১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি, ইসির কর্মকর্তাদের চট্টগ্রাম-ভীতি

অভিযোগ
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৪, ২০১৯
রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি, ইসির কর্মকর্তাদের চট্টগ্রাম-ভীতি

অভিযোগ ডেস্ক : মাত্র ৩০ হাজার টাকা খরচে বাংলাদেশি হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংগ্রহ করতে পারতেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। দালালদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোহিঙ্গাদের ভোটারতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এনআইডি সরবরাহ করতেন। ক্ষেত্রবিশেষে টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াত ৫০ থেকে ৭০ হাজার। এনআইডি জালিয়াতি নিয়ে গঠিত ইসির তদন্ত কমিটি সূত্রে মিলেছে চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতি ইস্যুতে নিরাপরাধ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এজন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বদলি ঠেকাতে প্রতিদিনই ইসিতে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. আবদুল বাতেন বলেন, রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতি ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন খুবই সিরিয়াস। রোহিঙ্গাদের ভোটারতালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য আইটি অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের নেতৃত্বে ৭ সদস্যদের একটি এবং সরেজমিনে যাচাই-বাছাইকরণে আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। অবৈধভাবে ভোটারতালিকায় রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তির ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কমিশন।

তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালে ল্যাপটপ চুরি করে বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিকদের এনআইডি সরবরাহ করে আসছিল। এ ছাড়াও বৈআইনিভাবে এনআইডি সংশোধনের কাজেও তারা জড়িত ছিল। ফাঁদ ফেলে এই চক্রটিকে শনাক্ত করে এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনকে পুলিশে সোপর্দ করেছে ইসি। এমনকী অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পাশপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থাও নিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, গত আগস্ট মাসে লাকী আক্তার নামের এক রোহিঙ্গা নারীর ভুয়া এনআইডি ইসির সার্ভারে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে আরো ৫৪টি ভুয়া এনআইডি সনাক্ত করা হয়। এনআইডি জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন নামের একজনকে তার দুই সহযোগীসহ আটক ও একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। মামলার এজাহারে সত্যসুন্দর ও সাগরের নাম রয়েছে। দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা নিবন্ধন কর্মকর্তার অগোচরে এই অপকর্মটি করে। অভিযুক্তদের বেশিরভাগ আগেই চাকরিচ্যুত।

রোহিঙ্গারা ভোটারতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর নির্বাচন কমিশনের বিশেষ তদন্ত কমিটি যে তথ্য পেয়েছে, তাতে শুক্রবার ও শনিবার ভোটার করে নেয়ার সরঞ্জাম (মডেম ও সিগনেচার প্যাড) বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এই অপকর্মটি করতেন কর্মচারীরা। অথচ মডেম থাকার কথা নিবন্ধন কর্মকর্তার কাছে ও তার অফিসে।

ইসির সংশ্লিষ্টরা বলেন, এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় এ পর্যন্ত ইসির সাবেক ১৩ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইসির নিজস্ব কর্মচারী রয়েছে ৪ জন। ইসির পক্ষ থেকে ডবলমুরিং এবং কক্সসবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পৃথকভাবে দুটি মামলা দায়ের করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বেশিরভাগই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে।

চট্টগ্রামে যেতে চান না কর্মকর্তারা :
সহসাই কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এখন আর চট্টগ্রামে বদলি হতে চান না। কেননা ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলে দায়িত্ব পালনরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পর্কে তথ্য নেয়ার নামে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। জিজ্ঞাসাবাদে শত্রুতাবশত অপ্রয়োজনীয় নাম উল্লেখ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

উদাহরণ হিসেবে এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি আটক এক কর্মচারীকে অনিয়মের কারণে চাকুরিচ্যুত করেছিলেন এক কর্মকর্তা। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার কাজে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে চাকুরিচ্যুত কর্মচারীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জিজ্ঞাসাবাদে চাকুরিচ্যুতির প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম উল্লেখ করেন ওই কর্মচারী। এভাবেই জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম আসছে তাদের কাউকে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ইসির কর্মকর্তারা।

আরো দুটি কমিটি গঠন :
ইসির নির্দেশনা অনুসারে এনআইডি উইং এর কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে তদন্ত হয়। সংশ্লিষ্ট তদন্ত টিম কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিষয়াদি আমলে নিয়ে রোহিঙ্গা ভোটার অন্তর্ভুক্তির সার্বিক বিষয়াদি তদন্ত ও পর্যালোচনাপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন ও তদন্ত বিষয়ে সুপারিশমালা প্রদানের জন্য প্রশাসন ক্যাডার, বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, ইসি সচিবালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের সমন্বয়ে ৭ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও সরেজমিনে তদন্তপূর্বক মতামত দেয়ার জন্য ইসি থেকে ৮ সদস্যর একটি কারিগরি কমিটি করা হয়েছে। গত রোববার এই দুটি কমিটি করা হয়। যদিও গত ৩১ অক্টোবর এনআইডি ডিজির নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আরো একটি কমিটি করা হয়েছিল।

বিদেশি নাগরিকদের ব্যাপারে সতর্ক ইসি :
মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা নাগরিকরাই কেবল নয়, সব বিদেশিদের নিয়েই সতর্ক ইসি। সম্প্রতি ভারতের এনআরসি জটিলতায় দেশটির অনেক নাগরিক বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অনুপ্রবেশ করছে। এসব নিয়ে সজাগ রয়েছে কমিশন। ভারতের নাগরিকরা অতীতেও এদেশের ভোটারতালিকায় যুক্ত হওয়ার অপচেষ্টা করেছে। এছাড়া কেবল ভারত নয়, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ আফ্রিকান অনেক দেশের নাগরিকরাও বিভিন্ন সময় এ চেষ্টা করেছে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সংস্থা, কোম্পানিতে চাকরিরত রয়েছেন কয়েক লাখ বিদেশি। এছাড়া রয়েছেন অনেক ব্যবসায়ীও। এদের নিয়েও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ইসি।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031