অভিযোগ ডেস্কঃ বহুল আলোচিত দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে জাতীয় সংসদে ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুক বিচার) (সংশোধন) বিল-২০১৯’ পাস হয়েছে। বিদ্যমান আইনে চাঁদাবাজী, যান চলাচলে বাধাদানসহ ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির দায়ে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেয়ার বিধান রয়েছে। বিলটি পাশের বিরোধীতা করে বিরোধী দল বিএনপির হারুন অর রশীদ ও রুমিন ফারহানা এবং গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেছেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনের লক্ষ্যেই এই দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ বাড়ানোর বিলটি সংশোধনী আকারে সংসদে আনা হয়েছে। মঙ্গলবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এর আগে বিলের ওপর আনিত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবসমুহ কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ আকারে কন্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। বিলটি উত্থাপনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এই বিলের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলেন, এই আইনটির অধীনে এক হাজার ৭০৩টি মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আইনটির মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য আইনটির মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার প্রস্তাব করেন। এর আগে ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের জন্য আইনটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত ৯ এপ্রিল আইনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বিএনপি দলীয় সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বিলটি সম্পর্কে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং বর্তমান সংসদ নেতা ২০০২ সালের ১৮ নভেম্বর বলেছিলেন এই দ্রুত বিচার আইনটি কেন করা হচ্ছে? এখানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের শাস্তি দেয়া হবে আর সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেয়া হবে। এতে দেশের আইনশৃঙ্খলার কোনোই উন্নতি হবে না।’ তিনি বলেন, ‘গত দশ বছরে ঠিক তাই দেখেছি। বিএনপি নেতাকর্মীদের নানা রকম হয়রানি করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে, তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সরকার এই আইনটার মজা এতটাই পেয়েছে যে ২০১৪ সালে এক দফা মেয়াদ বৃদ্ধির পরে আবারও একদফা মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সংসদে নিয়ে আসা হয়েছে। রুনি বলেন, অন্যান্য আইনের মতো এই আইনটিকে স্থায়ী না করে ঠিক নিজের মেয়াদ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে অর্থাৎ যতদিন সরকারি দলে থাকবে ততদিন পর্যন্ত যেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন চালানো যায় সেটাই করা হয়েছে এখানে। এই আইনে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করার অসংখ্য সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি সংসদে প্রশ্ন তোলেন, এই আইন আদৌ থাকার প্রয়োজন আছে কি না? প্রসঙ্গত ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেল প্রথম ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন-২০০২’ সংসদে পাস হয় এবং দুই বছরের জন্য তা কার্যকর হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৬ বার এ আইনের মেয়াদ দুই বছর করে বাড়ানো হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখে এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধে সর্বোচ্চ সাজার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর পর্যন্ত করা হয়। এছাড়া এই আইনে ১২০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ নিষ্পত্তি করার বিধান আছে। এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৬০ দিন সময় পাওয়া যাবে