১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

আজ ১৪ই যিলহজ্জ, এই দিনেই রাসূলের আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছিলো

অভিযোগ
প্রকাশিত অক্টোবর ২৬, ২০১৯
আজ ১৪ই যিলহজ্জ, এই দিনেই রাসূলের আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছিলো

জামরুল ইসলাম রেজাঃ

নবী কারীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হাতের মুবারক আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছিলো আজকের এই দিনেই ১৪৪২ চন্দ্রবছর আগে। যখন চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয় তখন দ্বিখণ্ডিত হওয়া তো বহু দূর চাঁদ সম্পর্কে কারো কোন ধারণাই ছিলো না ঠিকমতো। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিলো এরূপ যে, তখনকার মক্কার কাফেররা হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নবুওয়াতকে অস্বীকার করে। তারা উনার কাছে নবুওয়াতের নিদর্শন চায়। তখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হাতের আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ কে দু’ টুকরো করে তাদের দেখিয়েছিলেন কিন্তু তাও অনেক বড় বড় জাহেল ঈমান আনেনি।

এই মুবারক বিষয়টি পবিত্র কুরআনুল কারীমেও উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, কেয়ামত আসন্ন এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোনো নিদর্শন দেখে তবে (তা থেকে তারা) মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাচরিত যাদু (বৈ কিছু নয়)। (সুরা কামার শরীফঃ আয়াত শরীফ ১-৩) চাঁদ দিখন্ডিত হওয়ার বিষয়টি সহীহ হাদীসেও রয়েছে। আল্লামা ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি এ সম্পর্কিত হাদীস শরীফকে মুতাওয়াতির বলেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/২৭৬)

নিম্নে কয়েকটি হাদীস শরীফ উদ্ধৃত করা হল।

০১) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমরা মিনায় নবী কারীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছিলাম। তিনি চন্দ্রকে দিখন্ডিত করলেন এবং এক খন্ড পাহাড়ের পশ্চাতে চলে গেল ও এক খন্ড পাহাড়ের উপরে রইল। তখন রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকো। (সহীহ বুখারী শরীফ ১/৫৪৬; সহীহ মুসলিম শরীফ ২/৩৭৩)

০২) হযরত আনাস ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, মক্কা শরীফ বাসীরা রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে (নবুওয়্যাতের) কোনো নিদর্শন দেখতে চাইল। তখন রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ তায়ালা উনার হুকুমে চন্দ্রকে দিখন্ডিত করে দেখিয়ে দিলেন। তারা (সাহাবায়ের কিরাম ও কাফেররা) দেখতে পেল যে, চাঁদের দুই খন্ড হেরা পাহাড়ের দুই পার্শ্বে চলে গিয়েছে।

সূত্রঃ সহীহ বুখারী শরীফ ১/৫৪৫; সহীহ মুসলিম শরীফ ২/৩৭৩; জামে তিরমিযী শরীফ ৩২৮৫; মুসনাদে আহমদ শরীফ ৩/১৬৫; দালাইলুন নুবুওয়াহ ২/২৬২-২৬৮; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৩৫৪, ৩৬১; ফাতহুল বারী ৭/২২১; আততাহরীর ওয়াত তানবীর ২৭/১৬৩; আদ্দুররুল মানসুর ৬/১৩২-১৩৪; তাফসীরে কুরতুবী ১৭/১২৫-১২৮; তাফসীরে মাযহারী ৯/১৩৫)

আমরা মুসলিম হিসেবে ইসলামকে বিশ্বাস করব কোরআন ও হাদিস অনুসারে। ইসলামের যে কোন কথা আজকের কথিত বিজ্ঞান সমর্থন করুক বা না করুক এতে আমাদের কিছু যায় আসে না। বিজ্ঞানের উপরে নির্ভর করে ইসলামে বিশ্বাস করাটা আসলে একটা প্রতারনা ও মূর্খতা ছাড়া কিছু না, এক ধরণের ভন্ডামী। নিজেকে একজন মুসলিম দাবী করে, এদিকে ওদিকে বিজ্ঞানে সমর্থিত হলে ইসলামের কথা বিশ্বাস করে এমন ভন্ডকে ইংরেজীতে hypocrite বলে যেটার আরবী সমার্থক শব্দ হল মুনাফেক। ইসলামের তথ্যমতে মুনাফেকের স্থান ৭ম জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে যেখানে কোন কাফের ও প্রবেশ করবেনা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সঠিক ঈমান অর্জন করার ক্ষমতা দিন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

এছাড়াও ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত মালাবার রাজ্যের (বর্তমান কেরালা অঞ্চল) তৎকালীন রাজা চক্রবর্তী ফারমাস (চেরামান পিরুমেল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) আকাশে চাঁদ দুই টুকরো হয়ে যাওয়ার ওই অলৌকিক ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখেছিলেন। যখন তিনি জানতে পারেন যে, আরব দেশে শেষ নবীর আবির্ভাব ঘটেছে এবং রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই চাঁদ কে দ্বিখণ্ডিত করেছেন, তখন তিনি মক্কায় গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

আজ থেকে ১৪৪১ চন্দ্রবছরেরও আগে ১৪ই জিলহজ্জ নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মোজেযার প্রকাশ হিসেবে উনারই পাক পবিত্র আঙ্গুল মুবারকের ইশারায় পূর্ণ চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল।

আবু জেহেল লানাতুল্লাহি আলাল কাজিবিনের নেতৃত্বে একদল মূর্তিপূজারী ও ইহুদি জানায় যে, রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল তা তারা মেনে নেবে, যদি তিনি চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখাতে পারেন। তখন রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে মোনাজাত করে চাঁদের দিকে উনার মুবারক পবিত্র আঙ্গুলের ইশারা করলে ওই অলৌকিক ঘটনাটি ঘটে।

ওই আরব মুশরিকরা এই মোজেজা অস্বীকার করে একে যাদু বলে অভিহিত করে। কিন্তু উপস্থিত ইহুদিরা চাঁদ দুই ভাগ হওয়ার ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কারণ, ওই ইহুদিরা তাওরাতে পড়েছিল যে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার উত্তরসূরী হযরত ইউশা আলাইহিস সালাম উনার জন্য মহান আল্লাহ পাক চাঁদ ও সূর্যকে স্থির করে রেখেছিলেন।

ভারতের ইতিহাস গ্রন্থ ‘তারিখ-ই-ফেরেশতা’য় ওই ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে। চেরামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নামে ভারতের কেরালা রাজ্যে একটি মসজিদও রয়েছে।

ভারতীয় রাজা যে ওই ঘটনা দেখেছিলেন, তার লিখিত বিবরণের একটি প্রাচীন দলিল বর্তমানে লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসের লাইব্রেরিতেও সংরক্ষিত রয়েছে। ওই দলিলে ভারতীয় সেই রাজার ভ্রমণের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। ওই রাজা ভারতে ফেরার পথে ইয়েমেনে মারা যান।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031