Sharing is caring!
অভিযোগ ডেস্ক : ঢাকা ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আয়েশেই আছেন ক্যাসিনো এবং অপকর্মের অভিযাগে আটক যুবলীগের প্রায় অর্ধশত নেতা। সেখানেও তাদের লোকজন রয়েছে।
নামে মাত্র কারাগার। তবে তারা নানা সুবিধা ভোগ করছেন। হাত বাড়ালেই বাইরের ভালো বা উন্নতমানের খাবার। দিনের বেলায় গোটা কারাগারের ভেতরে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারেন। তারা সকলেই একসঙ্গে দল বেঁধে থাকেন। কারাগারের ভেতরে তাদের কিছু বলার সাহস কারো নেই।
বছরের আলোচিত অভিযানের নাম হচ্ছে- ক্যাসিনো। ক্ষমতাসীন সরকারি দলের ভেতরে দুর্নীতি ও অপকর্ম রোধে দেড়মাসের অভিযানে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত ক্যাসিনো ও ক্লাবে আইন-শৃংখলা বাহিনী অভিযান চালায়। সেখান থেকে ১২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে যুবলীগের ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটসহ অর্ধশত নেতাকর্মী ও ক্লাব কর্মকর্তা এবং একাধিক কাউন্সিলর রয়েছেন।
উদ্ধার করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা, মাদক, অস্ত্র এবং বন্য পশুর চামড়া। বর্তমানে এরা সকলেই গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২২টি স্থানে ৩০টি অপারেশন চালায় র্যাব। এসব অভিযানে ৩২ নেতাকর্মীসহ অর্ধশত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। ২০৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। ২২টি অস্ত্র, টর্চার সামগ্রী, নগদ সাড়ে ৮ কোটি টাকা ও ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৮ কেজি স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়। পৌনে ২০০ কোটি টাকার বেশি এফডিআর ও চেক উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্তদের সিংহভাগ ব্যক্তি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন।
কারা সূত্র বলেছে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম (৭ দেহরক্ষীসহ), বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, সম্রাটের সহযোগী এমরানুল হক আরমান, জাকির হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, তারেকুজ্জামান রাজিব, ময়নুল হক মঞ্জু, মঞ্জুর গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন, ওয়ান্ডার্স ক্লাবের সাইফুল ইসলাম, তুহিন মুন্সি, নবীর হোসেন সিকদার, অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাকারী আক্তারুজ্জামান এবং রোকন মিয়া।
শুদ্ধি অভিযানে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ১২টি মামলার তদন্ত করছে র্যাব। এই মামলাগুলো অস্ত্র এবং মাদক আইনে দায়ের করা। পাঁচটি মামলায় এরইমধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে তারা হলেন, সম্রাট, আরমান, খালেদ, শামীম এবং রাজীব।
আত্মগোপনে যাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগের সাবেক নেতা কাজী আনিসুর রহমান, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু, যুগ্ম সম্পাদক রূপন ভূঁইয়াসহ আরো অনেকে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজার হালেই রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট। শুধু তিনি নন, তার সঙ্গে রয়েছেন ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত প্রায় হাফ ডজন নেতা।
তারা হলেন- খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, আরমান, জিকে শামীম ও লোকমান হোসেন। সবকিছু মিলে কারাগারের সুর্যমুখী সেলটি হয়ে উঠেছে ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের মিলন মেলা।
কারা সূত্র জানায়, ক্যাসিনোয় জড়িত যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত সব নেতা একই ভবনের থাকার সুবাদে আয়েশেই দিন যাচ্ছে তাদের। দিনভর তাস খেলে, গল্পবাজী আর আড্ডা মেরে সময় কাটাচ্ছেন। কারাগারে তাদের লোকজনেরও অভাব নেই। সেখানে রয়েছে খিলগাঁও, রমনা ও মতিঝিল এলাকার একাধিক অপরাধী, যাদের আগে থেকেই এ সকল গডফাদারদের সঙ্গে সখ্য ছিল।
সূত্রমতে, কারাবন্দি ক্যাসিনোর হোতাদের জন্য প্রতিদিনই সাক্ষাতের মাধ্যমে যাচ্ছে রাজধানীর হোটেলের সুস্বাদু খাবার। পাশাপাশি সিগারেট থেকে শুরু করে আরও কিছু তারা হাতের কাছে পাচ্ছেন।
মাসে একবার সাক্ষাতের নিয়ম থাকলেও টাকার বিনিময়ে কারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এদের সঙ্গে প্রতিদিনই কেউ না কেউ সাক্ষাৎ করছেন। সাক্ষাতের পাশাপাশি খাবার থেকে শুরু করে সব কিছু দিচ্ছেন সাক্ষাৎপ্রার্থীরা।
এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, জেল কোড মেনেই সকল বন্দির খাবার থেকে শুরু করে সব কিছুই করছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারাবিধির বাইরে কোনো কিছু হচ্ছে না। ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের হোতা বলেন আর অন্য বন্দি বলেন, ভিআইপি ছাড়া সব সাধারণ বন্দি আমাদের কাছে সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক মামলার একাধিক বন্দি এলে তাদের পৃথকভাবে সেলে রাখা হয়ে থাকে। কারো সঙ্গে কারো যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকে না। তিনি আরো বলেন, ক্যাসিনো সংক্রান্ত বন্দির সকল সেল এবং করিডোরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।