১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সিইসি-সচিবের ওপর ক্ষুব্ধ চার কমিশনার!

অভিযোগ
প্রকাশিত নভেম্বর ২৫, ২০১৯
সিইসি-সচিবের ওপর ক্ষুব্ধ চার কমিশনার!

অভিযোগ ডেস্ক :: নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ইসির সিনিয়র সচিবের ওপর ক্ষুব্ধ বাকি চার নির্বাচন কমিশনার। তারা ক্ষোভের কথা জানিয়ে গতকাল রবিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে একটি ইউও নোট দিয়েছেন। এতে সম্প্রতি কমিশনের ৩৩৯ জন কর্মচারী নিয়োগ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও সচিবালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে চার কমিশনারকে অবহিত না করার অভিযোগ করেছেন কমিশনাররা।

ইউও নোটে তারা উল্লেখ করেছেন, সচিবালয় এককভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে; যা সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, নিয়োগ অনুযায়ী সবকিছু হয়েছে। নিয়োগে কোনো অনিয়ম হয়নি। ৯০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ইসি, পিএসসি, জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন। তিনি আরো বলেন, নিয়োগে কোনো অনিয়ম হলে কমিশন তদন্ত করে দেখতে পারে। কমিটির সুপারিশ কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সিইসির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০০৯-২০১০ সাল থেকে নিয়োগ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম এভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১২ থেকে ২০তম গ্রেডের ৩৩৯ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঐ পদের বিপরীতে ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন আবেদন করেন। এ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় ইসির ব্যয় হয় ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। জালিয়াতির দায়ে ভাইভায় ১৩৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়। যুগ্মসচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে ইসির জনবল শাখা এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এসব নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চারজন কমিশনার।

সংবিধান, আরপিও, ইসি সচিবালয় আইন ও বিধির আলোকে “নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ওপর কার্যাদি’র বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার প্রসঙ্গে” গতকাল ইউও দিয়েছেন চার নির্বাচন কমিশন। এতে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী যৌথভাবে স্বাক্ষর করেছেন। তারা এই সকল বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

ইউও নোটে চার কমিশনার উল্লেখ করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর সিইসির সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভার একপর্যায়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, নিয়োগের বিষয় ও এ সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত। বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সমর্থন দেন। ঐ সভায় সচিব আরো বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়াদি কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অন্যান্য বিষয়াদি সিইসির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

চার নির্বাচন কমিশনারের লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয় :(ক) নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গঠিত। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণে অর্পিত সকল দায়িত্ব পালন করবে এবং সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়ী থাকবেন।

(খ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য অনুমোদিত বাজেট নির্ধারিত খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় অনুমোদনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবেন; বরাদ্দকৃত অর্থ যে সকল খাতে ব্যয় হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত এবং কমিশন কর্তৃক অনুমোদন আবশ্যক।

(গ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ এর ধারা ৪সহ অন্যান্য ধারা বর্ণিত কমিশনের ওপর অর্পিত সকল কার্যাদিতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কমিশনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তদুপরি সচিবালয় এককভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তা গত ১৪ নভেম্বরের কমিশন সভায় সিনিয়র সচিব তুলেও ধরেছেন। যা সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

(ঘ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশনের সকল বিষয়ে সংবিধানসহ বিদ্যমান সকল আইন ও বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হবে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

লিখিত অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে—নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০১০ এর ৫(১) ধারায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর ন্যস্ত থাকবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে এবং একই আইনে ১৪(১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যাবতীয় দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়ী থাকবেন। আইনের ১৪(২) উপধারা মোতাবেক ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী, নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণে সচিবের কাছে দায়ী থাকবেন।’ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০১ এর ১৬ ধারায় বর্ণিত আছে, “নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য অনুমোদিত বাজেট নির্ধারিত খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় অনুমোদন ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবেন।

সচিবের বিরুদ্ধে চার কমিশনারের অভিযোগের বিষয়ে সিনিয়র সচিব আরো বলেন, ঘরোয়া আলোচনা পাবলিকলি আমার বলা ঠিক হবে না। উনারা ভালো বলতে পারবেন। তবে এইটুকু বলতে পারি যা হয়েছে তা আইন ও বিধি অনুযায়ী।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031