১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বরিশালে ছাত্রের হাতে শিক্ষক লানচিত

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০
বরিশালে ছাত্রের হাতে শিক্ষক লানচিত

 

মোঃ সিরাজুল হক রাজু,স্টাফ রিপোর্টারঃ-

 

সমাজে ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ অতুলনীয়। মা-বাবার মতোই শিক্ষক। শিক্ষা জাতির মেরুদ- আর শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকদের শ্রদ্ধা, সম্মান করা সবার নৈতিক দায়িত্ব।

 

আমরা কি সে দায়িত্ব পালন করতে পারছি? ছাত্র বেয়াদবি করলে তাকে কান ধরে ওঠ-বস করাবে শিক্ষক, এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-বস করতে বাধ্য করবে ছাত্র, এমন ঘটনা বড়ই কষ্টের।

 

বরিশাল নগরীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক এক শিক্ষককে নিয়ে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনাই ঘটালো এক ছাত্র। এ ঘটনার ভিডিও এরইমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে সচেতন সমাজ ঘৃণায় চরম ধিক্কার জানিয়েছে।

 

ভিডিওতে দেখা যায়, জমজম ইনস্টিটিউট নগরীর রূপাতলী শাখার সাবেক এক শিক্ষককে কান ধরে-ওঠ-বস করানো হচ্ছে। ভিডিওতে অন্য কাউকে দেখা না গেলেও কয়েকজনের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।

 

কোনো ছাত্রীকে বেশি নম্বর দেয়ার প্রলোভনে অনৈতিক প্রস্তাব কখনও দেবেন না বলে শিক্ষককে শপথ করায় ওসব ব্যক্তি। ভুক্তভোগী শিক্ষকের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের আয়লা গ্রামে।

 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক এ বিষয়ে শিক্ষক মিজানুর রহমান সজল বলেন, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জমজম ইনস্টিটিউটের নগরীর রূপাতলী শাখায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সসহ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সম্পর্কিত নানা কোর্স ইনস্টিটিউটে পড়ানো হয়।

 

আমি ম্যাটস বিভাগের শিক্ষক ছিলাম। ২০১৮ সালে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে দেই। তবে করোনাকালে মার্চ মাসে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অনলাইনে ৮-১০টি ক্লাস নিয়েছিলাম।

 

তিনি বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এর মধ্যে মো. ইমন ও তার স্ত্রী মনিরা ছিল। তারা ক্লাস ফাঁকি ও লেখাপড়ায় অমনোযোগী ছিল। তাদের লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে বলা হয়।

 

কিন্তু তারা কর্ণপাত না করে উল্টো পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাইয়ে দিতে নানা সময় তাদের বহিরাগত বন্ধুদের দিয়ে চাপ দিয়ে আসছিল। পাশাপাশি ইমন আমাকে কখনও সালাম দিতো না।

 

এ নিয়ে ইনস্টিটিউটের কয়েকজন ছাত্র ইমনকে ভর্ৎসনা করেছিল। তবে সালাম না দেয়া নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না। তারপরও ইমন আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।

 

এসব কারণে ২৬ আগস্ট হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ইমন ও তার ৬-৭ জন বন্ধু আমার পথরোধ করে। এরপর তারা আমার মুঠোফোন ও মোটরসাকেলের চাবি নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে তারা জোর করে অক্সফোর্ড মিশন রোড এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর আমাকে সেখান থেকে গোরস্থান রোডে নিয়ে মারধর করে তারা।

 

এ সময় ইমনের সঙ্গে ৬-৭ জন যুবক ছিল। একজনের হাতে লাঠি ছিল। তাদের কিল-ঘুষিতে আমার নাক ফেটে যায়। তাদের ভয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। কি করব বা তাদের হাত থেকে কীভাবে রক্ষা পাব কিছুই মাথায় আসছিল না তখন।

 

মারধরের একপর্যায়ে ইমন আমাকে কান ধরে ওঠ-বস করায়। এরপর ইমন আমাকে কিছু কথা বলতে বাধ্য করে। সেগুলো একজন মুঠোফোনে ধারণ করে। তারা যেভাবে যা বলতে বলেছে, আমিও তাদের হাত থেকে বাঁচতে তাই বলেছি।

 

বিষয়টি অনেক কষ্টদায়ক ছিল। ছাত্রের হাতে এভাবে মারধরের শিকার হতে হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমার দুর্ভাগ্য। যে অবস্থার মধ্য থেকে আমাকে যেতে হয়েছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30