২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বনাথে বাড়ির সীমানা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ : আহত ১২

admin
প্রকাশিত মে ২৮, ২০১৯
বিশ্বনাথে বাড়ির সীমানা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ : আহত ১২

Sharing is caring!

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বিশ্বনাথে বাড়ির সীমানা নিয়ে চলমান বিরোধের জের ধরে পুলিশের উপস্থিতিতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামের সফিক উদ্দিন ও পঞ্চায়েত পক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ, স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মহিলাসহ অন্তত ১২জন আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশসহ একটি পক্ষ প্রতিপক্ষের একজনের বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-লুটপাট ও মহিলাদের উপর লাঠিচার্জের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আহতরা হলেন- পঞ্চায়েত পক্ষের মৃত মনোহর আলীর পুত্র ইরন মিয়া (৪০), আশির মিয়ার পুত্র ইমন মিয়া (১৮), সফিক আলীর পুত্র আতিকুর রহমান (১৯), মৃত আব্বাস আলীর পুত্র আব্দুল মজিদ (৫০), আপ্তাব আলীর স্ত্রী আয়না বিবি (৫০), সফিক উদ্দিন পক্ষের তার পুত্র সাইফ উদ্দিন (২৯), রুবেল উদ্দিন (২৭), মৃত সামছুদ্দিনের পুত্র জমির উদ্দিন (৩৫), মৃত আব্দুল জলিলের পুত্র সুহেল মিয়া (৩২), মৃত সিরাজ উদ্দিনের পুত্র জামাল উদ্দিন (৪৫), স্থানীয় ইউপি সদস্য আমির উদ্দিন (৪০) ও থানা পুলিশের কনস্টেবল মামুন। গুরুতর আহতরা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, এ ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে থানাপুলিশ। আটককৃতরা হলেন- কিশোরপুর গ্রামের আপ্তাব আলী, জুয়েল মিয়া, জিয়া উদ্দিন, শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসা একই ইউনিয়নের কান্দিগ্রামের আলা মিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কিশোরপুর গ্রামের মৃত মৌলভী মফিজ উদ্দিনের পুত্র জিয়া উদ্দিন ও তার প্রতিবেশী মৃত সমশের আলীর পুত্র সফিক উদ্দিনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে গত প্রায় ১৫ দিন পূর্বে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর গ্রামবাসী বিষয়টি আপোস-মীমাংসা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এজন্য উভয়পক্ষকে টাকা আনামতির জন্য (জামানত) গ্রামের মুরুব্বিরা বলেন। এতে জিয়া উদ্দিন পক্ষের লোকজন সম্মতি জানালেও সফিক উদ্দিন পক্ষ টাকা আনামতি দিয়ে বিচার বৈঠকে বসতে সম্মত হননি। ফলে জিয়া উদ্দিনের পক্ষে অবস্থান নেন গ্রামবাসী। একপর্যায়ে গত রোববার রাতে পঞ্চায়েতের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সাইফ উদ্দিন পক্ষের লোকজন গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। পাশাপাশি পঞ্চায়েতি কোনো কর্মকান্ডে তাদেরকে সামিল না করার সিদ্ধান্ত হয়। পঞ্চায়েতের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল সোমবার সকালে সাইফ উদ্দিন পক্ষের লোকজনকে গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলাচল না করতে বলেন আব্দুল মজিদ, আব্দুল গফুর, সাবুল মিয়া’সহ গ্রামের মুরুব্বিরা। কিন্তু পঞ্চায়েতের বাধা-নিষেধ অমান্য করে গ্রামের রাস্তা ব্যবহার করে জোহরের নামাজ পড়তে গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় সাইফ উদ্দিন বাড়ি থেকে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হন। তাকে বাধা প্রদান করেন পঞ্চায়েত পক্ষের লোকজন। এক পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নাম্বারে কল করেন সাইফ উদ্দিন পক্ষের জামাল উদ্দিন। কল যাওয়ার পর সেখান থেকে থানাপুলিশের কাছে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশনা আসে। বিশ্বনাথ থানার এসআই রসুল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং সাইফ উদ্দিন পক্ষের লোকজনকে সাথে নিয়ে সরেজমিন বিষয়টি তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতেই দু’পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে ছুরিকাঘাতে পঞ্চায়েত পক্ষের ৪ জন ও থানাপুলিশের কনস্টেবল মামুন, স্থানীয় ইউপি সদস্য আমির উদ্দিন সহ উভয়পক্ষের ১১ জন আহত হন। ঘটনার খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাঠিচার্জ করলে পঞ্চায়েত পক্ষের আপ্তাব আলীর স্ত্রী আয়না বিবি আহত হন। এসময় পঞ্চায়েত পক্ষের আপ্তাব আলী, সফিক মিয়া ও মনোহর আলীর বসতঘরে হামলা, ভাঙচুর ও স্বর্ণালংকার লুটপাটের অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ঘটনার পর পঞ্চায়েত পক্ষের আপ্তাব আলী, জুয়েল মিয়া, জিয়া উদ্দিন ও গ্রামের আত্মীয় আলা মিয়াকে আটক করে থানা পুলিশ। তবে বিশ্বনাথ থানার এসআই রসুল হোসেন বলেন, ৯৯৯ থেকে আমাদের কাছে কল আসলে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। অভিযোগকারী জামাল উদ্দিনের কাছে বিষয়টি জেনে তাদেরকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে জিয়া উদ্দিন ও তার সহযোগীরা আমাদের উপর হামলা করে।

চার জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ থানায় অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।