২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

রিয়াকে বিয়ে করেছিলেন সাদ্দাম, তারপরেও ঘনিষ্ঠতা মায়ের সঙ্গে

admin
প্রকাশিত মার্চ ৪, ২০২০
রিয়াকে বিয়ে করেছিলেন সাদ্দাম, তারপরেও ঘনিষ্ঠতা মায়ের সঙ্গে

Sharing is caring!

রমা-রিয়া ও সাদ্দাম ● ভারতীয় গণমাধ্যম

 

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রিয়ার সঙ্গে আইনি পদ্ধতি মেনে বিয়ে হয়েছিল সাদ্দামের। তাদের রেজিস্ট্রি বিয়ের শংসাপত্রও মিলেছে। হলদিয়ায় মা-মেয়েকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়ে পুলিশ।

 

 

শুধু তাই নয়, হলদিয়ার ভাড়াবাড়ি থেকে রিয়ার লেখা একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছে তারা। সেখান থেকেও মিলেছে নানা তথ্য। ব্ল্যাকমেল না কি ত্রিকোণ সম্পর্কের জের— ঠিক কী কারণে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা সম্পর্কে মা ও মেয়ে রমা এবং রিয়া দে-কে? জোড়া খুনের ‘মোটিভ’ বার করতে এখনও রীতি মতো হিমশিম খাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

 

অভিযুক্ত সাদ্দামকে জেরা করে তদন্তকারীরা যখন ভাবছিলেন, ব্ল্যাকমেল থেকে মুক্তি পেতেই মা-মেয়েকে খুন করা হয়েছে, ঠিক তখনই তাদের হাতে আসে একটি ডায়েরি। রিয়ার লেখা সেই ডায়েরির পাশাপাশি হলদিয়ার ভাড়াবাড়িতে তদন্তকারীরা খুঁজে পান একটি রেজিস্ট্রি বিয়ের শংসাপত্রও। এই দু’টি জিনিসই তদন্তের মোড় পুরো ঘুরিয়ে দিয়েছে।

 

 

ব্ল্যাকমেল তত্ত্বের পাশাপাশি উঠে এসেছে মা-মেয়ের সঙ্গে সাদ্দামের ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কও।

 

 

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, হলদিয়ার যে ভাড়াবাড়িতেরমা-রিয়া থাকতেন, সেখানে তল্লাশি চালানোর সময় আলমারির পেছনে লুকিয়ে রাখা একটি রেজিস্ট্রি বিয়ের শংসাপত্র পাওয়া গিয়েছে।

 

 

শংসাপত্রটি দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কাগজটি কেউ ছিঁড়ে টুকরো টুকরো ফেলেছিলেন। পরে সেই ছেঁড়া কাগজের টুকরোগুলো অনেক ধৈর্য নিয়ে কেউ জোড়াও লাগিয়েছেন।

 

 

ওই শংসাপত্র অনুযায়ী, ‘‘২০১৮ সালে রিয়ার সঙ্গে আইন মেনে বিয়ে হয়েছিল সাদ্দামের। পুলিশ পরবর্তীতে ওই শংসাপত্রে উল্লেখ থাকা ম্যারেজ রেজিস্টারের সঙ্গে কথা বলে।’’ জানা গেছে, শংসাপত্রটি আসল।

 

হলদিয়ার ওই ভাড়াবাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে একটি ডায়েরিও খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

 

 

পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, হিন্দি-ইংরেজি ও বাংলায় ওই ডায়েরিতে মাত্র পাঁচ পাতা লেখা হয়েছে। হাতের লেখা এবং বয়ান দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ওই ডায়েরি লিখেছিলেন রিয়া।

 

 

এক তদন্তকারী বলেন, যা লেখা হয়েছে তার অনেকটাই কাটাকুটিতে ভরা। তবে যতটুকু পড়া যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, ফেসবুক বা অন্য কোনওভাবে রিয়ার মা রমার সঙ্গেই প্রথম আলাপ হয়েছিল সাদ্দামের। শুধু আলাপ নয়, রমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও ছিল তার।

 

 

ওই তদন্তকারীর ইঙ্গিত, সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই রমা হলদিয়ায় এসে ভাড়াবাড়িতে থাকা শুরু করেন। সাদ্দামও সেখানে নিয়মিত যেতেন। কখনও কখনও মায়ের কাছে হলদিয়ায় যেতেন রিয়াও।

 

 

