Sharing is caring!
মহিবুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রবিবার (১২ এপ্রিল) হঠাৎ অর্থনৈতিক ছন্দ পতনে প্রেমের কাছে হেরে গেলো এক প্রেমিকের ভালোবাসা। অর্থের করনেই প্রেমের সমাধি হলো স্ত্রী ভক্ত এক বউ পাগলের। স্ত্রীর ভালোবাসা পেতে অবশেষে বিদায় নিলো কুষ্টিয়ার হালসার প্রতিভাবান এক যুবক।
শুক্রবার সকালে ঢাকা-নারায়গঞ্জ একটি ব্রিজের আড়া থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এটি হত্যা না, আত্মহত্যা তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে।
জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসার বাজারে ফজলুর রহমানের একমাত্র পুত্র শামীম সুলতান রাজু(২৮) কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলো। চাকুরীর পাশাপাশি আউট সোর্সিং এর কাজ করত। কর্মরত অবস্থায় অনেক সম্পদের মালিক হন।
অর্থ সম্পদের কারনেই ভালো পরিবারের শিক্ষিত মেয়ের খোঁজ করতে থাকেন। এর মাঝে রাজুর সাথে কর্মরত এক যুবকের তথ্যে ইশিতা নামের এক পাত্রীর পরিচয় পান।
ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে পাত্র রাজু ও পাত্রী ইশিতার সম্পর্ক অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। অবশেষে পারিবারিক ভাবে দেখাশোনার পর দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ গ্রামের মৃত ইছাহক আলীর কন্যা ইশিতার সাথে রাজুর গত ২০১৭ সালের ২২শে অক্টোবর বিয়ে হয়।
বিয়ের সময় ইশিতা কুষ্টিয়ার একটি ম্যাটসে অধ্যানরত ছিলো। স্বামী শামীম সুলতান রাজু তাকে সকল সহযোগিতা দিয়ে পাশ করিয়ে স্ত্রীকে ঢাকায় নেন।
ঢাকায় গার্মেন্টস বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে চাকুরী দেন স্বামী রাজু। চাকুরী দেয়ার পর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা শুরু হয় রাজুর। অবাধ্য হয়ে যায় স্ত্রী ইশিতা।
এরই সাথে শেয়ার বাজার ধ্বংস থেকে শুরু করে আউট সোর্সিং ব্যবসায় ধ্বংস নামে। বিপদে পড়ে রাজু তার গচ্ছিত অর্থ সম্পদ সব নিঃশেষ হয়ে যায়। স্ত্রীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তাকে না জানিয়ে নিজের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ড্রাইভিং এর কাজে ব্যবহার করত। সংসারের সবকিছু সামলিয়েও রাজু তার স্ত্রী ইশিতার মন পেল না ।
এমতাবস্থায় স্ত্রী স্বামীর মোটর সাইকেলের ভাড়া চালানোর বিষয়টি টের পেয়ে যায়। স্ত্রী ইশিতা এ বিষয়টিকে অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অপমানজনক মনে করে তার বাড়িতে জানায়। ইশিতার বাড়ির লোকজন অগ্নিশর্মা হয়ে মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে বলেন। এতে মেয়েটিও আলাদা হয়ে যায়।
মেয়েটি নিজ পরিবারের কথা শুনে বিগত সময়ে স্বামী রাজুর পরিবারকে তুচ্ছ কথাবার্তাকে পুজি করে স্বামীকে এক তরফা তালাক দিলেন। গত ২০১৯ সালে ১২ সেপ্টেম্বর শামীম সুলতান রাজুকে তালাক দিলে সে স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। আইনী পরামর্শ সহ আইনজীবীদের পরামর্শ নেন। ফতোয়া চান হাক্কানি ওলামা কেরামদের কাছে। হক্কানী দরবার তাদের বিবরন শুনে এক তরফা তালাক প্রদানের বিষয়ে তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন। স্বামী রাজু তার স্ত্রীকে নেয়ার জন্য তাদের উভয়ের পরিবারের সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মেয়ের অভিভাবক কোন ক্রমেই তাতে রাজী হয়নি।
এরপরেও রাজু মেয়েটির ভালবাসায় পিছু পিছু ঘুরতে থাকে। রাজুর ভালবাসার দূর্বলতাকে মেয়েটি মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। ডিভোর্জ দেয়ার পর সকলের অজান্তে তারা রুম ভাড়া করে ঢাকায় মিরপুরে থাকত। মেয়েটি রাজুর কাছ থেকে সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহন করলেও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেই চলে।
এমতাবস্থায় দেশে করোনা ভাইরাসের প্রদূর্ভাবে সারা দেশের মানুষ গৃহবন্দি। রাজুও অর্থনৈনিক সংকটে পড়ে। এ জন্য রাজু বাড়ি থেকে ১০ হাজার টাকা চেয়ে নেয়। কিন্তু ওই টাকায় কয়দিন যায়..?
চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে তার জীবন দূর্বিসহ হয়ে ওঠে। না পারে স্ত্রীকে বলতে না পারে পারিবারিক সমস্যা সমাধান করতে।
তাই তার দূর্বিসহ দিন নিয়ে ” shamin sultan” এই আইডিতে তিনি ক্ষোভ, মান, অভিমান, দুটি পরিবারের অনেক কেই দোষারোপ করে একটা স্ট্যাটাস দেয়।
ওই স্ট্যাটাস দেয়ার একদিন পরেই নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ ব্রীজে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়। উল্লেখ যে আত্মহত্যার যেসব আলামত সেসব আলামত লাশের ছিলনা বলে প্রত্যাক্ষদর্শীরা বর্ননা করেন। তার শরীরে মুখে সহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনাটি হত্যাকন্ড না আত্মহত্যা তা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
তাই তার পরিবার পুলিশ বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগ সহ আইন শৃংখলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী নিহত রাজুর পরিবারের।