২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ষিত সমাজ নিয়ে কিছু কথা

admin
প্রকাশিত জুলাই ১০, ২০১৯
ধর্ষিত সমাজ নিয়ে কিছু কথা

Sharing is caring!

 

জামরুল ইসলাম রেজা,
কী কী কারণে একজন পুরুষের ধর্ষণ করতে ইচ্ছে করে? অনেকক্ষণ ধরে ভাবার চেষ্টা করছি। তর্কের খাতিরে অনেকগুলো অপশন ভাবলাম। যৌন উত্তেজক পোশাক, সেক্সি ফিগার, স্তনের ভাঁজ, নিতম্বের দোলানী এরকম বেশ কয়েকটা পয়েন্ট মনে হলো। তবে ভাবনাটা বাতিল করে দিলাম।

কারণ সায়মা মেয়েটার বয়স মাত্র সাত বছর। সাত বছরের একটা মেয়ের স্তনে ভাঁজ নেই, নিতম্বের দোলানী নেই, সেক্সি ফিগারও থাকার কথা না, এসব যেহেতু নেই, যৌন উত্তেজনা বা সুরসুরি জাগায় এমন ত্রুটি পূর্ণ পোশাকের প্রশ্নও আসছে না। তাহলে বাগদাদের খলিফার নামে নাম হারুন অর রশীদ মানুষটা সাত বছরের একটা মেয়েকে কেন ধর্ষণ করলো? ধর্ষণের পর খুনই বা কেন করলো? কারণটা আমি জানি। সম্ভবত আপনিও জানেন। কারণটা এই পোস্টের একদম শেষে বলেছি। ধৈর্য ধরতে না পারলে আগেভাগেই মিলিয়ে নিতে পারেন।

একটা মানুষ হুট করে জন্ম হয় না। অনেক প্রক্রিয়া, স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষার পরই একটা মানুষ জন্ম নেয়। তাকে ঘিরে চলে পরিবারের আয়োজন, নতুন করে স্বপ্ন বোনা। সেই প্রাণটাকে আপনারা জোর করে ধর্ষণ করেন। তারপর কী অবলীলায় তাকে মেরেও ফেলেন। মানে জিনিসটা যেন একটা সাধারণ পিঁপড়া কিংবা মশা, মাছি। টিপ দাও কিংবা পিষে দাও, মরে গেলো। মামলা ডিসমিস। বিষয়টা এতই সহজ? প্রথমে ধর্ষণ তারপর মেরে ফেলা!

মাদ্রাসার একজন অধ্যক্ষ। তার কাজ খোদার পবিত্র কালিমা পড়ানো। আর তিনি কী না কম্পিউটারে ভরে রেখেছেন পর্ণো ভিডিও। একাধিক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। তারা যাতে বাইরে মুখ না খোলে সে জন্য কোরআন শরীফে হাত ছুঁইয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছেন। কোরআন শরীফের এতো বাজে ব্যবহার ইতিহাসে আর কখনো হয়েছে কি না আমার জানা নেই।

আরেক স্কুল শিক্ষক। তিনি শুধু ছাত্রী ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হন নি। সেই ভিডিও দেখিয়ে ছাত্রীর মায়েদেরও ধর্ষণ করেছেন। দিনের পর দিন। সিরিয়াসলি! এইরকম বোকা মাও আছেন আমাদের? অবশ্য মায়ের দোষ দিয়ে লাভ নাই। মা জানে তার মেয়েটার ভিডিও বাজারে ছড়ালে মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, বিয়ে হবে না। নারী হয়ে জন্ম নেয়া অসহায় মায়েরা আর কী’ই বা করতে পারতেন!

ধর্ষকদের পশুর সাথে তুলনা করা হয়। যদিও পশু সমাজে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে না। একটা ঘাই হরিণ বিশেষ শব্দে আরেকটা হরিণকে আকৃষ্ট করে। তারপর মিলিত হয়। সহজ হিসাব, আপনার সেক্স করতে ইচ্ছে করছে আপনি যোগ্যতা দিয়ে আপনার সঙ্গিনীকে ম্যানেজ করুন। না পারলে দেশে এখনো পতিতালয় আছে। সেখানে গিয়ে তৃষ্ণা মেটান। তবু সাত বছরের একটা মেয়েকে রেহাই দিন। পূর্ণ বয়স্ক একজন যুবতী কিংবা একজন বৃদ্ধাকে রেহাই দিন। একটা ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যা শুধু একটা মানুষকে হত্যা করা নয়। কোরআনে তো বলাই আছে যে একটা মানুষকে হত্যা করে সে যেন সমগ্র মানব জাতিকেই হত্যা করে।

এই যে ধর্ষকরা সমগ্র মানব জাতিকে ধর্ষণ করছে, খুন করছে তাতে আসলে ধর্ষক বা খুনীদের দোষ নেই। পোশাকের দোষ, চেহারার দোষ, সুরসুরির দোষ যারা খুঁজে বেড়ান- দোষী আপনারাই। দায়ী আপনারাই। একটা ধর্ষণ এবং হত্যার পর আপনারাই আরেকটা ধর্ষণ এবং খুনের ক্ষেত্র তৈরি করে দেন। দায়ী আমাদের আইন ব্যবস্থা। একজন ধর্ষক এবং একজন খুনীকে বাঁচাতে আমাদের আইনের লোকেরা কী ধরনের ব্যবস্থা নেয় আমরা তা জানি। ধর্ষক এবং খুনীদের একটা দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারা আমাদের অথর্ব আইন আদালতের মারপ্যাঁচ আরেকজন ধর্ষক এবং খুনীর তৈরি হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়।

ধর্ষক জানে তাকে বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে আসবেন, আইন এগিয়ে আসবে, বিচার ব্যবস্থা ঝুলে যাবে। তাই সে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করেই থামে না, তাকে হত্যাও করে।

সাত বছরের ফুটফুটে বাচ্চা সায়েমার ভ্যাজাইনাতে রক্ত পাওয়া গেছে, গালে, ঠোঁটে কামড় হাচরের দাগ পাওয়া গেছে। এইসব দেখেও না দেখার ভাণ করে যাচ্ছেন যান। ভাত মাখাতে গিয়ে খেয়াল করলে দেখবেন আপনার আঙ্গুলে লেগে আছে ছোট্ট বাচ্চা সায়মার ভ্যাজাইনার রক্ত। ঘুষ আর দুর্নীতির টাকা গোনার সময় খেয়াল করে দেখবেন সেই টাকায় একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ের ভ্যাজাইনার রক্ত লেগে আছে।

যদিও জানি তাতে কারো কিছু যায় আসবে না।

নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে আমার। ঘৃণা হচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হয়ে জন্মানোর জন্য। আপনারা এই লেখাটা যখন পড়বেন তখন লক্ষ্য করে দেখুন আপনার হাতেও লেগে আছে সাত বছরের একটা নিষ্পাপ ফুলের ভ্যাজাইনার রক্ত।

একজন মানুষ হিসেবে এই রক্তের দায় আপনি এড়াতে পারেন না।