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, সাদ্দামকে মায়ের বন্ধু হিসাবে চিনলেও, পরের দিকে তার সঙ্গেই রিয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়। রিয়া নিজেই সে কাথা লিখে গিয়েছেন তার লেখা ডায়েরিতে।

 

 

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, রমার সঙ্গে তার স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে তিনি মুম্বাই ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন। সেই সময়ে সাময়িকভাবে রিয়ার পড়াশোনাতেও ছেদ পড়ে। কিন্তু ২০১৯ সালে ফের দূরশিক্ষার মাধ্যমে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রিয়া। তাই পড়াশোনার প্রয়োজনে হলদিয়ায় মায়ের কাছে না থেকে নিউ ব্যারাকপুরে থাকছিলেন তিনি।

 

এক তদন্তকারীর কথায়, হলদিয়ায়রিয়ার না-থাকাটাই সাদ্দামকে ফের রমার কাছে এনে দেয়। মায়ের সঙ্গে সাদ্দাম যে নতুন করে আবার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে তা কোনওভাবে বুঝতে পারেন রিয়া। আর সেখান থেকেই শুরু সম্পর্কের টানাপড়েন।’

 

 

জেরার সময় সাদ্দাম স্বীকার করেছেন মা-মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা।

 

 

জেরায় সাদ্দাম দাবি করেছেন, সম্প্রতি রমা অন্য কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। রিয়াও অন্য এক যুবকের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন।

 

 

পাশাপাশি বিয়ের ওই শংসাপত্র দেখিয়ে টাকা দাবি করতে থাকেন রমা। আর সেখান থেকে গণ্ডগোলের সূত্রপাত বলে দাবি করেছেন সাদ্দাম। কিন্তু খুনের সিদ্ধান্ত তিনি কেন নিলেন, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে তদন্তকারীদের মনে।

 

তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে অন্য দিনের মতোই রমাদের ভাড়াবাড়িতে মদ খাওয়ার আসর বসে। জেরায় সে কথা সাদ্দামই জানিয়েছেন। তার দাবি, রিয়া মদ খেতেন না। সাদ্দাম ছাড়াও ওখানে ছিলেন তার কয়েকজন বন্ধু। ওইদিন রাত ৮টা নাগাদ চাউ কিনে নিয়ে আসেন রিয়া। রাতে ওই চাউ খান রিয়া-রমা। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই খাবারেই ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বেহুঁশ করা হয় মা-মেয়েকে।

 

 

জেরায় তদন্তকারীদের সাদ্দাম এবং বাকি ধৃতরা জানায়, ওই রাতে বেঁহুশ মা-মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুনের পরিকল্পনা করে সাদ্দাম এবং তার বন্ধুরা। সেই মতো গলা টিপে ধরাও হয়। সাদ্দাম এবং তার সঙ্গীরা যখন নিশ্চিত হন, দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে, তখন নদীর ধারে মাটিতে পুঁতে ফেলার কথা ভাবা হয়। সাদ্দামের অন্যতম সঙ্গী মনজুরের বাড়ি হলদি নদীর পাড়েই। তার বাড়ি থেকেই কোদাল নিয়ে গিয়ে নদীর ধারে গর্তও খোঁড়া শুরু হয় দেহ দু’টি পোঁতার জন্য।

 

 

সাদ্দাম এবং তার সঙ্গীরা পুলিশকে জানায়, ঠিক ওই সময়েই একটি দেহ নড়ে ওঠে। তাতে তারা বুঝতে পারেন, মৃত্যু হয়নি মা-মেয়ের। সঙ্গে সঙ্গে মনজুরের বাড়ি থেকে পেট্রল নিয়ে এসে মা-মেয়ের গায়ে ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

 

তবে তদন্তকারীরা সাদ্দাম বা তার সঙ্গীদের কথা পুরোটা সত্যি বলে মানতে পারছেন না। কারণ, ময়নাতদন্তে জানা গেছে, দু’জনকেই জীবিত অবস্থায় পোড়ানো হয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, খুনের ঘটনায় যুক্ত বাকিদের পাকড়াও করতে পারলে, তাদের আলাদা আলাদা করে জেরা করলেই আসল ঘটনা জানা যাবে।

 

 

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত আমিনুর হোসেন ওরফে সিন্টুকে মুম্বাইয়ের গোরেগাঁও থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে হলদিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট ৪ জনকে নিজেদের কব্জায় পেয়েছে পুলিশ।