাজনদের সুদের ব্যবসা নিয়ে নাড়া পড়তেই তথ্য অনুসন্ধানের দ্বিতীয় দিনের মাথায় আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে এই মহাজনরা। সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে তোড়জোড় শুরু করে কিছুটা। হুমকি দিতে থাকে পালিয়ে যাওয়া পরিবার গুলোর স্ত্রী সন্তানদের উপর। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর উপর প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি অব্যাহত ছিলো সুদে মহাজনদের। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা বলেন, আজ আমাদের ভিটাবাড়ি কিছুই নাই।
সুদে মহাজনরা নিজেরা থেকেই আমাদের জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে গেছে তবুও এখনও সুদে আসলে তারা অনেক দেনা রয়েছেন। কথা হয় বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তির ফুফুর সাথে, তিনি বলেন, এলাকার সুদে মহাজনরা সুদের টাকার চাপ দেওয়ায় পালিয়েছে পরিবারের সব লোকজন। আজ তারা কোথায় গেছে জানিনা বলে নিরবে কাঁদতে থাকেন তিনি। ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার গুলো প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সুদে মহাজনদের চড়া সুদ আর তাদের অত্যাচারে পালিয়ে যাওয়া পরিবার গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মাছুয়ার রহমান বলেন, আমি শুনেছি আমার এলাকার অনেক পরিবার অভাবের তাড়নাই এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে কিন্তু যখন আমার এলাকার সুদে মহাজনদের বিষয়টি যখন সামনে আসলো আমি হতবাক হয়ে গেছি। এখন আইন আছে প্রশাসন আছে তারা দেখা যাক কি ব্যবস্থা নেয়। আমার কাছেও এইরকম সুদে মহাজনদের শাস্তি হওয়া দরকার।
ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী মজুমদার এর নিকট রাজবাড়িয়া গ্রামের সুদে মহাজনের অত্যাচার ও তাদের সুদের দেনার ভারে এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, এই বিষয়টি আসলেই দুঃখ জনক। যা শুনলাম সেটা সত্য হলে কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। এখনও কোন ভুক্তভোগী অভিযোগ দেয়নি তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031