৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ভালোবাসা দিবসের ফসল : সিলেটের রাস্তায়, ডাস্টবিনে নবজাতকের লাশ

অভিযোগ
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
ভালোবাসা দিবসের ফসল : সিলেটের রাস্তায়, ডাস্টবিনে নবজাতকের লাশ

এম আব্দুল করিম,সিলেট জেলা প্রতিনিধি ::

সিলেটে একের পর এক নবজাতক উদ্ধার হচ্ছে। কখনো জীবিত কখনো মৃত। শুধু রাস্তায় নয়! কখনো হাসপাতালের পরিত্যক্ত স্থানে, কখনো ডাস্টবিন, ড্রেন, ডোবা-নালা, ঝোপঝাড়ে।

 

এসব নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও জড়িতরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

 

গত ছয় মাসে প্রায় ১২টি নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে শপিং ব্যাগে, পথে কিংবা রেল লাইনের পাশে, আবার কেউ ময়লার স্তুুপে ও ডাস্টবিনে।

 

তবে পুলিশ বলছে, মানুষের মধ্যে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের পাশাপশি ধর্মীয় অনুভূতি কমে গেছে। পরকীয়া বা অবৈধ শারীরিক প্রেমের ফসল নিষ্পাপ এসব নবজাতক শিশু। এদের কেউ মারা যাচ্ছে আবার কেউ বেঁচে যাচ্ছে ভাগ্যগুণে। তবে যারা বাচঁছে তারা হয়ে যাচ্ছে সমাজের চোখে অন্যরকম।

 

১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ : সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে উপজেলার রেল স্টেশন এলাকা থেকে এক অপরিপক্ক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। বুধবার সকালে রেল লাইনের ওপর ফেলে রাখা নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 

২০ ডিসেম্বর ২০১৯: সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে সেতুর পাশের সড়ক থেকে শুক্রবার দুপুরে একটি অপরিপক্ক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফেঞ্চুগঞ্জ সেতুর পাশের সড়ক থেকে কাপড় দিয়ে মোড়ানো একটি অপরিপক্ক ছেলে শিশুর লাশ উদ্ধার করে। এরপর মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 

৫ অক্টোবর ২০১৯ : হাসপাতালে ভর্তি করে ওষুধ আনার কথা বলে বাবা নবজাতক সন্তানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেখে উধাও হয়ে যায়। এরপর দুই দিন হয়ে গেলেও নবজাতকের কোন অভিভাবকের খোঁজ মিলেনি।

 

পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শিশুটিকে সিলেট অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে। বিচারক শিশুটিকে বাগবাড়িস্থ শিশু নিবাসে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

 

২৮ আগস্ট ২০১৯ : সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জেনারেটর কক্ষের সামনের ফ্লোরে ৭-৮ দিনের এক নবজাতক (ছেলে) অবিরাম কান্নাকাটি করছিল। কান্নার শব্দ পেয়ে লোকজন পুলিশকে খবর দেন।

 

পরে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) রীতা বেগমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে নেয়া হয় থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। পরদিন নবজাতকের দাবীদার না থাকায় তাকে আদালতের মাধ্যমে বাগবাড়িস্থ ছোটমনি নিবাসে পাঠানো হয়।

 

৫ আগস্ট ২০১৯ : নগরীর বাগবাড়ী এতিম স্কুল রোডে এক নবজাতকের মরদেহ খুবলে খেয়েছে শেয়াল ও কুকুর। খবর পেয়ে পুলিশ শিশুটির দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে।

 

ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নরসিং টিলা ব্রিজের সামনে এক ছিন্ন-ভিন্ন মরদেহ দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। এরপর পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালের মর্গে রাখে।

 

২৭ আগস্ট ২০১৯ : ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেইটের কাছ থেকে এক নবজাতক শিশুকে উদ্ধার করেছে হাসপাতাল পুলিশ।

 

দুপুরে হাসপাতালের গেইটে ওই শিশুকে দেখে কুলে তুলে নেন পুলিশ কনস্টেবল সাকেরা আরফিন রিয়া। বর্তমানে ওই শিশুটি পুলিশ হেফাজতে আছে। শিশুর কোন অভিভাবকের সন্ধান না পেয়ে পুলিশ শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে বাগবাড়িস্থ ছোটমনি নিবাসে পাঠানো হয়।

 

১৯ জুলাই ২০১৯ : সিলেট নগরীর খাসদবির এলাকায় শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওইদিন জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা ব্যাগটি দেখে সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দেন।

 

পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ব্যাগটি খুলে দেখতে পায় মৃত এক নবজাতকের লাশ। এরপর লাশটি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

 

১৭ মে ২০১৯ : ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নবজাতক শিশুকে রেখে পালিয়ে যায় এক দম্পতি। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক ও পুলিশ শিশুটির দেখভাল করে।

 

পরদিন শিশুটিকে সুস্থ হিসেবে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শিশুটিকে সিলেট অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে গেলে আদালত শিশুটিকে সিলেট শিশু নিবাসে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

 

২৯ জানুয়ারী ২০১৯: ওই দিন বিকেলে নগরীর ক্বীনব্রিজ সুরমা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় সদ্যোজাত এক শিশুর মরদেহ। স্থানীয়রা সার্কিট হাউসের সামনে নদীতে ভাসমান অবস্থায় ওই নবজাতকের লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

 

সমাজ বিশ্লেষক কবি নিজাম উদ্দিন সালেহ বলেন, এই অবক্ষয় আমরা কোনোভাবেই ঠেকাতে পারছি না। নৈতিক শিক্ষার দিক থেকে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি, যা উদ্বেগজনক। আমাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে, আদর-ভালোবাসাও হারিয়ে যাচ্ছে। তাই ফুটফুটে জীবিত বাচ্চাকে ময়লায় ফেলে আসতে কুণ্ঠাবোধ করছি না। তাই আমাদেরকে আগে মানুষ হতে হবে।

 

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া ও কমিউনিটি সার্ভিস) মো. জেদান আল মুছা বলেন, নবজাতক উদ্ধারের ক্ষেত্রে অপমৃত্যু মামলা হয়, আর তা গুরুত্বসহকারেই তদন্ত করা হয়। কিন্তু এখানে কিছু তথ্যা প্রমাণের ঘাটতি থাকে। তাই এসব মামলার আগ্রহটাও কম থাকে। আর উদ্ধারকৃত নবজাতকের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর তার ডিএনএ প্রোফাইল করে রাখা হয়। যাতে সন্দেহভাজন কাউকে আটক করলে তার সাথে ডিএনএ মিলিয়ে দেখা যায়। কিন্তু ঘটনাটি ক্লু-লেস হওয়ায় অনেক সময় জড়িতদের আটক করা সম্ভব হয় না।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031