Sharing is caring!
এইচ এম আমান, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি :
কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের কটেজগুলো ‘পাপের স্বর্গরাজ্যে’ পরিণত হয়েছে। সাইনবোর্ডধারী হোটেল এর আড়ালে এখানে চলে মা’দকবাণিজ্য।
‘ওপেন সিক্রেট’ চলছে ইয়াবা ও পতিতার হাট। সকাল-সন্ধ্যা কটেজ জোনের বিভিন্ন সড়কে বিচরণ অপরাধীদের। বিশেষ টোকেন এর মাধ্যমে কটেজে প্রবেশ করে এসব অ’পরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে রাত ১২টার পর চলে রমরমা ব্যবসা। যেন শহরের কটেজ জোন একটি মিনি পতিতালয়। এসব কাজে সরাসরি জ’ড়িত রয়েছে অনেক মালিক ও কর্মচারী।
তাছাড়া পতিতা-খদ্দের খোঁজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু-কিশোরদেরও। কমিশন ভিত্তিতে পতিতা ও মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে কিছু রিক্সা ও সিএনজি চালক।
নিরাপদ এলাকা হিসাবে মাঝারী থেকে বড় মাপের ব্যক্তিরাও কটেজ জোনে গিয়ে তাদের আকাম-কুকাম সারছে প্রতিনিয়ত। তবে এদের কোন ভ’য় নেই।
কক্সবাজার থানা পুলিশ রয়েছে এসব অপরাধীদের পাশে! মাসিক চুক্তিতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার জন্য এসব অবৈধ ব্যবসা অনেকটা নির্বিঘ্ন ও ঝামেলামুক্ত!
কেবল টাকা দেয়ার হেরফের হলেই চলে মাঝেমধ্যে আয়েশী অভিযান। সব মিলিয়ে পুলিশী সহযোগিতায় পর্যটন নগরীরর কটেজ জোন অ’পরাধ ও অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রের দাবী, এক সময় দিনের বেলায় হলেও এখন দিন রাত ২৪ ঘন্টাই চলছে কটেজ জোনের অপকর্ম। হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন দামের পতিতা ও নেশাজাতদ্রব্য। এসব কাজে জড়িত রয়েছে স্থানীয় রাঘববোয়ালরা।
প্রতিদিন অপরাধ করেও রহস্যজনক কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। কটেজগুলোর নিয়ন্ত্রক সংগঠক থাকলেও অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা তারা। এ কারণে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন নগরীর কটেজ জোন ‘পাপের স্বর্গ রাজ্য’-তে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগ ওঠেছে, এই কটেজ জোনের অধিকাংশ ব্যবসায়ী এখন পর্যটন ব্যবসা ছেড়ে পতিতার ব্যবসার দিকে ঝুকে পড়েছে। প্রতিরাত বিরাতে পতিতার ঢল নামে এখানে।
পতিতা ব্যবসাকে দেহ শিল্পে রুপ দিয়েছে অসাধু কটেজ মালিকরা। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শ’ক্তিশালী সি’ন্ডিকেট জ’ড়িত। সিএনজি-রিক্সা চালকদের সাথে মোবাইল নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে চলে এ ব্যবসা।
তবে এবার নতুন করে পর্যটন মৌসুমে টার্গেটে নেমেছে অসাধু কটেজ মালিক ও কর্মচারী। তাদের টার্গেট রোহিঙ্গা পতিতা সংগ্রহ করে কটেজ ও হোটেল পরিচালনা করা।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে ইয়াবা ও পতিতা ব্যবসায় জড়িত বেশ কয়েকটি কটেজের নাম। যারা কৌশলে চালাচ্ছে এসব অপকর্ম। সরেজমিন গিয়ে পর্যটক সেজে কথা হয় কটেজ জোনের বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সাথে।
পর্যটক পরিচয় দেয়ায় এগিয়ে আসে এক কর্মচারী। দেখা মিলে দরজার ভেতরে পতিতা। বাইরে চেয়ার নিয়ে বসে আসে কর্মচারী। গেইটে যাওয়া মাত্রই বলেন-প্রতিটা রুমে রয়েছে পতিতা।
আপনাদের যেটা পছন্দ সেটা নিতে পারবেন। এরআগে টোকেন নিয়ে ঢুকতে হবে কিন্তু। এভাবেই চলছে পতিতা এবং খুচরা মাদক নিয়ে। এছাড়া ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে হোটেল মোটেল জোন ও কটেজে রোহিঙ্গা পতিতার আনাগোনা বেড়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান-কটেজ জোন এখন পতিতার জোন বললে চলে। পাপের ঘাটি হিসেবে এখন একটাই পরিচয় কটেজ জোনের। জানা গেছে-সবচেয়ে বেশি হারে পতিতা ও মাদক ব্যবসার সাথে জ’ড়িয়ে পড়েছে কটেজ জোনে।
এই কটেজ এর মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় অসাধু কর্মকর্তা ও দালালদের তত্ত্বাবধানে চলছে রমরমা দেহ ব্যবসা। পতিতাদেরকে মাসিক এবং দৈনিক ভাড়ার মাধ্যমে রুমে স্টক রেখে গণহারে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।
সুত্র জানায়, এসব কটেজে প্রতিদিনই রোহিঙ্গা, স্কুল, কলেজ ছাত্রীদেরও এনে দেহ ব্যবসায় সম্পৃক্ত করা হয়। রেজিস্ট্রার খাতায় বোর্ডারের নাম-ঠিকানা লিখার নিয়ম থাকলেও তা মানেনা কেউ। বেপরোয়া ভাড়া বানিজ্য চলে কটেজগুলোতে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যে আরো উঠে আসে অপরাধে সংশ্লিষ্ট অনেকের নাম। কলাতলীর পুরো কটেজ জোনে এদের নেতৃত্বে গড়ে উঠে একটি শক্তিশালী সি’ন্ডিকেট।
এই সিন্ডিকেট শুধুমাত্র পতিতা ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। মা’দকদ্রব্য, চোরাচালান, ইয়াবা সেবন নানা অপকর্ম তারা নিয়ন্ত্রণ করে। পর্যটক ছিনতাইয়ের সাথেও এরা জ’ড়িত। তাদের সাথে জ’ড়িত রয়েছে কিছু টোকাই শ্রেনীর লোকজনও। তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিচ্ছন্ন অনেক কটেজ ব্যবসায়ী।
স্থানীয় সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কটেজ জোনে মূলত দালাল জাহাঙ্গীর-রফিকের হাত ধরে অনেকেই পতিতা জগতে পা রেখেছে। সংসার ভাঙছে প্রবাসীদের। নষ্ট হচ্ছে উঠতি বয়সী যুবক-যুবতির জীবন। পতিাবৃত্তির কষাঘাতে অকালে ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী।
তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে পীড়াদায়ক তা হল, সব ধরনের অপরাধের সাথে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা। মা’দক ও পতিতার জন্য চিহ্নিত কটেজগুলোর সাথে থানা পুলিশের রয়েছে মাসিক চুক্তি।
প্রতিটি কটেজ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন পুলিশ। কোন কোন কটেজ থেকে ৫০ হাজার টাকাও আদায় করা হয়। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: শাহজাহান কবির জানান, কটেজ জোনে অপরাধের বিষয়ে মাঝে মধ্যে কিছু অভিযোগ আসে।
ইতিমধ্যে সেখানে অনেকবার অভিযান চালানো হয়েছে। ধরা পড়েছে অনেক পতিতা। সাজাও হয়েছে তাদের। শীঘ্রই অভিযুক্ত কটেজগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।