Sharing is caring!
রচনায় কবি ও কবিতায়-
কবি ডা.মিজানুর রহমান মাওলা
বাংলাদেশ বিজয়ের ইতিহাস বিশ্বের মানচিত্রে রক্তক্ষয়ী রণাঙ্গনের দুর্জয়ের বিরল ইতিহাস যা ঐতিহাসিক কারণ ঘটনা প্রবাহের কিছু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রয়াস:-
বাংলার ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস রক্তক্ষয়ী ত্যাগের ইতিহাস।এ বিজয় সংগ্রামী চেতনায় জাগ্রত প্রেরণায় রক্তে কেনা এ মাটি যার নাম ভাষায় অর্থবহ – বাংলাদেশ।
২০১৯ এ বাংলাদেশের উন্নয়নের জোয়ার এসেছে সোনার বাংলা রুপান্তরে নানা বাধা বিপত্তির রোলার কোস্টারে চড়ে। আধুনিক বাংলাদেশের রূপান্তরের জন্য প্রতিটি পদপদে হলো ডিজিটাল বাংলার অহংকার।
তার পরেও কতবার যে এর ছাঁচের পরিবর্তন ঘটেছে, তা গুণে শেষ করার মত নয়। কখনো বৈদেশিক শক্তি এসে আমার তোমার মুখ চেপে ধরে রেখেছে, কখনওবা হাতে পড়িয়েছে চকচকে শিকল। বিভিন্ন কারণ তন্মধ্যে পাঁচটি ঘটনা আক্ষরিক অর্থেই আমাদের মানচিত্রকে দিয়েছে পরিপূর্ণতা, আমাদের পতাকাকে দিয়েছে স্বকীয়তা, আমাদের দেশকে দিয়েছে সার্বভৌমত্বে গৌরব অর্জন কে সে তাঁরা
আসুন নিম্নে বিস্তার জেনে নেই।
ভাষা আন্দোলন কাল: ১৯৫২ ইং
৪৭’ সালে ব্রিটিশের কাছে থেকে ভারতবর্ষ অর্জন করে বহুল প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা, জন্ম হয় হিন্দুস্তান বা ভারত ও পাকিস্তানের। পাকিস্তান ছিলো দুই অংশে বিভক্ত- ভারতের একপাশে অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান ও অন্য পার্শ্বে পশ্চিম পাকিস্তান। ভারতবর্ষ বিভক্তের অনেক আগ থেকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এই ধোঁয়াশা জন্ম দেয় এক বিতর্কের, যেই বিতর্ক সর্বপ্রথম শুরু হয় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর হাত ধরে। তিনিই প্রথম মুসলিম লীগের দাপ্তরিক ভাষা উর্দু করার প্রস্তাব করলে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক এর বিরোধিতা করেন।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে এই বিতর্ক আরো জোরালো হয়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের মত দেশবরেণ্য ভাষাবিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করেন। তমদ্দুন মজলিস নামক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি সেই প্রতিবাদেরই অংশবিশেষ।
২১ শে মার্চ, ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক ভাষণে ঘোষণা করেন,
“উর্দু ভাষা কেবল উর্দুই হবেপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”
source: londoni
১৯৪৮-১৯৫২, সারাবছর ব্যাপীই চলমান থাকে বাংলার মানুষদের নানান সংগ্রাম, কারণ?
শুধু মায়ের ভাষায় কথা বলতে চাওয়া ! গড়ে ওঠে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ, পালিত হয় বাংলা ভাষা দাবী দিবস, চলে ব্যাপক গ্রেফতার, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ৮ দফা চুক্তিও সই করেন।
জিন্নাহর অনুকরণে ১৯৫২ সালে ঢাকার পল্টনে এক জনসভায় নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনও উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আখ্যা দেন।
৪ঠা ফেব্রুয়ারি থেকেই ঢাকায় ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়। ভাষার দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেয়া হয়। কারাবন্দি নেতা শেখ মুজিব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২১শে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি পালনে ছাত্র ও আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা কর্মীদের ডেকে পরামর্শ দেন। সরকারী এক ঘোষণায় ঐদিন ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
২১শে ফেব্রুয়ারির সকালে ১০জন করে বের করা মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে এগোলে পুলিশ ছাত্রজনতার উপর গুলিবর্ষণ করে। শহীদ হন সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউর ও রফিক।
source: alamy
১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং প্রাণের ভাষা বাংলা রূপ পায় আমাদের মুখের ভাষায়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
গণঅভ্যুত্থান কাল: ১৯৬৯ ইং
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি এই গণঅভ্যুত্থান। এখানেই বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেয় একতার এক পরিপূর্ণ দৃষ্টান্ত। বই পুস্তকে এটি পরিচিত উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামে।
source: risingbd
পূর্ব পাকিস্তানের সকল গণতান্ত্রিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকেই মাটি আঁকরে ধরে এই আন্দোলনে অংশ নেয়। নিহতের সংখ্যার তালিকাটা এখানেও এসে হাজির হয়, তালিকায় ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহার নাম।
এই অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ছিলো ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সামরিক শাসক আইয়ুব খান শেখ মুজিবকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দকেও।
প্রত্যাহার করে নেয়া হয় আগরতলা মামলা।
source: daily star
গণঅভ্যুত্থানের আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এই আন্দোলনের ফলে মুক্তি পাওয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তির পরপরই বাংলার জনগণের বন্ধু তথা বঙ্গবন্ধু নামের উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
গণঅভ্যুত্থানের প্রভাবের জের ধরেই পাক শাসক আইয়ুব খান বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালে গণতান্ত্রিক সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। ঊনসত্তর মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক চিন্তার আবির্ভাব ঘটায়। এর পরপরই বাংলাকে পাক বাহিনীর কাছ থেকে স্বাধীন করার প্রয়োজনীয়তাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাধারণ নির্বাচনে বাংলার বিজয়ের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে দেশের জনগণকে একত্র করারও একটি বিশেষ মহরা হয়ে এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। তাই বলা যায় ১৯৬৯ সালের এই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাসে ব্যাপক ঐতিহাসিক প্রভাব বিস্তার করেছিলো।