১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

অভিযোগ
প্রকাশিত জানুয়ারি ১০, ২০২০
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

হেলাল আহমদঃ ১০ জানুয়ারি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।১৯৭২ সালের এ দিনেই পাকিস্তানে দীর্ঘ কারাবাস শেষে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা ।বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন।এ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের

রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই তিনি দেশে ফিরে আসেন।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে তিনি সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্ববান জানান। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বিজয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি তরান্বিত করে।তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।স্বয়ং বঙ্গবন্ধু তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন
‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে।

বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এই দিনটি একটি অবিস্মরণীয় দিন।একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ ১০ মাস পশ্চিম পাকিস্তানে কারাবাস শেষে ১৯৭২ সালের এইদিনে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন।মহান এই নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা লাভ করে।এ কারণেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’’।বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর মুক্তিকামী বাঙালি জাতী স্বাধীনতা সংগ্রামেরর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।অপারেশন সার্চলাইট নামের এ অভিযানের শুরুতেই পাকহানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডিস্থ বাসা থেকে আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়।গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।তাঁর এই ঘোষণা তত্কালীন ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।এরপর গোটা বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।বাঙালি যখন প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলেছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন।কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সেলের পাশে তাঁর জন্য কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছিল।কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতা, মুক্তির প্রশ্নে ফাঁসির আসামি হয়েও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অবিচল, আপোষহীন।স্বাধীনতাকামী জনতা দীর্ঘ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতেও বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলে।বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।পরে পরাজিত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডন-দিল্লী হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি।বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধুকে তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আনা হয়।সেদিন বিমানবন্দর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য।লাখ লাখ মানুষ তেজোদীপ্ত ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে তাদের অবিসংবাদিত প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানায়।স্বাধীন প্রিয় বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু।দীর্ঘ ৯ মাস পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের গণহত্যার সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব’। কথা রেখেছেন জাতির পিতা।হিংস্র পাকহানাদাররাও যাঁর গায়ে আঁচড় দেয়ার সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন দেশে বাঙালি নামক একশ্রেণীর কুলাঙ্গার-বিশ্বাসঘাতকের হাতে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা রেখে গেছেন।দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র সে যুদ্ধে বহু ত্যাগ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর জাতি বিজয়ের লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।১০ জানুয়ারি বিজয়ীর বেশে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তার প্রিয় স্বদেশে ফিরে আসেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।বাঙালি জাতির মহান মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031